অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কথিত উন্নয়নের গল্প শোনাতে গিয়ে এবার চরমভাবে নাজেহাল হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সেটাও হয়েছে দেশের বাইরে। কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেখানে গিয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দেন। কিন্তু সেখানে তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিক সম্মেলনগুলোর মত আহ্লাদি প্রশ্ন পাননি। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করেন যুক্তরাজ্যের বহুল প্রচারিত টিভি চ্যানেল৪ এর প্রধান প্রতিবেদক এলেক্স থমসন। কিন্তু, শেখ হাসিনা সাংবাদিক এলেক্স থমসনের সেই প্রশ্নের জবাব দেন নি।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে সাংবাদিক এলেক্স থমসন যখন শেখ হাসিনাকে মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করেন তখন তার চেহারাটা মলিন হয়ে যায়। তিনি চুপ থাকেন। পরে মানবাধিকার নিয়ে করা প্রশ্নের জবাব না নিয়েই উপস্থাপক আরেকজনকে প্রশ্নের আহ্বান জানান। এদিকে জবাব না দেয়ায় সাংবাদিক এলেক্স থমসন বলতে থাকেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি এই প্রশ্নের উত্তর দিন, আমি নিশ্চিত আপনি এর উত্তর দিতে পারবেন না। আপনি আমাদের এই প্রশ্নটি করার সুযোগ দিচ্ছেন না।
সাংবাদিক কর্তৃক শেখ হাসিনাকে জেরার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এনিয়ে এখন সারাদেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কারণ, বাংলাদেশের গুম-খুনের বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।
মানবাধিকার নিয়ে করা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ায় শেখ হাসিনা দেশে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন বলে মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যখন এনিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে, ঠিক তখনই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফোন করে মোজাম্মেল বাবুর একাত্তর টিভিকে জানালেন যে, প্রধানমন্ত্রী কোনো প্রশ্ন এড়িয়ে যাননি। তিনি সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। এনিয়ে বিএনপি-জামায়াত প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে।
ভিডিও প্রতিবেদন ও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটা একটা চরম মিথ্যাচার। বিষয়টিকে চাপা দেয়ার জন্যই মূলত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে ভুল তথ্য দিয়েছেন।
কারণ, সাংবাদিক এলেক্স থমসন যুক্তরাজ্যের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক। তিনি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল৪ এর শুরু থেকেই এটাতে কাজ করছেন। ২৫ বছর ধরে তিনি এখানে আছেন। এ পর্যন্ত তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘটিত ২০টি যুদ্ধ কাভারেজ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি চ্যানেলটির প্রধান প্রতিনিধি। শেখ হাসিনাকে করা প্রশ্নের বিষয়টি তিনি তার টুইটারেও পোস্ট করেছেন।
তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির মানবাধিকার নিয়ে করা প্রশ্নের জবাব দেন নি। কমওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি এখন যুক্তরাজ্যে আছেন। গুমের অনেকগুলো মামলার তদন্ত চলছে। যা তার সরকারের রাজনৈতিক বিরোধী বা প্রতিপক্ষ।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো- বাংলাদেশে গুম-খুনের বিষয়টি শুধু শেখ হাসিনা একাই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেননি। তার পরিবারের যারা যুক্তরাজ্যে থাকেন তারাও বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।
গত নভেম্বরের শেষের দিকে শেখ হাসিনার ভাগ্নি লন্ডনের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী মানবাধিকার বিশেষ করে গুম হওয়া ব্যারিস্টার আরমানের বিষয়ে প্রশ্ন করায় একই চ্যানেলের সাংবাদিক ডেইজির সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একাধিকবার বিবৃতি দিয়েছে আরমানের বিষয়ে। কিন্তু, এত বড় আলোচিত একটি ঘটনার কথা জানেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী। এমনকি ব্যারিস্টার আরমানকে চিনেনও না বলে জানিয়েছেন।
ইরানে আটক লন্ডনের নাগরিক নাজানিন আক্তারের মুক্তির জন্য ক্যাম্পেইন করছিলেন টিউলিপ। এসময় চ্যানেল৪‘র সাংবাদিক ডেইজি তাকে বাংলাদেশে গুম হওয়া জামায়াত নেতার ছেলে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করতে পারেন কি না এমন প্রশ্ন করতেই টিউলিপ জানান বাংলাদেশের এ ঘটনা সম্পর্কে তার জানা নেই। এরপর সাংবাদিক ডেইজি ইসলামিক দলের শব্দটি উচ্চারণ করতেই টিউলিপ বললেন মাইকেল জেকশন? তারপর সাংবাদিক ডেইজি আরমানের নাম উচ্চারণ করার পর টিউলিপ বললেন, আমি ব্রিটিশ এমপি। আমার জন্ম লন্ডনে। বাংলাদেশের এ ঘটনা জানি না। এমনকি ওই সাংবাদিকের ওপর তিনি চটে গিয়ে সতর্কতার সঙ্গে প্রশ্ন করার জন্যও বলেন তাকে।
ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেইজি ও টিউলিপ সিদ্দিকীর এই কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এনিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। বেকায়দা দেখে দুইদিন পর টিউলিপ গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে চ্যানেল৪ এর সাংবাদিকের কাছে ক্ষমা চান।