বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন বা স্বদেশী আন্দোলনের সময় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে গগন হরকরার গাওয়া ‘আমি কোথায় পাব তারে, মনের মানুষ যে রে’ গানটি অনেকটা অনুসরণ করে বাউল সুরে রবীন্দ্রনাথ “আমার সোনার বাংলা” গানটি রচনা করেন।
এই গান কিভাবে আমাদের জাতীয় সংগীত হয় সেটার ইতিহাস বলি এবার- ১৯৭২ সালে ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ নেতারা বাংলাদেশের পতাকা ও জাতীয় সংগীত নির্বাচন করার জন্য বসেন। প্রথমে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু পরে এই গানে বাংলাদেশ শব্দটি না থাকার কারনে গানটি বাতিল করা হয়।
এরপরে রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি” এই গানটি নির্বাচন করা হয়। যদিও গানটি ১৯০৫ সালে রচিত, গানে বাংলাদেশ শব্দটি নেই,শুধু মাত্র “বাংলা” শব্দ থাকার কারনে এই গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে সিলেক্ট হয় এবং শেখ মুজিবর রহমান এতে সম্মতি দেন।
সম্প্রতি নোবেল বলেছেন – বর্তমান জাতীয় সংগীতের চেয়ে আমার কাছে জেমস’ এর “বাংলাদেশ” গানটি আরো ভাল মনে হয়। … এই কথাটি বলার জন্য সেক্যুলার পন্থী ও দাদা বাবুদের গোলামদের ধুতিতে আগুন লেগে যায়, নোবেলকে তারা ইচ্ছামত গালাগালি, তিরস্কার করেন। নানা রকম হুমকি ধামকি দিয়েছেন।
এবার আসুন আপনি বিচার করুন।শুধু মাত্র “বাংলা” শব্দটার কারনে রবীন্দ্রনাথের গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। এই গানে কোথাও নির্দিষ্ট করে বাংলাদেশের কোন বর্ণনা দেয়া আছে? এই গানটি বাংলাদেশকে উদ্দেশ্য করে রবীন্দ্রনাথ রচণা করেছিলেন? বাংলা তো পশ্চিম বাংলাও বুঝায়।
এবার আসুন, প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে সম্ভবত ২০০০ সালে পিয়ানো এলবামে “বাংলাদেশ” গানটি রিলিজ হয়।
তুমি মিশ্রিত লগ্ন, মাধুরীর জলে ভেজা কবিতায়।
এই গানে কি নেই?
মুজিব, জিয়া, ভাসানী, শেরে বাংলা, সারোওয়ার্দী, নজরুল, সুফিয়া কামাল, জসীমউদ্দিন, জাহানারা ইমাম, জয়নুল, আব্বাসউদ্দীন, আব্দুল আলীম, সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ, একুশের প্রভাত ফেরী সহ পুরো বাংলার প্রতিচ্ছবি। … একটি গানে পুরো একটি বাংলাদেশ।
আমাদের শত শত দেশের গান আছে, কিন্তু এই গানের কাছাকাছি মানের আর কোন গান রচিত হয়নি আর হবেও না। এই গানকে যদি নোবেলের জাতীয় সংগীতের চেয়ে ভাল লাগে,সে যদি মনে করে এই গানকে জাতীয় সংগীত বানানো উচিত তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করা দরকার
এবার আমি তার পক্ষ নিয়ে কিছু বললতে চাই?
প্রথমত, এই গানটির মধ্যে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটাই নাই। স্বাভাবিকভাবে ‘বাংলা’ বলতে কেউ বাংলাদেশ বুঝে না, ভারতে বাংলা বলতে বুঝে পশ্চিমবঙ্গ। যেহেতু রবীন্দ্রনাথ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী (মাঝে মাঝে বাংলাদেশে বেড়াতে ও খাজনা তুলতে আসতো) তাই ‘বাংলা’ বলতে সে পশ্চিমবঙ্গ বুঝিয়েছে। কিন্তু আমরা মিথ্যা দিয়ে ইতিহাস ঢেকে এ গানটিকে বাংলাদেশের গান বলে চালাতে চাচ্ছি। এ যুক্তিতেও কখনই এ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
দ্বিতীয়ত, উইকিপিডিয়া মারফত (রেফারেন্স:প্রশান্তকুমার পাল, রবিজীবনী, পঞ্চম খণ্ড, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৯০, পৃ. ২৫৮-৫৯) জানা যায় এই গানটির পটভূমি হচ্ছে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন। যেহেতু রবীণ্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ রদের পক্ষে ছিলো এবং বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়াটা বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থি, তাই এই গানটি অবশ্যই বাংলাদেশ বিরোধী সেন্টিমেন্ট থেকে তৈরী। আর বাংলাদেশ বিরোধী গান কিভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হয় ? আপনারাই বলুন।
তৃতীয়ত, রবীন্দ্রনাথ ভারতের জাতীয় কবি। বাংলাদেশের জাতীয় কবির গান বাদ দিয়ে ভারতের জাতীয় কবির গান কোন যুক্তিতে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হয় ??
চতুর্থত, এই গানটির মধ্যে কোন জাতীয় চেতনা নাই। এই গানটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা ভাষা আন্দোলন কোন চেতনা এর মধ্যে প্রবেশ করে নাই। অথচ এই গানটি শোনানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উব্ধুদ্ধ করা সম্ভব ছিলো। উল্লেখ্য আমেরিকার জাতীয় সংগীত, ফ্রান্সের জাতীয় হচ্ছে রণ সঙ্গীত, যা শুনলে দেশকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার চেতনা জাগ্রত হয়। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত শুনলে ঘুম এসে যায়।
জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করা যায় না এমন নয়। অনেক দেশেই স্বাধীনতার বহু পরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করেছে। এদের মধ্যে সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া, কানাডা, মায়নামার, নেপাল, জার্মানি উল্লেখযোগ্য। এত বড় বড় দেশ যদি জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করতে পারে, তবে বাংলাদেশ কেন পারবে না ??
মনে রাখতে হবে,. মিথ্যার উপর ভিত্তি করে দেশপ্রেম বা জাতীয় সঙ্গীত হয় না। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে এই জাতীয় সঙ্গীত বাংলাদেশবিরোধী সেন্টিমেন্ট থেকে লেখা। অথচ আপনি জোর করে তাকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বানিয়ে দিলেন। সত্য কখনো চাপা থাকে না। ইতিহাস কিন্তু আমাদের ক্ষমা করবে না, সত্য জেনে ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের বিশ্বাসঘাতক বলে থু থু দেবে, নিশ্চিত থাকুন।
আপনার কাছে যদি মনে হয় এতে জাতীয় সংগীতের অপমান হয়, ভারত প্রেমিক দের গায়ে লাগবে তাহলে যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা করুন।
ব্লগ থেক সংগৃহীত