দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ এখন একটি হিন্দুত্ববাদি রাষ্ট্র, এখানে চলছে শিবসেনার শাসন। ভারতের হিন্দুত্ববাদি শাসকদের প্রতিনিধি হিসাবে একজন এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে আছেন। এ অবস্থায় দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান নিজ দেশেই নিরাপত্তাহীন। এই দেশ এখন ভারতের একটি উপনিবেশ। এখানে ভিন্নমত প্রকাশ তো দূরে থাক, বেঁচে থাকার অধিকারটুকু পর্যন্ত নেই। এ্ই অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য তিনি জনগণকে রাস্তায় নামার আহবান জানিয়ে বলেন, দেশের আপামর জনসাধারণ যদি ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান হয়ে শহীদ হওয়ার সংকল্প নিয়ে রাস্তায় নামেন, তাহলে শুধু তাবেদার সরকারই নয় , দিল্লীও উড়ে যাবে। তিনি বলে, জাতীয়তাবাদী শক্তি যদি মনে করে অন্য কেউ এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবে , তাহলে তা ভুল ধারণা। ক্ষমতায় আসতে হলে জনগনের কাছে যেতে হবে। তাদের নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
শনিবার চট্টগ্রাম ইনজিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সেমিনার কক্ষে পিপলস মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেসী আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদী বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন কারা নির্যাতিত এই সম্পাদক। অনুষ্ঠানে বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহারসহ বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমান শাসকদের ফ্যাসিবাদী সরকার আখ্যায়িত করে মাহমুদুর রহমান বলেন , এই সরকারের আমলে দেশের স্বাধীনতা অনেক আগেই চলে গেছে, এখন যেতে বসেছে নিরাপত্তা। এ প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন ইংরেজি দৈনিক দ্য ইনডিপেনডেন্ট এর একটি সংবাদের সূত্র ধরে তিনি বলেন, সরকার ভারতের সঙ্গে একটি সামরিক চুক্তি করতে যাচ্ছে যাকে ওই সংবাদপত্রে এমওইউ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে ওই চুক্তিসহ আরো কিছু চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এসব চুক্তি হলে দেশের মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা এখনো যতটুকু ছিটেফোঁটা অবশিষ্ট আছে তাও শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ওই চুক্তি নিয়ে আমাদের দেশে যেন কোন প্রতিক্রিয়া না হয়, তা সামাল দিতেই ভারতের সেনা প্রধান বাংলাদেশে এসেছেন।
‘আমি ২০০৮ সালেই আমার দেশ পত্রিকায় এক কলামে লিখেছিলাম বাংলাদেশে নবরূপে বাকশালের আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে। কন্যার বাকশাল, পিতার বাকশালের চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেছিলাম।আমার আশংকাই আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। এরপর বলেছিলাম মনমোহন সিং যেদিন বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন, সেটাই ছিল আমাদের স্বাধীনতার শেষ দিন। তাও সত্যে পরিণত হয়েছে। বলেছিলাম শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনান যায়। ফ্যাসিবাদ আজ দেশের মানুষের ঘরে ঘরে গুম খুনের রূপ ধারণ করে প্রবেশ করেছে। এদেশকে গুম রাজ্য বলেছিলাম। দেশের মানুষ আজ বুঝতে পারছেন গুম খুন কতটা চেপে বসেছে দেশে’।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে পারে না । আমাদের দেশেও নেই। মিডিয়া সত্য কথা বলতে পারছে না, কারন তারা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে। দেশে এখন প্রেস নোট নির্ভর সাংবাদিকতা চলছে। প্রেস নোটের বাইরে কিছু লেখা হচ্ছে না। জঙ্গীবাদ নিয়ে রাষ্ট্রীয় গল্পের নেপথ্যে আসলে কি রয়েছে, তা বের করতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নেই। র্যাব পুলিশ যা বলছে, তাই ছাপানো হচ্ছে। সত্য মিথ্যা যাচাই করা হচ্ছে না।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি যখন গুম-খুন নিয়ে কথা বলেছিলাম,তখন যদি এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা যেতো, তাহলে দেশের আজ এ অবস্থা হতো না। সরকার গুম-খুনের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, এর জন্য জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ৪৫ বছর পর যদি যুদ্ধাপরাধের নামে বিচার হতে পারে, এখন যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করছেন , কেয়ামতের আগেরদিন হলেও এর বিচার হবে। আল্লাহ কখনো জালেমকে দীর্ঘদিন জুলুম করার অধিকার দেন না। জালিমের পতন অবশ্যম্ভাবী। তার জন্য দেশের মানুষকেও ভূমিকরা রাখতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে,’।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাঙালি শব্দের মালিকানা দাবি করছে। এই শব্দটি এসেছে মুসলমানদের কাছ থেকে, মুসলিম সভ্যতা থেকে। ১৩০০ শতকে মুসলিম শাসক শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ তার সাম্রাজ্যের নাম দিয়েছিলেন সুলতানী বাংলা।
তিনি বলেন, মুসলিম শাসকদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ১৫০০ শতকে হিন্দুত্ববাদি রাজ্যের উত্থান হয়েছিল। তার নাম ছিল গণেশ রাজ্য। তিন বছর স্থায়ী হওয়ার পর সেই রাজ্যের পতন ঘটে। আমাদের দেশে এখন আবারও উত্থান ঘটেছে সেই গণেষ রজ্যের। এটিও দীর্ঘদিন স্থায়ী হবে না। তবে তার জন্য আমাদের ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তি যদি মনে করে অন্য কেউ এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবে , তাহলে তা ভুল ধারণা। ক্ষমতায় আসতে হলে জনগনের কাছে যেতে হবে। তাদের নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দিলে ফ্যাসিবাদী শক্তি টিকে থাকতে পারবে না। সেই আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বিশিষ্ট কবি ও সমাজ চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেছেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসন চলছে। এই ফ্যাসিবাদী শাসনে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন। ফ্যাসিবাদ থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারলে প্রতিদিনিই গুম-খুনের শিকার হতে হবে দেশের মানুষকে।
সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে দেশকে হিন্দুত্ববাদের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা ১৯৪৭ সালেই এ দেশ থেকে হিন্দুত্ববাদকে বিদায় দিয়েছি। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম হিন্দুত্ববাদের সাথে থাকবো না। অথচ এখন চেষ্টা চলছে এদেশে আবার ভারতের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার। আর সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে দেশে একের পর এক জঙ্গী আস্তানা সাজিয়ে দেশকে একটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, তিন মাসের শিশুকে জঙ্গি সাজিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। আমি ওই শিশুদের ছিন্নভিন্ন দেহে দেশের লক্ষ লক্ষ শিশুর চেহারা দেখতে পাচ্ছি। ‘এসব হত্যার জবাবদিহি কে নেবে। বিচার বিভাগ। সেটা দেশে নাই। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের হিংস্র দাঁত দেখা যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের প্রথম লক্ষণ হল বিচার ব্যবস্থা কাজ করে না। মত প্রকাশের অধিকার থাকে না। নাগরিকদের আইনের সুরক্ষা পওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু তা দেবে কে, বলেন এই সমাজ-চিন্তাবিদ।
তিনি বলেন, হিটলার, মুসোলিনীর চেয়েও শক্তিশালী ফ্যাসিবাদ আমাদের দেশে কায়েম হয়েছে। হিটলার নিজেই অত্যাচারের যন্ত্র তৈরি করেছিল। সেটা ছিল তার প্রশাসন। কিন্তু আমাদের এখানে নির্যাতনের নিজস্ব হাতিয়ারকেও যথেষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে না। নতুন হাতিয়ার আনতে এখন দিল্লী ছুটছি আমরা।
অ্যাব চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মো. জানে আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম নগর বএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, প্রকৌশলি রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, প্রকৌশলি আবু সুফিয়ান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, অধ্যাপক নসরুল কদির, প্রকৌশলি আফজাল হোসেন সবুজ, এডভোকেট এনামুল হক, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহিলা দল নেত্রী মনোয়ারা বেগম মণি।
আলোচনা সভা শেষে মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে এক দল প্রতিনিধি বৃহস্পতিবার পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর লাশ পাওয়া ছাত্র নেতা নুরুলের বাড়িতে যান। সেখানে তারা পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানান। এসময় মাহমুদুর রহমান নুরুলের ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এই নুরুলের সন্তানদের পড়া লেখার দায়িত্ব তিনি নিয়ে নিলেন। তাদের যাবতীয় খরচ তিনি বহন করবেন।
সূত্র: rbn24
Discussion about this post