বাবা আদম শহীদের বাড়ি ছিল মক্কার পাশে তায়েফে। তিনি একাধারে ব্যবসায়ি, শিক্ষক ও দাঈ। তায়েফ থেকে থেকে ইসলাম প্রচার ও ব্যবসার কাজে এসেছিলেন বাংলায়। চট্টগ্রাম, বগুড়া, চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জে তাঁর দাওয়াতের প্রভাব পড়তে থাকে। বাবা আদম শহীদ রহ. ১১৪২ খিস্টাব্দে ইসলাম প্রচার ও ব্যবসার উদ্দেশে ১২ জন আরবীয় নাগরিকসহ বাণিজ্য জাহাজযোগে চট্টগ্রাম পৌঁছান।
খোরসান প্রদেশে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর বাবা আদম (রহ.) উচ্চশিক্ষার জন্য বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। নিজামিয়া মাদ্রাসা থেকে উচ্চ শিক্ষালাভের পর বাবা আদম (রহ.) আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বাগদাদে হজরত আবদুল কাদির জিলানী (রহ.)-এর সাহচর্যে আসেন এবং তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
বাবা আদম (রহ.) প্রথমে মহাস্থানগড়ে মাদ্রাসা স্থাপন করে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তার সফরসঙ্গী ১২ জন আউলিয়ার অধীনে ১২টি মিশন গঠন করে এলাকায় পানির অভাব দূর করতে পুকুর খনন, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১২ জন ওলি বাবা আদমের নেতৃত্বে ইসলাম প্রচারে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন।
এরপর তিনি তৎকালীন বিক্রমপুর ও বর্তমান মুন্সিগঞ্জে আসেন। এখানে ইসলাম প্রচারের সময় রাজা বল্লাল সেনের কর্মচারীদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। বিরোধ যুদ্ধের দিকে গড়িয়ে যায় গরু কুরবানীকে কেন্দ্র করে। একজন নওমুসলিম গরু জবাই করলে বল্লালসেনের কর্মাচারীরা সেই পরিবারের সবাইকে হত্যা করে। বাবা আদম এর প্রতিবাদে সেই কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করেন।
বল্লাল সেন বাংলায় দ্বীন প্রচারকারী সব দায়ির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১১৭৪ সালে বিক্রমপুরের কানাইচং ময়দানে বল্লালসেনের বাহিনীর মোকাবেলা করেন বাবা আদম শহীদ। সে যুদ্ধে বল্লাল সেন পরাস্ত হয়ে ফিরে যান। এর চার বছর পর বল্লাল সেন আবারো আক্রমণ করেন বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জে। ১০ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ১১৭৮ সালে মুন্সীগঞ্জে কানাইচং ময়দানে ১০ দিনব্যাপী প্রচণ্ড যুদ্ধে বহু সংখ্যক সৈন্য ও মুজাহিদ নিহত হন।
এ যুদ্ধে বল্লাল সেনের সৈন্য ছিল ২০ হাজার, অপরদিকে মুজাহিদ ও সেচ্ছাসেবক বাহিনীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার। যুদ্ধে পরাজয়ের আশংকায় বল্লাল সেন ২০ সেপ্টেম্বর ১১৭৮ সালে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব করলে বাবা আদম সরল বিশ্বাসে মেনে নেন। সেদিন রাতে ঘটে বিশ্বাসঘাতকতা। বিক্রমপুরের দরগাহ বাড়িতে রাতে অতর্কিত আক্রমণ করে বল্লাল সেন এবং বাবা আদম শহীদ রহ.-কে হত্যা করে। তাঁর কবর মুন্সিগঞ্জে এখনো আছে।
আজ বিশ সেপ্টেম্বর। ১১৭৮ সালের আজকের এই দিনে বাবা আদম শাহদাতবরণ করেন। বাবা আদম শহীদের আজ ৮৪৫ তম শাহদাতবার্ষিকী। এর মাত্র ২৭ বছর পর ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির নেতৃত্বে পুরো বাংলা মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনা স্মরণে রাখতে এর প্রায় ৩০০ বছর পর সুলতানী আমলে বাবা আদমের নামে ‘বাবা আদম শহীদ মসজিদ’ নির্মিত হয়। বাবা আদম শহীদের কবর ও মসজিদ এখনো সংরক্ষিত আছে।
আল্লাহ তায়ালা এই মহান মুজাহিদকে জান্নাতে সুমহান মর্যাদা দান করুন।
Discussion about this post