জনপ্রিয়তার আরও একটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। সংবিধান সংশোধন বিষয়ক গণভোটে তার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ব্যালটে ভোট দিয়েছে দেশটির অধিকাংশ জনগন। রোববার অনুষ্ঠিত গণভোটে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব।
মার্কিন টিভি চ্যানেল সিএনএন জানিয়েছেন, গণভোটে বিজয়ের পর তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম দেশটির জনগণকে এই ‘সাহসী সিদ্ধান্তের’ জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এই বিজয়ের ফলে তুরস্কের প্রায় একশো বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হলো। দেশটি এবার পার্লামেন্টারি শাসন ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল শাসন ব্যবস্থায় প্রবেশ করবে। এর ফলে নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারি হবেন প্রেসিডেন্ট। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়াতে ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতেই এমন পন্থা অবলম্বন করছে দেশটি।
তবে গণভোটে এরদোগানের বিরোধীতাও ছিলো প্রায় সমান হারে। ৪৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ‘না’ ব্যালটে। নির্বাচনে লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। তবে শেষ পর্যন্ত এরদোগানের জনপ্রিয়তা আর যাদুকরী নেতৃত্বেও প্রতিই আস্থা রেখেছে বেশির ভাগ ভোটার। তুর্কিদের স্বনির্ভর জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাড়ানোর যে স্বপ্ন তিনি দেখিয়ে চলছেন তার ওপর যে জনগন আস্থা রাখছে-এই গণভোট তারই প্রমান। গত বছরের ১৫ জুন এরদোগানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর একটি অংশের অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছিল জনগন। এবার আর রাজপথে নয়, ব্যালটের মাধ্যমে এরদোগানের প্রতি আবারো আস্থা প্রকাশ করলো তারা।
কী পরিবর্তন আনতে চান এরদোগান
তুরস্কে গণভোটের ফল যদি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের প্রস্তাবিত সাংবিধানিক পরিবর্তনের পক্ষে যায় তাহলে দেশটির শাসনপদ্ধতিতে মৌলিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হবে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ক্ষমতার ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য তার বিরোধীরা প্রবলভাবে চেষ্টা করেছেন এটা ঠেকানোর জন্য। পার্লামেন্টে এ নিয়ে আলোচনার সময় এমপিদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। কী পরিবর্তনের কথা আছে এ গণভোটের বিষয়বস্তুতে যা নিয়ে এমন বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
প্রথমত, এই সাংবিধানিক পরিবর্তনে তুরস্কের পার্লামেন্টারি পদ্ধতি বদলে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হবেন নির্বাহী প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান এবং রাজনৈতিক দলের সাথেও তার সম্পর্ক বজায় থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা বিলুপ্ত করে দুই বা তিনজন ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ তৈরি করা হবে।
প্রেসিডেন্ট হাতে পাবেন নতুন ক্ষমতা। তিনি মন্ত্রীদের নিয়োগ দেবেন, বাজেট তৈরি করবেন, সিনিয়র বিচারপতিদের বেশির ভাগকে নিয়োগও দেবেন তিনিই এবং ডিক্রি জারি করে কিছু বিষয়ে আইনও করতে পারবেন।
প্রেসিডেন্ট একাই জরুরি অবস্থা জারি করতে এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারবেন। পার্লামেন্ট আর মন্ত্রীদের ব্যাপারে তদন্ত করতে পারবে না। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোটে এমপিরা প্রেসিডেন্টকে ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন। প্রেসিডেন্টের বিচারের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ এমপির সমর্থন লাগবে।
এরদোগানের বিরোধীরা প্রচারাভিযানে বলেছেন, এমপিদের সংখ্যা ৫৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ করা হবে। প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন একই দিনে হবে। প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
এরদোগান বলছেন, সরকার পদ্ধতির এ পরিবর্তন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া দ্রুততর করবে। কিন্তু তার সমালোচকেরা অভিযোগ করছেন, এতে এরদোগানের স্বৈরশাসন কায়েম হবে, গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বাজবে। তুরস্কের জনগণ কী রায় দেয় সেটি দেখার বিষয়।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post