চলতি বছরের ৫ জুন সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বিশেষ প্রশিক্ষিত সেনারা কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে উৎখাত করতে তার প্রাসাদে হামলার চেষ্টা করেছিল।
তারা ক্যু (অভ্যুত্থান) ঘটিয়ে শেখ তামিমকে ক্ষমতাচ্যুত করে লন্ডন নিবাসী তার ভাতিজাকে ক্ষমতায় বসাতে চেষ্টা করেছিল।
কিন্তু ওই অভ্যুত্থানের কয়েক মুহূর্ত আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তৈয়ব এরদোগানের নির্দেশে তুর্কি সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ দল কাতারের আমিরের প্রাসাদের চারপাশে অবস্থান নিয়ে সৌদি ও ইউএই’র অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দেয়।
গত জুন মাসে সৌদির নেতৃত্বে মিশর, ইউএই, বাহরাইন ও ইয়েমেন সন্ত্রাসে মদদ দেয়ার অভিযোগ তুলে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।
এছাড়া এসব দেশ কাতারের বিরুদ্ধে স্থল, নৌ ও আকাশ পথে অবরোধ আরোপ করে।
কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, আরব উপসাগরের সঙ্কট শুধু অবরোধেই সীমিত ছিল না। বরং সৌদি আরব ও ইউএই কাতারের আমির শেখ তামিমকে ক্ষমতাচ্যুত করে তার ভাতিজাকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করেছিল।
তবে তুর্কি সেনারা শেখ তামিমের প্রাসাদকে চারদিক থেকে রক্ষা করেছিল এবং অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিল।
তুর্কি দৈনিক ‘ইয়েনি শাফাক’র কলাম লেখক মেহমেত আসেত ৫ জুনের এই ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার বিষয়টি বিস্তারিত তুল ধরেছেন তুর্কি ম্যাগাজিন ‘গার্সেক হায়াত’-এ।
তিনি বলেন, ৫ জুন শেখ তামিমের প্রাসাদ ঘিরে বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি তুরস্ক এই বিশেষ ভূমিকা পালন না করতো তাহলে সবকিছু অন্যরকম হতো এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হতো।
তুর্কি মন্ত্রিসভার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে সূত্র উল্লেখ করে তার বরাতে মেহমেত বলেন, তারা (সৌদি) যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছিল তারা কাতারের আমিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ৩৫ হাজার কোটি (৩৫০ বিলিয়ন) ডলারের একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল। কিন্তু এরদোগান অনুমোদন করেননি বলে এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ নস্যাৎ হয়ে গেছে।
ওই তুর্কি মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কয়েক দিন পর কাতারের কর্মকর্তারাও সৌদি ও ইউএইর অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়ার বিষয়ে তুর্কি ও এরদোগানের বীরোচিত ভূমিকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানান মেহমেত।
সেই আলোচনার বরাতে তিনি বলেন, ৫ জুন রাতে কাতার সঙ্কট শুরু হয়। ওই সময় তুর্কি সেনা বাহিনীর বাছাইকৃত সদস্যদের একটি বিশেষ ইউনিট কাতারের আমির শেখ তামিমকে অভ্যুত্থান চেষ্টা থেকে হেফাজত করেন।
ওই রাতে সৌদি ও ইউএইর বিশেষ সেনা ইউনিট আকস্মিক হামলা চালিয়ে শেখ তামিমকে উৎখাত করতে তার প্রাসাদের দিকে রওনা করে। তাকে উৎখাত করে তার লন্ডন নিবাসী ভাতিজাকে ক্ষমতায় বসানোই ছিল তাদের লক্ষ্য। কিন্তু কাতারের আমিরের প্রাসাদের চারপাশে তুর্কি সেনা মোতায়েন করায় সৌদি ও ইউএইর সেনারা মাঝপথ থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
সাংবাদিক মেহমেত জানান, কাতারে তুর্কি সেনাবাহিনীর বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত দুইশ’ সেনা রয়েছে। ৫ জানুয়ারি রাতে আঙ্কারা থেকে নির্দেশ পেয়ে তাদের কাতারের আমিরের প্রাসাদ ঘিরে মোতায়েন করা হয়েছিল।
তারা সফলভাবেই ওই রাতে কাতারের আমিরের বিরুদ্ধে বিদেশী অভ্যুত্থান চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছিল এবং শেখ তামিম ও তার প্রাসাদকে সুরক্ষা দিয়েছিল।
ওই রাতে কাতারের আমিরের প্রাসাদ অভিমুখে সৌদি ও ইউএইর বিশেষ প্রশিক্ষিত সেনাদল অভিযানে বেরিয়ে পরেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল প্রাসাদে ঢুকে আমির শেখ তামিমকে আটক ও বন্দি করে অভ্যুত্থান ঘটানো।
কিন্তু তুর্কি সেনারা এর আগেই তৎপর হয়ে যায়। সৌদি ও ইউএই সেনারা প্রাসাদে পৌঁছানোর আগেই সেখানে গিয়ে তুর্কি সেনারা কাতারের রাজপ্রাসাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
মেহমেত দাবি করেছেন, ৫ জুন রাতের অভ্যুত্থান চেষ্টা নস্যাৎ করতে তুর্কি সশস্ত্র বাহিনীর বিমান ও সাঁজোয়া যানও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। তেমন কোনো গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হলেই এসব ব্যবহার করা হতো। কিন্তু তুর্কি সেনা মোতায়েনের খবরেই মাঝপথ থেকে ফিরে যায় সৌদি ও ইউএইর বিশেষ সেনারা।
প্রশ্ন হলো-৫ জুন রাতে কিভাবে সৌদি ও ইউএইর এই অভ্যুত্থান চেষ্টার খবর জানাজানি হলো এবং আগেভাগে তৎপরতা চালিয়ে তুর্কি সেনরা কাতারের আমিরকে রক্ষা করলো?
এ ব্যাপারে তুর্কি কলাম লেখক মেহমেত বলেন, এক টেলিফোন সংলাপের পর এ তৎপরতা চালানো হয়।
তিনি বলেন, সৌদিসহ কিছু আরব রাষ্ট্র ও মিশর হঠাৎ করেই কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে অবরোধ আরোপ করে। এ খবর আঙ্কারায় পৌঁছানোর পরপরই তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান টেলিযোগাযোগ শুরু করেন।
গত ৫ জুনের অবরোধ ঘোষণার পর কাতারের আমিরের সঙ্গে সর্বপ্রথম কথা বলেন এমন কয়েক জনের মধ্যে তুর্কি প্রেসিডেন্টও ছিলেন।
এসময় কাতারের আমির পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তার প্রাসাদ রক্ষা করতে এরদোগানকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। এরপরই আঙ্কারা থেকে তুর্কি সেনাদের কাতারের আমিরের রাজপ্রাসাদের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করার নির্দেশ পাঠানো হয়। এর মধ্য দিয়ে সৌদি ও ইউএইর অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
সূত্র: অনলাইন বাংলা