অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক:
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের সময়ও খুব বেশি বাকী নাই। তাই আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখনই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ-উত্তেজনা শুরু হয়ে গেছে। বিগত ১৫ বছর যাবৎ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এবার কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে বড় ধরণের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির সাথে রয়েছে আরেক শক্তিশালি সংগঠন জামায়াতে ইসলামী। শেখ হাসিনার অধীনে তারা আগামী নির্বাচনে যাবে না বলেও পরিস্কার করে বলে দিয়েছে।
অপর দিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও নির্বাচনের সময় কারো কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না বলে পরিস্কার জানিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে বলেও তারা জানিয়ে দিয়েছে। আর কিভাবে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে সেই ছক তারা আরও বহু আগেই করে ফেলেছে। এপ্রিল মাস পর্যন্ত তারা তাদের ছক অনুযায়ীই এগোচ্ছিল। নির্বাচনের নামে একটা নাটক করে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যা দরকার ছিল সবই তারা করেছে।
কিন্তু বাংলাদেশের জন্য আমেরিকার নতুন ভিসা নীতি যেন হাসিনার সব পরিকল্পনাকে উলট-পালট করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার সাজানো পরিকল্পনাগুলো এক ভিসা নীতি দিয়ে জ্বালিয়ে ছারখার করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। শেখ হাসিনার চোখে এখন শুধুই অন্ধকার।
বিগত ১৪ বছরে শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বর্ণনা আর নতুন করে দেয়ার দরকার নাই। দুর্নীতি, লুটপাট, শেয়ারবাজার লুট, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ডাকাতি, কথিত উন্নয়নের নামে বিদেশে অর্থপাচার, খুন, গুম, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে শেখ হাসিনা বিশ্ব রেকর্ড করেছে। বিশেষ করে কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াতের নিরপরাধ শীর্ষনেতাদেরকে ফাসিতে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে শেখ হাসিনা। এসব কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে কোনোভাবেই ক্ষমতা ছাড়া সম্ভব না। ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়া মানেই শেখ হাসিনা তার দলসহ জনগণের রোষানলে পড়া।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় আসতে দিবে না এটা শেখ হাসিনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। শেখ হাসিনা কোনভাবেই বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দিবে না। এজন্য যা যা করা দরকার হাসিনা সবই করতে প্রস্তুত আছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হাসিনাকে জানিয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কোনো ভোট পাবে না। সবাই জামানত হারাবে। আর বিএনপি যদি সরকার গঠন করে তাহলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকবে না। বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগের প্রতি বেশি ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার সাথে সাথেই সাধারণ মানুষ তাদেরকে পিটিয়ে দেশ ছাড়া করবে।
জানা গেছে, মার্কিন ভিসা নীতির পর হাসিনার অবস্থান অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। তবে বিএনপির ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসতে না পারলেও বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় আসতে দিবে না। আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো বড় ধরণের ঝামেলা করে তাহলে দেশে একটা গন্ডগোল লাগিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিবে হাসিনা। আর সেনাবাহিনীকে শর্ত দেয়া থাকবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর যাতে দমন পীড়ন না হয়। এবং আওয়ামী লীগের যারা দেশ থেকে চলে যেতে চাইবে তাদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।
এমনকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও এখন এমন মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টা প্রকাশ না করলেও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও এখন এসব বিষয়ে কথা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে তারা ক্ষমতা সেনাবাহিনীকে দিবে, কিন্তু এমন নির্বাচন হতে দিবে না যেটাতে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে।
Discussion about this post