অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মনে হয় খুব বেশি কিছু বলার দরকার নেই। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল-শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবর্তন আনা। লেখাপড়া করে ছেলে মেয়েরা ভাল খারাপ জানার ও বুঝার সক্ষমতা অর্জন করে। শিক্ষার আলোকে নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনে। ভাল মানুষ ও আদর্শ নাগরি হওয়ার চেষ্টা করে। উন্নত নৈতিকার অধিকারী হয়। কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা কি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারছে? অনেকেই বলবে পারছে না। তাদের জবাব ভুল। আমাদের শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবশ্যই পরিবর্তন আনছে। কি সেই পরিবর্তন? সেটা হল-স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছেলে-মেয়েগুলো শিক্ষা অর্জন করে চোর, হিংস্র জানোয়ার, দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী হয়ে বের হচ্ছে।
দেখা গেছে, যেসব শিক্ষকরা শিক্ষা দেন তাদেরকে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষকরাই এখন দুর্নীতি ও চুরিতে লিপ্ত হয়ে গেছে। আর চুরিও সাধারণ চুরি নয়। শিক্ষা চুরি। উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার জন্য পড়ালেখা না করে অন্যের গবেষণা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছে।
গত বছর গবেষণা চুরিতে ধরা পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিয়া রহমানসহ তিন জন। অভিযোগ তদন্তের পর তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের গবেষণা চুরি নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে যায়।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী আরেক শিক্ষক সাদেকা হালিমের বিরুদ্ধে গবেষণা চুরির অভিযোগ উঠে।
অভিযোগে বলা হয়, ‘পার্টিসিপেশন অব উইমেন ইন অ্যাকুয়াকালচার ইন থ্রি কোস্টাল ডিসট্রিক অব বাংলাদেশ : অ্যাপ্রোচেস টুওয়ার্ডস সাসটেইনেবল লাইভলিহুড’ শিরোনামে ১৫ পৃষ্ঠার গবেষণা নিবন্ধটি চৌর্যবৃত্তি শনাক্ত করার সফটওয়্যার টার্নইটইনে যাচাই করে দেখা যায়, ৮৮ শতাংশ অন্য প্রকাশনার সঙ্গে মিল।
যা ২০১২ সালে ‘ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব এগ্রিকালচার সার্ভিসেসে’ প্রকাশিত হয়। টার্নইটইনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রবন্ধটির ৮৮ শতাংশ নকলের মধ্যে ওফড়ংর.ড়ৎম নামে একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে ৬১ শতাংশ নকল করা হয়েছে। ওই নিবন্ধটি ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।
সাদেকা হালিমের মতো শিক্ষক গবেষণা চুরি করবে এটা মানুষের কল্পনারও বাইরে ছিল। কারণ, তিনি প্রায় প্রতিদিন টকশোতে রাজনীতিবিদসহ মানুষকে নৈতিকতার সবক দেন। কথা বলেন-দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ উঠার পর মানুষ শুধু হতাশ হয়নি, চরমভাবে ক্ষুব্ধও হয়েছে।
জানা গেছে, সাদেকা হালিমের বিষয়টি তদন্ত করছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মজার বিষয় হল-সাদেকা হালিমের ঘটনা তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহসিনা আক্তার খানমের (লীনা তাপসী খান) বিরুদ্ধে গবেষণা চুরির অভিযোগ উঠেছে।
লীনা তাপসীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি-নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক ও নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ইফফাত আরা নার্গিস।
তিনি দাবি করেছেন, লীনা তাপসী খানের পিএইচডি-অভিসন্দর্ভ (গবেষণা বিষয়ক নিবন্ধ)-এর ওপর ভিত্তি করে রচিত ‘নজরুল সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ নামক গ্রন্থের ৩৮টি স্থানে অন্যের লেখা নকল করা হয়েছে।
২৭৭ পৃষ্ঠার ‘নজরুল সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ গ্রন্থের ১৬৯ পৃষ্ঠাই লীনা তাপসী খানের রচনা নয়। অন্যের গ্রন্থ থেকে হুবহু নকল করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ পৃষ্ঠা নজরুল ইনস্টিটিউট ও নজরুল একাডেমি প্রকাশিত স্বরলিপির বই থেকে স্ক্যান করে মূলপাঠ হিসেবে ঢোকানো হয়েছে। যা সাধারণত বইয়ের পরিশিষ্টে উল্লেখের কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
আর বাকি সব লেখা রবীন্দ্রনাথের ‘গীতিবিতান’ ও ‘নজরুল-গীতিকা, ইদ্রিস আলীর লেখা ‘নজরুল সঙ্গীতের সুর’, স্বরলিপিকার জগৎ ঘটক ও কাজী অনিরুদ্ধের ‘নবরাগ’, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘নজরুল সৃষ্ট রাগ ও বন্দিশ’ এবং কাকলী সেনের ‘ফৈয়াজী আলোকে নজরুলগীতি’ প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে তথ্য নির্দেশ ছাড়া হুবহু চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ইফফাত আরা।
তিনি বলেন, ২০১০ সালের মে মাসে লীনা তাপসী এটি পিএইচডি থিসিস হিসেবে উপস্থাপন করেন। ২০১১ সালে নজরুল ইনস্টিটিউট এটি বই আকারে প্রকাশ করে। ওই অভিসন্দর্ভের উপর ভিত্তি করে ২০১৬ সালে লীনা তাপসী খান বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহযোগী অধ্যাপক হন।
ইফফাত আরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সদস্যদের জানানো পরও তারা কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পরও তারা গবেষণা চোর লীনা তাপসীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর মানে-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এই গবেষণা চুরির সঙ্গে জড়িত।
Discussion about this post