জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রথমবারের মতো দেয়া বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নবাগত দুর্বৃত্ত’ আখ্যা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।
এ ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে ‘অজ্ঞতাপ্রসূত ও বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্যের জন্য ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে করা ছয় জাতির পরমাণু চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে তার কড়া জবাব দেয়ারও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম বার্ষিক অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট রুহানি।
তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে অজ্ঞতাপূর্ণ, কুৎসিত ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, যা ছিল মিথ্যা তথ্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগে পরিপূর্ণ। এ ধরনের বক্তব্য জাতিসংঘের মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এর আগের দিন মঙ্গলবার সাধারণ পরিষদের ভাষণে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে ‘অস্থিতিশীল কার্যক্রমের জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করেন।
রুহানি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো সম্প্রতি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই ও অর্থায়ন বন্ধের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ইরান তার বিপরীতে রয়েছে।
ট্রাম্প তার বক্তৃতায় ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাক্ষরিত ২০১৫ সালের পরমাণবিক চুক্তিকে আমেরিকার জন্য বিব্রতকর বলে উল্লেখ করেন। তিনি একে আমেরিকার জন্য সবচেয়ে খারাপ চুক্তি বলেও মন্তব্য করেন।
রুহানি বলেন, ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সই হওয়া সমঝোতা বা জেসিপিওএ একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যার প্রতি সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
তিনি আরও বলেছেন, জেসিপিওএ বাতিলের বিষয়ে ইরান কখনো প্রথম দেশ হবে না।
ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেন, কোনো পক্ষ এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করলে ইরান কড়া জবাব দেবে।
রুহানি বলেন, এটি খুবই দুঃখের বিষয় হবে, যদি ট্রাম্পের কারণে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়।
জাতিসংঘে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিসহ ইরানের প্রতিরক্ষা শক্তির বিষয়টি তুলে রুহানি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করে বলেন, ইরানের সামরিক শক্তি কেবল নিজের প্রতিরক্ষার জন্য এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ব্যবহৃত হবে।
ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সমালোচনা করে রুহানি বলেন, তারা নিজেকে শান্তিপ্রিয় দেশ বলে দাবি করছে, তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, ইরান চরমপন্থী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ইরান নিরাপদ ও স্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্য দেখতে চায় এবং সন্ত্রাসবাদ অবসানের জন্য অন্যদের সহযোগিতাকে স্বাগত জানায়।
উল্লেখ্য, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি।
এ চুক্তির ফলে ইরান পরমাণু সমৃদ্ধিকরণ কমায়। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে বেশ কিছু অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে চুক্তিটির সমালোচনা করে আসছেন।
যদিও গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইরান চুক্তি মেনে চলছে। কিন্তু ট্রাম্পের দাবি- ইরান চুক্তির শর্তগুলো মানছে না।
সূত্র: বিবিসি
Discussion about this post