মুসলিম সভ্যতার ক্রম বিকাশে মুসলিম মনীষীদের অবদান অবিস্মরণীয়। যুগ যুগ ধরে গবেষণা ও সৃষ্টিশীল কাজে তাদের একাগ্রতা প্রমাণিত।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব ধ্যান ধারণা সভ্যতার বিকাশকে করেছে আরও গতিশীল। রসায়ন, পদার্থ, জীববিজ্ঞান, কৃষি, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস সর্বত্র ছিল তাদের অগ্রণী পদচারণা। বহু মুসলিম বিজ্ঞানী দিগন্ত উন্মোচনকারী আবিষ্কার করে গোটা বিশ্বের চেহারাই বদলে দিয়েছেন। সেসব আবিষ্কার ও গবেষণার আধুনিকরণ ঘটেছে, তার সুফল ভোগ করছে আজকের বিশ্ববাসী। দুনিয়া কাঁপানো মুসলিম আবিষ্কারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনকে নিয়ে আজকের রকমারি—
জাবির ইবনে হাইয়ান
মুসলিম বিজ্ঞানী জাবির ইবনে হাইয়ান আল-আজদি আস সুফি আল-ওমাবি। আরবের দক্ষিণাংশের বাসিন্দা আজদি গোত্রের হাইয়ান ছিলেন তার পিতা। চিকিৎসক পিতার সন্তান হলেও সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে উমাইয়া খলিফা তার পিতাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে বাল্যকালে তিনি চরম দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হন। শৈশবে কুফায় বসবাস করলেও পিতার মৃত্যুর পর তিনি দক্ষিণ আরবে স্বগোত্রে ফিরে আসেন। কুফায় বসবাসের সময় তিনি রসায়ন শাস্ত্র গবেষণায় বিশেষ মনোযোগী হন। ওই পরিপ্রেক্ষিতে কুফায় একটি রসায়ন গবেষণাগারও প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলিম ঐতিহাসিকরা ওই গবেষণাগারকে পৃথিবীর প্রথম রসায়নাগার বলে অভিহিত করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই প্রথম বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে রসায়নের প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলো চর্চা করার উপায় উদ্ভাবন করেন। রসায়ন শাস্ত্রের পাশাপাশি তিনি চিকিৎসা, খনিজ পদার্থ বিশেষত পাথর, দর্শন, যুদ্ধবিদ্যা জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে অবদান রাখেন। তিনি প্রায় ২ হাজার বই রচনা করেন। এর মধ্যে চিকিৎসা বিষয়ে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৫০০।
আল বিরুনি
পারস্যের মুসলিম মনীষী আবু রায়হান আল-বিরুনি। তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন মধ্য এশিয়ায়। ২০ বছর বয়স তিনি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ শুরু করেন। ৩ বছর ধরে তিনি গোটা পারস্য চষে বেড়ান এবং বিভিন্ন পণ্ডিতের অধীনে পড়ালেখা করে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন। ৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি জুরজান (বর্তমানে ‘গুরগান’, উত্তর ইরানের একটি শহর) এ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। জীবনের পরবর্তী ১০ বছর তিনি উত্তর ইরানের এই ছোট্ট শহরেই বসবাস করেন, নিজের গবেষণা চালিয়ে যান, বই লিখেন, এবং জ্ঞানার্জনে রত থাকেন। আল-বিরুনি ভূবিদ্যার একজন পথিকৃৎ। তিনি শতাধিক বিভিন্ন ধরনের ধাতু এবং রত্নপাথর সংগ্রহ করে সেগুলো পরীক্ষা করেন। একাদশ শতাব্দীতে আল-বিরুনি তার বর্ণময় কর্ম এবং গবেষণা জীবন চালিয়ে যান এবং বিভিন্ন বিষয়ের গবেষণায় নতুন নতুন ও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রদান করেন— কীভাবে পৃথিবীর এর কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান।
স্থিতিবিদ্যা এবং গতিবিদ্যাকে একীভূত করে বলবিদ্যা নামক গবেষণার নতুন ক্ষেত্রের প্রবর্তন।
ইবনে সিনা
৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে বোখারা শহরে জন্মগ্রহণ করেন বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও দার্শনিক আবু আলি সিনা। বোখারা শহরটি সে সময় ছিল ইরানের অন্তর্ভুক্ত। ইবনে সিনা তার দর্শন চর্চা করেছেন, বিজ্ঞান চর্চা করেছেন, জোতির্বিজ্ঞান থেকে শুরু করে যুক্তিবিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান, অঙ্ক ইত্যাদি সকল জ্ঞান চর্চা করেছেন। তিনি মাত্র ষোলো বছর বয়সে সমকালীন জ্ঞানী গুণী চিকিৎসক এবং মনীষীদের পড়িয়েছেন। ফলে সহজেই বোঝা যায় তিনি ছিলেন সে সময়কার সবচেয়ে বড় চিকিৎসক। কথিত আছে, ইবনে সিনা যখন ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়তেন তখন অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো তার মানসপটে স্বপ্নের মতো ভাসত। তার জ্ঞানের দরজা খুলে যেত। ঘুম থেকে উঠে তিনি সমস্যার সমাধান করে ফেলতেন! একজন বিখ্যাত চিকিৎসক হিসেবে সর্বত্র তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি আল মুজমুয়া নামে একটি বিশ্ব কোষ রচনা করেন। এর মধ্যে গণিত ছাড়া সকল বিষয় লিপিবদ্ধ করেন। ইবনে সিনা পদার্থ বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, জ্যামিতি, গণিত, চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে প্রায় শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি তার সময়ে পৃথিবীর সেরা চিকিৎসক।
ওমর খৈয়াম
অনেক ইতিহাসবিদের মতে সুলতান মাহমুদের মৃত্যুর কিছু আগে ওমর খৈয়াম জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ওমর খৈয়ামের শৈশবের কিছু সময় কেটেছে অধুনা আফগানিস্তানের বালক্ শহরে। সেখানে তিনি খোরাসানের অন্যতম সেরা শিক্ষক হিসেবে বিবেচিত ইমাম মোয়াফে্ফক নিশাপুরির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দিনের বেলায় জ্যামিতি ও বীজগণিত পড়ানো, সন্ধ্যায় মালিক-শাহ-এর দরবারে পরামর্শ প্রদান এবং রাতে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চ্চার পাশাপাশি জালালি বর্ষপঞ্জি সংশোধন সবটাতে তার নিষ্ঠার কোনো কমতি ছিল না। জীবদ্দশায় ওমরের খ্যাতি ছিল গণিতবিদ হিসাবে। তিনি প্রথম উপবৃত্ত ও বৃত্তের ছেদকের সাহায্যে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করেন। ওমরের আর একটি বড় অবদান হলো ইউক্লিডের সমান্তরাল স্বীকার্যের সমালোচনা যা পরবর্তী সময়ে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সূচনা করে। ১০৭০ খ্রিস্টাব্দে তার পুস্তক মাকালাত ফি আল জার্ব আল মুকাবিলা প্রকাশিত হয়। এই পুস্তকে তিনি ঘাত হিসাবে সমীকরণের শ্রেণিকরণ করেন এবং দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধানের নিয়মাবলি লিপিবদ্ধ করেন। ওমর খৈয়াম জ্যোতির্বিদ হিসেবেও সমধিক পরিচিত ছিলেন।
আল ফারাবি
মুসলিম বিজ্ঞানী ও দার্শনিক আল ফারাবির আসল নাম আবুনাসের মোহাম্মদ ইবনে ফারাখ আলফারাবি। আল ফারাবির পিতা ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত এবং সেনাবাহিনীর একজন উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা। তার পূর্ব পুরুষগণ ছিলেন পারস্যের অধিবাসী। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও রাজনৈতিক কারণে তার পূর্ব পুরুষগণ পারস্য ত্যাগ করে তুর্কিস্থানে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় ফারাবায়। সেখানে কয়েক বছর শিক্ষালাভের পর শিক্ষার উদ্দেশ্যে চলে যান বোখারায়। এরপর উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তিনি গমন করেন বাগদাদে। সেখানে তিনি সুদীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর অধ্যায়ন ও গবেষণা করেন। জ্ঞানের অন্বেষণে তিনি ছুটে গিয়েছেন দামেস্কে, মিসরে এবং দেশ-বিদেশের আরও বহুস্থানে। পদার্থ বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র, গণিতশাস্ত্র, চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রভৃতিতে তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে বিজ্ঞান ও দর্শনে তার অবদান ছিল সর্বাধিক। পদার্থ বিজ্ঞানে তিনিই “শূন্যতার” অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন। দার্শনিক হিসেবে ছিলেন নিয় প্লেটনিষ্টদের পর্যায়ে বিবেচিত।
আল বাত্তানি
৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে মেসোপটেমিয়ার অন্তর্গত বাত্তান নামকস্থানে আল বাত্তানি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন অঙ্কশাস্ত্রবিদ এবং একজন জ্যোতির্বিদ। তিনিই সর্বপ্রথম নির্ভুল পরিমাপ করে দেখিয়েছিলেন যে এক সৌর বছরে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে হয়। তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে সূর্যের আপাত ব্যাসার্ধ বাড়ে ও কমে। সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ সম্বন্ধেও তার বক্তব্য ছিল সুস্পষ্ট। আল বাত্তানি তার নিজস্ব উদ্ভাবিত যন্ত্র দিয়ে প্রমাণ করে দিলেন যে সূর্য তার নিজস্ব কক্ষপথে গতিশীল। এই মহান মনীষী ৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ৭২ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। আল-বাত্তানি ছিলেন একজন মশহুর জ্যোতির্বিদ এবং গণিতজ্ঞ। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার জন্য নিজস্ব মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বহু বছর ধরে জ্যোতির্বিদ্যায় প্রচলিত ভুলগুলো সংশোধন করে এই শাখার অনেক সংস্কার ও উন্নতিসাধন করেন। পাশ্চাত্য ইতিহাসবিদরা তাকে উল্লেখ করেছেন ‘আল বাতেজনিয়াজ’, ‘আল বাতেজনি’, ‘আল বাতেনিয়াজ’ ইত্যাদি নামে। তাই তার পরিচয় অনেকটাই ইতিহাসে হারিয়ে যেতে বসেছে।
আল বলখি
মুসলিম জোতির্বিদদের অগ্রগতি ছিল প্রশ্নাতীত। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই মুসলিম জোতির্বিদদের সাফল্যের খোঁজ মিলেছিল। তাদেরই একজন জাফর ইবনে মুহম্মদ আবু মাশার আল বলখিভ তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত পার্সিয়ান জ্যোতির্বিদ, দার্শনিক, গণিতবিদ। তিনি আল ফালাকি, আবুল মাসার, ইবনে বলখি নামেও পরিচিত ছিলেন। তার কাজ এখনো প্রশংসনীয়।
আল কিন্দি
আবু ইউসুফ ইয়াকুব ইবনে ইসহাক আল কিন্দি ছিলেন কোরআন শরিফ, হাদিস শরিফ, ফিকাহশাস্ত্র, ইতিহাস, দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, রাজনীতি, গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা প্রভৃতি নানা বিষয়ে বিশারদ। তিনি ছিলেন গ্রিক, হিব্রু, ইরানি, সিরিয়াক এমনকি আরবি ভাষাতেও ব্যুত্পত্তিসম্পন্ন। তিনি নানা বিষয়ে ২৬৫ খানা গ্রন্থ রচনা করেন। তার বইগুলো এখনো বহুল পঠিত।
আল সাইগ
প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ, যুক্তিবিদ, দার্শনিক, পদার্থবিদ, মনোবিজ্ঞানী, কবি এবং বিজ্ঞানী আবু বকর মুহম্মদ ইবনে ইয়াহিয়া ইবনে আল সাইগ। তবে তিনি ইবনে বাজ্জাহ। নামে বেশি পরিচিত। তার চিকিৎসা বিজ্ঞানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। উদ্ভিদবিদ হিসেবেও তার সুনাম ছিল। আল সাইগের কবিতাগুলোও প্রশংসাযোগ্য। তার বিখ্যাত বই ‘কিতাব আল নবত’।
বানু মুসা
বানু মুসাকে বলা হয় জোতির্বিদদের মধ্যে বিস্ময়কর একজন। কারণ আর কিছুই তার সময়ে তিনি যে উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন সেটা এককথায় অবিশ্বাস্য। নবম শতকে বাগদাদের তিন মনীষীদের একজন ছিলেন। এই তিনজনকে একত্রে বলা হতো মেশিনারি জগতের বিস্ময়। তার পিরমাপক যন্ত্রের উৎকর্ষ সাধন করেছিল। ভিত্তি স্থাপনেও আধুনিকায়ন করেন তারা।
ইবনুন নাফিস
চিকিৎসা বিজ্ঞান ও আইনশাস্ত্রে তার অবদান অবিস্মরণীয়। ইবনুন নাফিস মানবদেহে রক্তসঞ্চালন পদ্ধতি, ফুসফুসের সঠিক গঠন পদ্ধতি, শ্বাসনালি, হৃৎপিণ্ড, শরীরে শিরা উপশিরায় বায়ু ও রক্তের প্রবাহ ইত্যাদি সম্পর্কে বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারকে অবহিত করেন। তিনি মানবদেহে রক্ত চলাচল সম্পর্কে গ্যালেনের মতবাদের ভুল ধরিয়ে ছিলেন তিনি এবং এর সম্বন্ধে নিজের মতবাদ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন।
আল-বেতরুগি
নুর আদ-দীন ইবনে ইসহাক আল-বেতরুগি। তিনি ইসলামী স্বর্ণযুগে মরক্কোতে জন্মগ্রহণ করেন। তার ব্যক্তিগত জীবনী খুব বেশি জানা যায়নি। তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ। তিনি ‘স্লেশিয়াল মোশন’ নিয়ে যুগান্তকারী মতবাদ দিয়েছিল। তার সীমাবদ্ধতা থাকার পরও তিনি প্লেনটারি মোশন নিয়ে নিজস্ব থিউরি প্রদান করেছিলেন। যা এখন ঠিক।
মুসা আল খাওয়ারিজমি
তার পুরো নাম আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে মুসা আল খাওয়ারিজমি। সোভিয়েত রাশিয়ার আরব সাগরে পতিত আমু দরিয়ার নিকটে একটি দ্বীপের নিকটে অবস্থিত আনুমানিক ৭৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাটিগণিত, বীজগণিত, ভূগোল, জ্যোতিবিজ্ঞান, জ্যামিতিতে প্রভৃত ভূমিকা রাখেন। তবে মূলত বীজগণিতের জন্যই তিনি সবচেয়ে আলোচিত হন। তার ‘আল জিবর ওয়াল মুকাবিলা’ বই থেকে জানা যায় যে, তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। খলিফা মামুনের বিশাল লাইব্রেরিতে আল খাওয়ারিজমী চাকরি গ্রহণ করেন। এখানেই সম্ভবত তিনি বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। অসীম ধৈর্য সহকারে অধ্যয়ন করে তিনি বিজ্ঞানের যাবতীয় বিষয়ের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন জগিবখ্যাত গণিতবিদ। তার সময়ের গণিতের জ্ঞানকে তিনি এক অভাবনীয় সমৃদ্ধতর পর্যায়ে নিয়ে তুলেন। একজন গণিতবিদ হওয়ার পাশাপাশি ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য জ্যোতির্বিদ। ভূগোল বিষয়ে তার প্রজ্ঞা উৎকর্ষতাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। তিনি ছিলেন বীজগণিত তথা এলজেবরার জনক। তিনি প্রথম তার একটি বইয়ে এই এলজাবরার নাম উল্লেখ করেন। বইটির নাম হলো ‘আল জাবর ওয়াল মুকাবিলা’। তার বই নিয়ে নিবন্ধটির শেষ অংশে থাকবে। তিনি বিজ্ঞান বিষয়ক বহু গ্রিক ও ভারতীয় গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদ করেন। পাটিগণিত বিষয়ে তিনি একটি বই রচনা করেন যা পরে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়। তার হাতেই বীজগণিত পরবর্তী সময়ে আরও সমৃদ্ধতর হয়। বর্তমান যুগ পর্যন্ত গণিত বিদ্যায় যে উন্নয়ন এবং এর সহায়তায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যে উন্নতি ও আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে তার মূলে রয়েছে আল-খোয়ারিজমি’র উদ্ভাবিত গণিত বিষয়ক নীতিমালারই বেশি অবদান। তার রচিত বই ‘কিতাব আলজিবর ওয়াল মুকাবিলা’ হতে বীজগণিতের ইংরেজি নাম অ্যালজেবরা উত্পত্তি লাভ করে।
ইবনে হাইছাম
প্রখ্যাত পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ, প্রকৌশলী, গণিতবিদ, চিকিৎসাবিদ, দার্শনিক, মনোবিজ্ঞানী, আবু আলী আলহাছান ইবনে আল হাছান আল ইবনে হাইছাম। তিনি বসরায় জন্মগ্রহণ করায় আল বাসরী নামেও পরিচিত। আলোকবিজ্ঞানে অসামান্য সংযোজন ‘কিতাবুল মানাজির’-এর ১৫-১৬ অধ্যায়ে জ্যোতির্বিদ্যার আলোচনা রেখেছেন। এ ছাড়া, তার ‘মিযান আল-হিকমাহ’ এবং ‘মাক্বাল ফি দ্য আল-ক্বামার’ গ্রন্থদ্বয়ে তিনি সর্বপ্রথম গাণিতিক জ্যোতির্বিদ্যা এবং পদার্থবিদ্যার সমন্বয় সাধনের চেষ্টা চালান।
আল-রাযী
আবু বকর মোহাম্মাদ ইবন যাকারিয়া আল রাযী বা আল-রাযী। তিনি ৮৪১ খ্রিস্টাব্দে ইরানের তেহরানে জন্ম গ্রহণ করেন। রাযী ছিলেন একজন দক্ষ পার্সিয়ান চিকিৎসক এবং দার্শনিক। তিনি চিকিৎসা বিদ্যা, আল-কেমি, পদার্থবিদ্যা এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর ১৮৪ টিরও বেশি বই লিখেছেন। তিনি সালফিউরিক এসিড আবিষ্কার করেন। তিনি ইথানল উৎপাদন, বিশোধন, ও চিকিৎসায় এর ব্যবহার প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। তিনি একজন বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ছিলেন। তিনি বহু দেশ ভ্রমণ করেন।
এক নজরে সেরা যারা:
> রসায়নের জনক— জাবির ইবনে হাইয়ান
> বিশ্বের সেরা ভূগোলবিদ— আল-বিরুনি
> আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক— ইবনে সিনা
> হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল আবিষ্কারক—ইবনুল নাফিস
> বীজগণিতের জনক— আল-খাওয়ারিজমি
> পদার্থ বিজ্ঞানে শূন্যের অবস্থান নির্ণয়কারী— আল-ফারাবি
> আলোক বিজ্ঞানের জনক— ইবনে আল-হাইসাম
> এনালিটিক্যাল জ্যামিতির জনক— ওমর খৈয়াম
> সাংকেতিক বার্তার পাঠোদ্ধারকারী— আল-কিন্দি
> গুটিবসন্ত আবিষ্কারক— আল-রাযী
> টলেমির মতবাদ ভ্রান্ত প্রমাণকারী —আল-বাত্তানি
> ত্রিকোণমিতির জনক — আবুল ওয়াফা
> স্টাটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা — ছাবেত ইবনে কোরা
> পৃথিবীর আকার ও আয়তন নির্ধারণকারী—বানু মুসা
> মিল্কিওয়ের গঠন শনাক্তকারী — নাসিরুদ্দিন তুসি
> এলজাব্রায় প্রথম উচ্চতর পাওয়ার ব্যবহারকারী — আবু কামিল
> ল’ অব মোশনের পথ প্রদর্শক— ইবনে বাজ্জাহ
> ঘড়ির পেন্ডুলাম আবিষ্কারক — ইবনে ইউনূস
> পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয়কারী— আল-ফরগানি
> পৃথিবীর প্রথম নির্ভুল মানচিত্র অঙ্কনকারী— আল-ইদ্রিসী
> বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের আবিষ্কারক —আল-জাজারি
> সূর্যের সর্বোচ্চ উচ্চতার গতি প্রমাণকারী—আল-জারকালি
> বীজগণিতের প্রতীক উদ্ভাবক — আল-কালাসাদি
Discussion about this post