বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, বিএনপি সত্যিকার অর্থে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক দল। কোনো কিছুর বিনিময়ে এই দল জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেবে না। এ কারণে সরকার বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করতে চায় না।
আজ শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার রোহিঙ্গা সংকট যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। তারা এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যও তৈরি করতে পারেনি। এটা সরকারের ব্যর্থতা।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য গণহত্যা চালিয়ে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। তিনি রোহিঙ্গাদের মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সসম্মানে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এর আগেও রোহিঙ্গারা বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দুবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান এবং ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়া তাদের আশ্রয় দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার রোহিঙ্গা নির্যাতনকে এখনো গণহত্যা বলছে না। এতে হয়তো মিয়ানমারকে যেসব দেশ সমর্থন দিচ্ছে তাদের বিরাগভাজন হতে হবে। এ কারণে সরকার ভয় পায়। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের সঙ্গে ঐক্য করে সংকট মোকাবিলায় সক্ষম হবে।
জনগণ থেকে সরকার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, চালের দাম বেড়েই চলেছে, এদিকে কোনো পদক্ষেপ নেই। উন্নয়নের নামে মেগা প্রজেক্টের (বৃহৎ প্রকল্প) মাধ্যমে মেগা লুট চলছে। পদ্মা সেতুর নকশায় দুর্নীতির কারণে এই সেতু নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বড় সমস্যা নয়। সমস্যা অন্য জায়গায়। সেটি হলো আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা। ২০ শতকে বড় বড় বিশ্ব শক্তিগুলোর শক্তি পরীক্ষা হয়েছে আটলান্টিক ও ভূমধ্যসাগরে। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বড় শক্তিগুলোর শক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্র হবে ভারত মহাসাগর ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত, চীন ও রাশিয়ার নীরবতার বিষয়ে এমাজউদ্দীন বলেন, ভারতকে বাংলাদেশের দেওয়ার আর কিছু বাকি নেই, চীনেরও অনেক বড় বড় বিনিয়োগ আসছে দেশে, রাশিয়াও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এখন যখন বাংলাদেশের প্রয়োজন তারা কেউ রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে না।
বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করে এমাজউদ্দীন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এ ধরনের কথা বলা উচিত হয়নি।
জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুব উল্লাহ, কাজী জাফরের বড় মেয়ে কাজী জয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এ ধরনের কথা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিএনপি বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল, সবচেয়ে বৃহৎ দল। এ দলকে বিদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখে সন্ত্রাসী বলা, জঙ্গি বলা—এটার নিন্দা করার ভাষা আমাদের নেই। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post