যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় সোলেইমানির মৃত্যুর পর পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরান৷ পরিস্থিতি এখন শান্ত হলেও পরবর্তীতে এশিয়াতে, বিশেষ করে বাংলাদেশে কি প্রভাব পড়বে? বাংলাদেশের অবস্থানই বা কী হওয়া উচিৎ?
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া কিছুই করার নেই বাংলাদেশের৷
মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে নিশ্চয়ই নজর রাখছেন?
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই৷
ইরান তো পাল্টা হামলা চালাল, এখন কি যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে?
না, যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে এটা বলা যাবে না৷ তবে একটা অশান্ত অবস্থার দিকে যাচ্ছে৷ এটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নতুন কিছু নয়৷ আগেও ইরাক যুদ্ধ হয়েছে৷ ফিলিস্তিন ইস্যুতেও এখানে একাধিকার যুদ্ধ হয়েছে৷ এবারের পরিস্থিতি একটু ভিন্ন৷ ইরান সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে৷ এই পরিস্থিতি নানা দিকে মোড় নিতে পারে৷ ট্রাম্পের যে বক্তব্য সেখানে সরাসরি তারা মুখোমুখি অবস্থানে আছে৷ কিন্তু এ বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে যে নির্বাচন সেই নির্বাচনকে ঘিরে অভ্যন্তরণীন রাজনীতিরও বিষয় আছে। ফলে পরিস্থিতিকে আরো বেশি উত্তপ্ত করার প্রয়াস এখানে আছে৷ তবে আমি সরাসরি যুদ্ধের পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করছি না৷
যদি যুদ্ধ হয় বা না হয়, তাহলেও এই পরিস্থিতিতে এশিয়ায় কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
প্রভাব পড়তে পারে৷ মধ্যপ্রাচ্য হল সেন্টার৷ একদিকে ভূরাজনীতির জন্য অন্যদিকে অর্থনীতির জন্য৷ সমুদ্র পথের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ৷ তেলের দামের বিষয়টি বাংলাদেশসহ সব দেশকেই প্রভাবিত করে৷ অর্থনৈতিক প্রভাব আস্তে আস্তে পড়তে পারে৷ মধ্যপ্রাচ্যের যে শ্রম বাজার সেই বাজারের উপর এশিয়ার অনেক দেশই নির্ভরশীল৷ বাংলাদেশ ছাড়াও ফিলিপাইন, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল অনেক দেশই আছে৷ সেই শ্রমবাজারের উপর প্রভাব বিস্তার করলে সেটিও একটা চাপ পড়বে৷
বাংলাদেশের অবস্থান কি হওয়া উচিৎ?
শুধু ইরান না, সৌদিআরব, তার্কিসহ মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন পথ দেখি না। শুধু বাংলাদেশ না, পৃথীবির অনেক দেশের পক্ষেই সেটি সম্ভব না। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিকে খুন করেছে। সেটি অবশ্যই দুই দেশের মধ্যের বিষয়। বাংলাদেশর অবস্থান হল শান্তি বজায় রাখতে এক ধরনের আবেদন করা। দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সুসম্পর্ক আছে। এখন বিশ্বের অনেক শক্তিশালী দেশ আছে, জাতিসংঘ আছে তাদের এখানে ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ তো ইরানি কমান্ডার হত্যার নিন্দাই জানায়নি। এতে কি ইরান বা তাদের বন্ধু রাষ্ট্র ক্ষুব্ধ হতে পারে?
এখানে ক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয় না। এটা ভিন্ন রকমের বাস্তবতা। এটা দ্বিপাক্ষিক বিষয়। এখানে নিন্দা জানানোর বিষয়টি ইরানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। ইরান ভালো করেই জানে যে, বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কি? এ কারণে অনেক দেশই সরাসরি ইরানের পক্ষ অবলম্বন করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই কাজ অফিসিয়ালি অনেক দেশ নিন্দা জানায়নি। কিন্তু বহু মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এর প্রতিবাদ করেছে।
মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কি শেষ পর্যন্ত চুপ থাকতে পারবে? যদি চুপ থাকে তাহলে কি প্রভাব পড়বে?
এটি চুপ থাকা বা না থাকার বিষয় না। এটি একেবারেই কূটনীতিক বিষয়। দুই দেশের আক্রমন ও পাল্টা আক্রমনের বিষয়টি দুই দেশের ইস্যু দ্বারা প্রভাবিত। এখানে সরাসরি নিন্দা জানানোর বিষয়টি সব ক্ষেত্রে ঘটে না। সেই বাস্তবতার নিরিক্ষেই বাংলাদেশকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে হচ্ছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে তো সেই অর্থে ঐক্য নেই। এতবড় একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে ওআইসির ভূমিকা কি? আরব লীগ কি করছে? বাংলাদেশ তো দূরে আছে, পাশে যে দেশগুলো কাতার, আরব আমিরাত, কুয়েত, সৌদিআরব তাদের ভূমিকা কি। যদিও ওই সব দেশে মার্কিন সৈন্য আছে। তবুও তো তারা মুসলিম দেশ। এগুলো বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে, জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই দেশগুলোকে ভূমিকা নিতে হয়। ফলে বাংলাদেশের অবস্থান আলাদাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই।
এই মুহুর্তে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কোন পথে যাওয়া উচিত?
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির নতুন করে কোন পথ নেওয়ার কিছু নেই। এখন যে জায়গায় আছে, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। কোন বিশেষ শক্তির পক্ষে না যাওয়া। আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য যে দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা দরকার সেগুলো রাখতে হবে। আমাদের ক্ষতি হয় এমন কোন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না হওয়া। মধ্যপ্রাচ্য সবসময়ই বাংলাদেশের জন্য একটা স্পর্শকাতর এলাকা। এখানে কতগুলো পরিস্কার জাতীয় স্বার্থের বিষয় আছে। শ্রমবাজার যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা মাথায় রাখা। তেলের দাম বাড়লে কি হবে সেদিকে খেয়াল রাখাই হবে এখন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।