ছোটকাল থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজ হাতে লিখবেন পুরো কোরআন শরীফ। সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পরই সে স্বপ্ন পূরণ করলেন বাষট্টি বছর বয়সী মুহাম্মদ আবদুল মকসুদ মুহাম্মদ। নিজ হাতে লিখে ফেললেন পুরো কোরআন শরীফ।
বিশ্বখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ আলেমগণ তার লেখা পুরো কোরআনের রিভিউ করেছেন। তারা কোনো ত্রুটি খুঁজে পাননি।
মিসরের উঁচু অঞ্চলীয় বিভাগে মানফালুত শহরের একটি মক্তবে কোরআনের হাফেজ হন। মক্তবের শিক্ষক রোজ ছাত্রদেরকে প্রতিদিনের মুখস্ত করা অংশ স্লেটে লিখতে বলতেন। কোরআন শরিফের মান, নকশা ও লিখনপদ্ধতির হুবহু অনুকরণে লেখার তাগিদ দিতেন। এতে তিনি মুগ্ধ হন। হৃদয়ে অঙ্কিত হয়ে যায় এ পদ্ধতি। সিদ্ধান্ত নেন হিফজ শেষ করে এভাবে পুরো কোরআন শরীফ লিখবেন নিজ হাতে।
সৌদি আরবভিত্তিক জনপ্রিয় গণমাধ্যম আল আরাবিয়ার আরবি ওয়েবসাইটকে আবদুল মকসুদ বলেন, মানফালুত শহরে তিনি মানি চেঞ্জার হিসেবে কাজ করতেন। অবসর গ্রহণের কয়েক মাস আগে সিদ্ধান্ত নেন পবিত্র কোরআন লেখার আজীবন লালিত স্বপ্ন এবার বাস্তবায়ন করবেন। মুখস্ত যাতে ভুলে না যান সে জন্য তিনি রোজ সময় বেঁধে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তারপর আড়াই বছরের নিমগ্ন সাধনায় জীবনের সবচেয়ে অমূল্য স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হন।
দৈনিক এশার নামাজের পর তিনি কোরআন লিখতে বসতেন। টানা এক থেকে দেড় ঘন্টা লিখতেন। সাধারণ কলম এবং মিসরীয় বাজারে সহজলভ্য উপকরণ দিয়েই লিখতেন। দুই-তিন পৃষ্ঠা লিখতেন। যখন অবসাদ লাগত, অনুলিপি করা পৃষ্ঠাগুলো ভাঁজ করে রেখে দিতেন। মার্জিনের নকশা হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন সবুজ কালির কলম। আয়াত নাম্বার লিখেছেন কালো কালিতে। লিখেছেন আরবি হস্তলিপির উসমানি রীতিতে। তারপর পূর্ণ তিন খণ্ডে একত্রিত করেছেন লিখিত পৃষ্ঠাগুলো।
আবদুল মকসুদ জানিয়েছেন, লেখার সময় তিনি বিরাট সৌভাগ্য অনুভব করতেন। অনুভব করতেন তার ওপর শান্তি, প্রশান্তি ও মানসিক সুখ অবতীর্ণ হচ্ছে। লেখার সময়গুলোই তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ও সৌভাগ্যমণ্ডিত মুহূর্ত বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, কোরআনের বদৌলতে আল্লাহ সমসময় তার পাশে ছিলেন। সর্বাবস্থায় তিনি সহায় হয়েছেন। সে জন্যই জীবনের বিবিধ রুক্ষ্মতা আর প্রয়োজনের সীমাহীনতা ও স্বল্প বেতন সত্ত্বেও সব সন্তানকে মানুষ করতে পেরেছেন। সবাই কোরআনের হাফেজ হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পেরেছে। আল্লাহর কাছে তিনি এমন কিছু প্রার্থনা করেননি যা তাকে আল্লাহ দেননি।কোরআনের বরকত তিনি সবখানেই অনুভব করেছেন।
তিনি বলেন, কোরআন লেখার বিনিময়ে তিনি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টিই কামনা করেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য একটি পবিত্র স্মৃতি ও গর্বযোগ্য উত্তরাধিকার রেখে যাচ্ছেন।
সূত্র: যুগান্তর