সিকিম সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে চীন ও ভারতীয় সেনারা। পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে সেদেশের মিডিয়া জানিয়েছে যে, সীমান্ত অঞ্চলে ‘নন-কমবেটিভ’ অবস্থায় আরো বেশি সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুন জেটলি দাবি করেছেন যে ২০১৭ সালের ভারত আর ১৯৬২ সালের ভারত এক নয়। এর আগেই অবশ্য সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছেন যে তারা আড়াই ফ্রন্ট, তথা চীন, পাকিস্তান ও অভ্যন্তরিণ নিরাপত্তা বিধানে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
চীন-সিকিম সীমান্ত নিয়ে ভারতীয় সৈন্যরা চীনের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে। এই সীমান্ত নির্ধারিত এবং তা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অব এ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল)’র অংশ নয়। ভারতীয়রা একেক বার একেক কথা বলছে। প্রথমে তারা বলেন, ‘চীনারা ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে।’ এরপর বলে, ‘আমাদের ভূখণ্ডে বহিরাক্রমণের কোন ঘটনা ঘটেনি।’ এরপর ভারত নতুন অযুহাত হাজির করে যে তারা ভুটানকে ভূখণ্ডের নিরাপত্তার ব্যাপারে সাহায্য করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে ভারত এক রকম নির্লজ্জ আচরণ করছে।
চীনের ডোংলং এলাকাটিকে একটি বিতর্কিত ভূখণ্ডে পরিণত করা নয়াদিল্লি’র আসল উদ্দেশ্য এবং সেখানে চীন যে সড়ক নির্মাণ করছে তাতে বাধা দেয়া তাদের লক্ষ্য। স্নায়ুযুদ্ধকালীন মানসিকতা থেকে ভারত ভাবছে যে শিলিগুড়ি করিডোর আটকে দিতে চীন এই সড়ক নির্মাণ করছে। দেশের সংঘাতপূর্ণ উত্তরপূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণের জন্য এই করিডোর ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ঐতিহাসিক চুক্তির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার ঝুঁকি নিচ্ছে এবং এর পরিণতির দিকে চীনকে ঠেলে দিচ্ছে।
আয়নায় নিজের চেহারা দেখা উচিত ভারতের। সে নিজেই যে ক্ষুদ্র প্রতিবেশি ভুটানের সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে এবং তাদেরকে দায় কাধে নিতে বাধ্য করেছে তা অস্বীকার করতে পারবে না। ভারত বহুদিন ধরে ভুটানকে নিজের সামন্ত রাজ্য হিসেবে ভেবে আসছে। আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ ধরনের দৃশ্য বিরল। ভারত যেভাবে আরেক দেশের সীমান্ত লঙ্ঘন করে ঢুকে পড়ছে তা আন্তর্জাতিক আইন অনুমোদন করে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর নিন্দা জানাতে হবে। পাশাপাশি, দেশটি ভুটানকে যেভাবে দমিয়ে রাখছে তারও নিন্দা জানাতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় মিডিয়াগুলো বলছে যে ভুটানকে পরিত্যাগ করা ভারতের চলবে না। ভারত এভাবে একবিংশ শতাব্দির সভ্যতাকে অবমাননা করছে।
ভারতীয় উষ্কানিতে চীনের জনগণ ক্ষুব্ধ। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি চীনা ভূখণ্ড থেকে ভারতীয় সেনাদের বিতাড়িত করার মতো যথেষ্ঠ শক্তিশালী বলে আমরা মনে করি।
দোংলং এলাকা থেকে ভারতীয় সেনাদের হটে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সীমান্ত পরিস্থিতির অবসান ঘটবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ভারতীয় সেনারা সম্মানের সঙ্গে নিজেদের ভূখণ্ডে ফিরে যেতে পারে। তা নাহলে চীনের সৈন্যরা তাদের বিতাড়িত করবে।
আড়াই ফ্রন্টে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকা নয়াদিল্লি যদি ডোংলং এলাকায় সামরিক শক্তি ব্যবহার করবে বলে ভেবে থাকে তাহলে আমরা ভারতকে বলবো যে চীনও তার সামরিক শক্তির দিকে তাকাবে। ২০১৭ সালের ভারত ১৯৬২ সালের ভারত নয় — জেটলি ঠিকই বলেছেন। কারণ, পরিস্থিতি সামরিক সংঘাতে দিকে গড়ালে ১৯৬২ সালের চেয়েও করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে ভারতকে।
অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় চীন। তাই ভারতের সঙ্গে কোন বিবাদে জড়িয়ে পড়তে চায় না। কিন্তু নয়াদিল্লি যদি কোন হাস্যকর দাবি তুলে বেইজিংয়ের কাছ থেকে তা আদায় করা যাবে মনে করে তাহলে তা হবে এক শিশুসুলভ চিন্তা।
তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা না নিয়ে চীন এখনো বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করছে। বহু দশক ধরে এই অনুশীলন করে আসছে তারা। সীমান্ত এলাকায় কোন অনাকাংক্ষিত ঘটনাও তারা দেখতে চায় না। কিন্তু, ন্যায়সঙ্গত ও ন্যায্য পথেই এই শান্তিপূর্ণ সমাধান আসতে হবে। আমরা আশা করবো এই অসংযত আচরণে বিপদের সম্মুখিন হওয়ার চেয়ে দেশের মৌলিক স্বার্থগুলো অর্জনের ব্যাপারে অধিক মনযোগি হবে ভারত এবং বিলম্ব ছাড়াই সৈন্যদের সরিয়ে নেবে।
আমাদেরকে পরিস্থিতি সামাল দিতে কূটনৈতিক ও সামরিক কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ ক্ষমতা দিতে হবে। এ ব্যাপারে দৃঢ়-ঐক্য বজায় রাখতে আমরা চীনের জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই। জনগণের ঐক্য যত মজবুত হবে, ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই ও আমাদের স্বার্থ সুরক্ষায় আমাদের পেশাদারদের জন্য ততবেশি অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হবে।
এবার নয়াদিল্লিকে একটি উচিত শিক্ষা দিতে হবে আমাদের।
সূত্র: গ্লোবাল টাইমস এর সম্পাদকীয়
অনুবাদ: সাউথ এশিয়ান মনিটর
Discussion about this post