নাম মিনারুল ইসলাম বাবু। জন্মেছিল বাংলাদেশে। এটা তার জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ না হয়ে মিনারের জন্ম যদি পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে, এমনকি ফিলিস্তিন কিংবা কাশ্মিরেও জন্ম হতো তবুও তার জীবনটা এতটা সস্তা হতো না।
আমি জানি, যারা আমার লেখা পড়ছেন তারা অধিকাংশই মিনারুল ইসলাম বাবুকে চিনেন না। সে মাত্র নবম শ্রেণির কিশোর। তাকে খুন করা হয়েছে কয়েকদিন আগে। তার অপরাধ এখনো জানা যায়নি। গত সাত তারিখে বিএসএফ তাকে খুন করে।
মিনারকে যদি ইসরাইলি হানাদাররা খুন করতো কিংবা কাশ্মীরে ভারতীয় হানাদাররা যদি খুন করতো তাহলে বলা যায় সারা পৃথিবীতে আওয়াজ হতো। আমরাও জানতাম মিনারের নাম। কিন্তু সে অভাগা থার্ডক্লাস অথচ স্বাধীন (!) বাংলাদেশের নাগরিক। তাই তার মৃত্যুতে নেই কোনো আওয়াজ। যেন এটাই আমাদের নিয়তি। ভারতের গুলি খাবো আর বেঘোরে প্রাণ দেব।
যেদিন শেখ হাসিনার সাথে নরেন্দ্র মোদী ওয়াদা করেছিলো সীমান্ত হত্যা জিরোতে নামিয়ে আনা হবে, সেদিনই খুন করে উড়িয়ে দেওয়া হয় মিনারের প্রাণ। হাসিনা কোনো প্রতিবাদ করেনি। বাংলাদেশের সরকারের কিছু যায় আসে না। বাংলাদেশের কেউ রাস্তায় নামে নি। কারো কোনো বিকার নেই। পরদিন হাসিনা ভারতের রাজস্থানে নাচাগানা শুরু করে দিয়েছে।
আজ ১১ তারিখ। দিনাজপুরের দাইনুর সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হওয়া খানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মিনারুল ইসলাম বাবুর লাশ ৪ দিনেও ফেরত দেয়নি ভারতীয় হানাদার বাহিনী। তাকে সীমান্তের কাছে গুলি করে হত্যার পর লাশ নিয়ে যায় তারা। এরপর থেকে বাংলাদেশ চৌকিদাররা (বিজিবি) বিএসএফ-এর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখলেও লাশ ফেরত আনতে ব্যর্থ হচ্ছে।
পরিবারের সদস্যরা লাশের অপেক্ষায় সীমান্তের কাছে প্রহন গুনছেন। প্রতিটি মূহুর্ত পরিবারের সদস্যদের কাটছে লাশ ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায়। আহা! বিচার কী চাইবে? বিচার চাওয়ার কথা বাংলাদেশের নাগরিকরা ভাবতেই পারে না। প্রভুদের দেশ ভারত যদি দয়া করে লাশটা দেয় তাতেই খুশি বাংলার নাগরিকরা। এতটা দূরাবস্থা কোন দেশের আছে?
পরিবারের সদস্যদের প্রত্যাশা ছিল শনিবার পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের সন্তানের লাশ ফেরত পাবেন। কিন্তু পতাকা বৈঠক হলেও লাশ ফেরত আসেনি। সন্ধ্যায় শূন্যহাতে ফিরেছে বিজিবি। শনিবার সকালে দাইনুর সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে লাশ শনাক্ত হলেও ফেরত পাওয়া যায়নি।
নিহত মিনারের বাবা বলেন, আমার ছেলেটা কী অপরাধ করলো জানি না। তাকে মেরে ফেলা হলো।এখন লাশটা রেখে ভারতের কি লাভ? আমরা আমাদের কলিজার টুকরাকে পেলে অন্তত দাফনটা করতে পারবো। বিএসএফ কেন এই তালবাহানা করছে? আমরা চাই-দ্রুত ছেলের লাশ ফেরত দেয়া হোক।
Discussion about this post