মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগের কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি ওই দেশের সরকার।
গত বছর রাখাইন মুসলিমদের ওপর নৃশংস নির্যাতনে হাজার হাজার মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। অনেকের ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আছে ধর্ষণের অভিযোগ। এমন অবস্থায় তাদের অনেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন বাংলাদেশে।
এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটানোর অভিযোগ আনে জাতিসংঘ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংস নির্যাতনের কাহিনী প্রামাণ্য আকারে উপস্থাপন করে। কিন্তু এমন অপরাধের কথা বেমালুম অস্বীকার করে চলেছে সরকার। অভিযোগ তদন্তের জন্য রাখাইন ইনভেস্টিগেটিভ কমিশন গঠন করা হয়। রোববার কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশের অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট, সাবেক জেনারেল মিন্ট শয়ে বলেন, মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারে অফিস থেকে মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ ও জাতি নির্মূলের অভিযোগ আনা হয়েছে তদন্তে তার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তা অভিযানের নামে সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা নারীদের গণধর্ষণ করে। এ অভিযোগও তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের অক্টোবরে রাখাইনের মংডুতে জঙ্গিরা সীমান্ত রক্ষীদের একটি পোস্টে হামলা চালায়। তাতে বেশ কয়েকজন সীমান্ত রক্ষী নিহত হন। এরপরই রোহিঙ্গা মুসলিমদের এ জন্য দায়ী করে তাদের ওপর সেনাবাহিনী চালায় অকথ্য নির্যাতন। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে, সন্তানের সামনে মাকে ধর্ষণ করে সেনারা। স্ত্রীর সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে স্বামীকে। পুড়িয়ে দেয় গ্রামের পর গ্রাম। এমন ছবি প্রকাশ হয়েছে ইন্টারনেটে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের তদন্ত কমিশন তার রিপোর্টে আইন লঙ্ঘনের মতো কোনো কিছু সেখানে ঘটেছে বলে স্বীকার করছে না।
উল্লেখ্য, এ কমিশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আগেই সংশয় প্রকাশ করেছিল মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো।
এ প্রসঙ্গে, রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভলপমেন্টে প্রোগ্রাম-এর সাধারণ সম্পাদক জমিরউদ্দিন প্রশ্ন করেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী যদি রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন না-ই করে থাকে তবে তারা সেখানে আন্তর্জাতিক তথ্য আনুসন্ধান দলকে যেতে দিচ্ছে না কেন?
তিনি রেডিও তেহরানকে জানান, সেখানে এখনো নির্যাতন চলছে। তাই নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমার সরকারের এ রিপোর্টকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাখাইনকে অচল করে রেখেছে সরকার। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত আছে। নিরপেক্ষ সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ত্রাণকর্মীদের গত ৯ মাস ধরে সেখানে যেতে দেয়া হচ্ছে না।
চলতি সপ্তাহে ওআইসি মহাসচিব বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন করে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নির্মম নির্যাতন ও সেখান থেকে তাদের পালিয়ে আসার করুণ বিবরণ শোনেন। তিনি ওআইসিভুক্ত দেশসহ সকল দেশকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা ও তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপরে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র: পার্সটুডে
Discussion about this post