লিখেছেন: ব্লগার শাকিল তালুকদার
শুনতে চাঞ্চল্যকর হলেও এমনি কথা শোনা যাচ্ছে এখন। বিষয়টির গুঞ্জন চলছে অনেকদিন থেকেই। তবে গতকাল বি এল কলেজের ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্য অনলাইনে ভাইরাল হওয়ার পর এটি এখন সবার মুখে মুখে। ঐ নেতা বলেন বর্তমান সভাপতি সোহাগ কেন সাবেক হয়েছে জানো? সে কোটা আন্দোলন দমন করতে পারে নি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতে এই আন্দোলনের পক্ষে ছাত্রলীগ নেতাদের ‘ইন্ধন’ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ইন্ধনের পেছনে মূল কারণ ছিল, শিক্ষাঙ্গন অশান্ত হয়ে গেছে এই মুহূর্তে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব আনাটা ঠিক হবে না—এমন একটি বিষয় সামনে আনার চেষ্টা হয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ জানতে পেরেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন এখন আওয়ামীলীগের গলার কাঁটা। তারা না পারছে গিলতে, না পারছে উগড়ে দিতে। এখন কোটা বাতিল হোক বা না হোক বা সংস্কার হোক যাই হোক না কেন তাতে আওয়ামীলীগের কোন লাভ নেই। শেখ হাসিনা স্বয়ং কলঙ্কিত হয়েছেন এই আন্দোলনের ফলে। এখন যত যাই করা হোক না কেন সেই ইমেজ পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।
হাসিনা ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই কারণে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে দেরি করছেন। কাউন্সিল হওয়ার পর প্রায় দুই মাস পার হতে চললো। কিন্তু এখনো ছাত্রলীগের নেতা সিলেকশন করেনি শেখ হাসিনা। নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস বাকী। এর মধ্যে নতুন নেতৃত্ব আনা চ্যালেঞ্জের। তারপরও হাসিনা কোন রিস্ক নিতে রাজি নয়। তিনি তাই এবার নির্বাচন নয়, মনোনয়ন দিবেন ছাত্রলীগের সভাপতিকে।
ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে ‘সিন্ডিকেটের’ কথা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচিত হয়েছে। এর আগে ছাত্রলীগের এই কথিত সিন্ডিকেট কোনো না কোনোভাবে ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছেন। এতে ছাত্রলীগে মনে রাখার মতো কোনো নেতা তৈরি হননি। ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর সেই নেতা সামনে দলের অন্য কোনো ভালো অবস্থানে গেছেন, দু-একটি ছাড়া এমন কোনো দৃষ্টান্ত গত ১০ বছরে ঘটেনি। অথচ ছাত্রলীগ থেকে নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার কথা। এই নেতৃত্ব আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নেওয়ার কথা, কিন্তু সেটা হয়নি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের দুর্বল নেতৃত্ব এবং নিজেদের ‘উন্নয়নে’ সব সময় মনোযোগী হওয়া—এসব বিষয় দায়ী। প্রত্যেক ছাত্রনেতা কোনো না কোনো কেন্দ্রীয় নেতার ‘ম্যান’ হয়ে কাজ করেন। ফলে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে থেকে দলের জন্য কাজ করার মতো নেতা গড়ে ওঠেনি। রাজনৈতিক চর্চাটাও গড়ে ওঠেনি।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের ইতিহাসে পদে থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের কোনো নেতাকে দলের কর্মীরা ‘ধাওয়া’ দেওয়ার কথা কখনো ভাবতেও পারেনি। কিন্তু সদ্য সাবেক কমিটির ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতে এই আন্দোলনের পক্ষে ছাত্রলীগ নেতাদের ‘ইন্ধন’ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ইন্ধনের পেছনে মূল কারণ ছিল, শিক্ষাঙ্গন অশান্ত হয়ে গেছে এই মুহূর্তে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব আনাটা ঠিক হবে না—এমন একটি বিষয় সামনে আনার চেষ্টা হয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ জানতে পেরেছে। এসব কারণে জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাসেরও কম সময় হাতে থাকার পরও ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা বলছেন, সদ্য সাবেক কমিটির বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আলোচিত হয়েছে। নেতা নির্বাচিত হওয়ার দিনও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থেকেছেন। দলের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ হলের বাইরে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনিও ততটা ভালো অবস্থানে ছিলেন না। সেখান থেকে পরবর্তী সময়ে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিলাসী জীবন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ ছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভায় নেতা-কর্মীরা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছিলেন। এসব প্রশ্নের বেশির ভাগই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন নির্মাণকাজের ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ। সেই টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারার অভিযোগ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিলাসী জীবনের উৎস এবং দলের নেতা-কর্মীদের কথা না শোনার ব্যাখ্যা—সেদিন এসব জানতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনেক নেতা।
এর আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সম্মেলন দিতে না দিতেই লন্ডনে গিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করেছেন। যদিও তিনি বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন। এসব বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ভাবছে, যার কারণে নেতৃত্ব নির্বাচনে এবার এত কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
সূত্র: ব্লগ একাত্তর