অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কোনো প্রকার অঘটনা কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট যদি বয়কট না করে তাহলে কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।আর নির্বাচন আসলেই অনুষ্ঠিত হবে কি না এটা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ সংশয় রয়েছে।কারণ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিলেও তারা আবার বয়কটও করতে পারে।ইতিমধ্যে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে নির্বাচনে থাকা না থাকা নির্ভর করবে সরকার ও ইসির আচরণের ওপর।সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না হলে তারা যেকোনো মুহূর্তে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিতে পারে।
তবে, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এমন প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি জোট।তারা সরকারের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টিরও চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়ও করছেন। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারাও বলছেন আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে।দেশবাসী তাদের পছন্দের প্রার্থীকে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে।
এখানে একটি বিষয় সবার কাছেই পরিষ্কার যে নির্বাচন কমিশন সরকারের ইশারার বাইরে কিছুই করবে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যা বলা হবে সিইসি ও ইসি সচিব তাই করবেন। এখন প্রশ্ন হলো সরকার কী আসলেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবে? বিএনপি জামায়াতের কর্মী সমর্থক ও সাধারণ জনগন কি কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে?
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য বিশ্বাস করার মতো যুক্তিসংগত কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ।
কারণ, ক্ষমতা ধরে রাখা ছাড়া আওয়ামী লীগের সামনে আর দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই। তাদের পেছনে একটি দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে।পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। টিকে থাকতে হলে তাদেরকে এখন সামনেই এগিয়ে যেতে হবে। আর এগিয়ে যাওয়ার জন্য যা করার দরকার তাদেরকে এখন তাই করতে হবে।আওয়ামী লীগ জানে জনগণের ভোটে তারা আর কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না।যা করার মেকানিজমের মাধ্যমেই করতে হবে। এ লক্ষ্যেই তারা বিগত দশ বছর ধরে প্রশাসনের সকল সেক্টরে অনুগত লোকদেরকে বসিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনে সারাদেশে রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের ঘরের লোক। প্রকাশ্যে তাদেরকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে বলা হলেও নিয়োগ দেয়ার আগেই শর্ত দেয়া হয়েছে যে নির্বাচনের দিন ওপর থেকে যা বলা হবে তাই করতে হবে।আর নৌকার এজেন্টদেরকে সুযোগ দিতে হবে।
তারপর গণমাধ্যমকর্মীরাও এবার সরাসরি কেন্দ্রে ঢুকতে পারবে না।প্রিজাইডিং অফিসারদের অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হবে।জানা গেছে, সারাদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষের লোকদেরকে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।আর গণমাধ্যমকর্মীরা অনুমতি নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকলেও সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে না।
তারপর সেনাবাহিনীকে রাখা হবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।খবর দিলে তারা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে আসবে। আর সেনাবাহিনী রিটার্নিং অফিসারদের অনুমতি ছাড়া কেন্দ্রে আসতে পারবে না। এখন প্রশ্ন হলো রিটার্নিং অফিসররাইতো সরকারের লোক তারাতো সেনাবাহিনীকে কখনো খবর দেবে না। বলা যায় সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারা কোনো ভুমিকা পালন করতে পারবে না।
চমৎকার একটি তথ্য
ঢাকার এমপি রহমত উল্লাহর একজন ঘনিষ্ঠজন ও যুবলীগ নেতা নুরনবী চৌধুরী শাওনের একজন ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তারা জানান, নৌকার বিজয়ের জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। নির্বাচনে যদি বিএনপি থাকে তাহলে তারাও কিছু ভোট পাবে। এবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সব ভোট নেয়া যাবে না।ধানের শীষের কিছু লোককে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।অন্যথায় নির্বাচন আবার প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ধানের শীষ যদি একেবারেই ভোট না পায় তাহলে মানুষ মনে করবে বিএনপির লোকজনকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। তাই বিএনপির লোকজনও ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে।
এদিকে রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট নামে হলেও মাঠে আছে শুধু বিএনপি আর জামায়াতই। আর যুবলীগ ছাত্রলীগ ক্যাডারদের অস্ত্রের মুখে সাধারণ মানুষ কেন্দ্রে এসে প্রতিবাদ করবে এমনটাও হওয়ার সম্ভাবনা কম। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিএনপি জামায়াত কি কেন্দ্রদখল আর ভোট ডাকাতি ঠেকাতে পারবে? সেই শক্তি কি তাদের আছে?