নুরুল আলম নুরুকে সরকারী বাহিনী ধরে নিয়ে গেলো, মেরে ফেলেছে এরপর। একটি দুটি বুলেট দিয়ে নয়। মানুষটার চোখেই গুলি করা হয়েছে দশটি। চোখ দুটো ছিন্নভিন্ন। হাত পা নাইলনের দড়ি দিয়ে শক্তভাবে বাঁধা। বুকে অসংখ্য বুলেট ঢুকে আছে। এই হলো দৃশ্য। সহজ বর্ণনা। এটুকুতেই শেষ হয়ে যায় আমাদের কাছে। কিন্তু তার স্ত্রী, পিতা-মাতা, এদের কাছে এসব দৃশ্য পুরোটা জীবন বেঁচে থাকা অব্দি মুহুর্তে মুহুর্তে মনে হবে। উনারা অপ্রকৃতস্থের মত বাকি জীবন কাটাবেন। তার শিশুকন্যা একদিন ছবি ভিডিওতে দেখবে বালিতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা তার পিতার লাশের অবস্থা।
.
আর আমরা? নতুন করে কিছু বলবার নেই। বলা হয়েছে আগে যখন জনির শরীরে বায়ান্নটি বুলেটের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিলো, যখন মাত্র চৌদ্দ বছরের কিশোরের লাশ চোখ উপড়ানো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো। এই ভয়ংকর মৃত্যুগুলোর সংবাদ পড়ে, একসময়কার জ্যান্ত ছটফট করা মানবদেহের এরকম বীভৎস, নির্যাতিত, বিকৃত ছবি ভিডিও দেখে কিছু লিখবার আর নতুন রকমের ভাষা নেই। শুধু মনে হয় এই বুঝি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? এরই নাম দেশপ্রেম?
.
নুরু বিএনপি করতেন, সোহান শিবির করতো, সরকার আর তার পুলিশ র্যাব এরা আওয়ামীলীগ করে তাই নুরু কিংবা সোহানকে এদের পছন্দ হয়নি। রাগ লেগেছে তাদের। সেই রাগ থেকে মানুষগুলোর বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেয়া হলো। মেরে ফেলা হলো। কিন্তু মরবার আগে যে নারকীয় নির্যাতন চালানো হলো হাত পা বেঁধে, ইলেকট্রিক শক দিয়ে, শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে বেঁধে রাখা মানুষদের শরীরের সমস্ত মাংসপিণ্ড থ্যাতলে দিয়ে, পিটিয়ে পিটিয়ে, চোখ তুলে বের করে ফেলে এবং মরবার পরে লাশ বিকৃত করে যে আনন্দ গ্রহণ করা হয়, সেই আনন্দের, সেই উত্তেজনার জন্ম কোথায়?
.
আজ আমাদের সমাজের কিছু মানুষের মনোবিকৃতি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? ভেবেছেন একটু? একদিন এমন দিন আসবে যে বিরোধীদলের কারো শরীরের চামড়া ছিলে পায়ের জুতা বানিয়ে আনন্দ প্রকাশ করা হবে। বীরত্ব দেখিয়ে সেটি উপহার হিসেবে নিজেদের মধ্যে আদানপ্রদান করা হবে। সেটিকে দেশপ্রেম এবং চেতনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হবে এদেশে। সময় এরকম এখন। সেদিকেই এগোচ্ছে।
.
একটি ক্রিমিনালকেও হত্যা করতে গিয়ে পুলিশ র্যাব এরা এতকিছু করবে না। যদি শুধু হত্যাই তাদের উদ্দেশ্য হয়। এই বিকৃত কাজ তখনই করা হবে যখন একজন সাইকোপ্যাথের ভয়ানক জিঘাংসা থাকে কোনো মানুষের উপর। এই দেশের পুলিশ র্যাব এদের এরকম ভয়ঙ্কর জিঘাংসা কিভাবে জন্মে এদেশের মানুষদের উপর? এইভাবে হত্যার কাজগুলো আসলে কারা করে? ঐযে কথিত জঙ্গি ঘটনায় মারা গেলেন যিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ, যার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত হলাম, তারা করেন এই কাজগুলো? নাকি অন্য আরো কিছু আছে যাদেরকে এইরকম করে খুন করে আনন্দ করার অধিকার দেয়া হয়েছে যা আমরা জানিনা।
.
বাংলাদেশে এখন দেশপ্রেমের নামে যা চলছে, এই উন্মত্ততা, এই পৈশাচিকতার কালচার, ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি, তা স্রেফ কিছু লোকের সাইকোপ্যাথিক মনোবৃত্তি চরিতার্থ করা ছাড়া আর কিছুনা। আর যারা এসবের বিরুদ্ধে চুপ থাকতে পারে কিংবা সমর্থন দিতে পারে তারাও একই রকমের স্যাডিস্ট সাইকো। বিরোধী মতের সাধারণ সব নির্দোষ মানুষদের এভাবে হত্যা, যাকে খুশী তাকে ধরে নিয়ে টাকা আদায় করা, না দিলে অথবা দিলেও খুন করে আনন্দ পাওয়া, এগুলো স্বাভাবিকতা নয়।
.
আওয়ামী সরকার নুরুর হত্যাকারী আর বিএনপি সহ বাকি বিরোধীদলগুলো হলো সেই হত্যার পরোক্ষ সহায়ক। কারণ, একটি বিরোধী দলের কাছ থেকে জনগন যা আশা করে তা বিএনপি দিতে পারেনি। বিরোধী দল সর্বদা সতর্ক অবস্থায় থাকবে তার জনগণ নিয়ে, সরকারের বিরুদ্ধে। আন্দোলন দরকার হলে তা করবে দেশের স্বার্থে। বিরোধী দলকে শ্যাডো গভর্ন্মেন্ট বলা হয় এ কারণে। অথচ আমাদের দেশেরগুলো এরা বিরোধীদল হিসেবেও ব্যার্থ আজ। আর তাই এইসব, জনি, নুরু সহ অসংখ্য জামায়াত এবং বিএনপির লোকের লাশের ভাঙ্গাচোরা স্তুপ উপহার দিচ্ছে আওয়ামী সরকার।
Discussion about this post