নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দখল হতে যাচ্ছে মানারাত ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকার মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দখলের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। পুরাতন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ বাদ দিয়ে সরকারের পছন্দের লোকদের বসাতে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩ টায় বৈঠক ডাকা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. মো: ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠির সূত্রে জানা গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মানারাতের শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে একটি কিন্টার গার্ডেন স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এরপর ‘মানারাত ট্রাস্ট’ গঠিত হয় ১৯৮১ সালে। পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা চালু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানারাত পূর্ণতা পায়। সুতরাং মানারাত গজিয়ে ওঠা কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। দীর্ঘদিনের ত্যাগের ফসল।
ইংলিশ মিডিয়াম এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই শিক্ষা ও নৈতিকতার প্রতি জোর দিয়েছে। প্রতিষ্ঠার সময়ে এবং বছরের পর বছর এর পরিচালনায় ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী একঝাঁক স্বপ্নচারী দ্বীনদার শিক্ষাবিদ মানারাতের সাথে যুক্ত ছিলেন।
রহস্যজনক হচ্ছে, আজকের অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দখলের জন্য বৈঠকে ডাকা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক (এনএসআই) এবং পুলিশের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে। প্রশ্ন উঠেছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দখলে নিতে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে উপস্থিত রাখার রহস্য নিয়ে।
এছাড়া বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন সিনিয়র সচিব, হাসু মনির পাঠশালার সভাপতি মারুফা আক্তার পপি, সোশ্যাল ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি নামে একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মিহির কান্তি ঘোষালসহ ২২জন। এর মধ্যে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বর্তমান ভিসি ড. মো: নজরুল ইসলামসহ এই বিশ্ব বিদ্যালয়ের ট্রেজারার, একজন ডিন ও রেজিস্টার।
ইসলামি ব্যাংক দখলের আদলেই মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দখল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যাচ্ছে ফ্যাসিবাদী সরকার। আর সরকারের এই প্রক্রিয়ার সাথে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বর্তমান ভিসিও জড়িত রয়েছে।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি স্থায়ী সম্পত্তি রয়েছে ঢাকার গুলশানে। ওয়াকফ করা এই সম্পত্তির উপরেই স্কুল এবং কলেজ গড়ে উঠেছে। তবে ইউনিভার্সিটির জন্য পৃথক ক্যাম্পাস রয়েছে ঢাকার অদূরে আশুলিয়া। গুলশানের ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের জন্যই দীর্ঘ দিন থেকে অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল বর্তমান ভিসি। আইন অনুযায়ী ওয়াকফ সম্পত্তি ইউনিভার্সিটির নামে হস্তান্তর সম্ভব নয় বলে বিদ্যমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সম্মতি দেয়নি। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়ন্দো সংস্থা ও পুলিশ দিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই কায়দায় ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পরিবর্তন করে পুরো ব্যাংক দখলে নিয়েছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা।
বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নিজেদের দখলে নিতে ব্যবহার করছে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), ডিজিএফআই ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের লোকদেরকে। যাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অথচ সরকার তাদের দিয়ে ভিন্নমতের লোকদের প্রতিষ্ঠান দখলে নিচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের মত একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠানকে সরকার দখলে নিয়েছিল এই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োগ ডিজিএফআই এবং এনএসআইকে ব্যবহারের মাধ্যমে। ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের তৎকালিন চেয়ারম্যানকে ডেকে নিয়ে ডিজিএফআই দফতরে সকল শেয়ার ট্রান্সফার করা হয়েছিল বলে পরবর্তীতে জানা গিয়েছিল।
দীর্ঘ দিন থেকেই মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দখলে নিতে সরকার মরিয়া হয়েছিল। এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি ভিসি নিয়োগের প্যানেল বার বার ফেরত দিচ্ছিল সরকার। সর্বশেষ বর্তমান ভিসিকে ৩ নম্বরে রেখে নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাঠালে সেটা অনুমোদন করা হয়। কারণ, এই ভিসি আওয়ামী হিসাবে পরিচিত। তিনি দায়িত্ব নিয়েই নজর দেন ঢাকার গুলশানে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্ধারিত জমিটিতে। ওয়াকফের জমি অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের নামে হস্তান্তর করা আইন সম্মত নয়। তাই বিদ্যমান ট্রাস্টিজ সেটা দিতে সম্মত হয়নি। এতে বিরোধের সূত্রপাত হয় ভিসির সাথে।
সম্প্রতি দেশের প্রথম এবং খ্যাতি সম্পন্ন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিও দখলে নিয়েছে একই পদ্ধতিতে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের অনেকের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দিয়ে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে। তার আগে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও দখলে নিয়েছে আওয়ামীলীগ।
আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পরও ক্ষমতা নিয়ে দখল শুরু করেছিল। তাদের এই দখলের চরিত্র কখনো পাল্টায়নি। ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবই তারা নিজেদের দখলে নিচ্ছে। আর এই দখলের জন্য ব্যবহার করছে রাষ্ট্রীয় বেতনভুক্ত গোয়েন্দা সংস্থাকে।
Discussion about this post