ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মহীনতা এক কথা নয়। তবে মোট জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সুদূরপ্রসারী ঠাণ্ডা মাথার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
হজরত মুহাম্মদ সা:কে অমুসলিম বিভিন্ন মনীষী অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করেছেন যা অত্যন্ত উচ্চস্তরে মূল্যায়ন বটে, অন্য কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে আজ পর্যন্ত করা হয়নি, যা মুসলমান কথিত প্রগতিশীল নামান্তরে নাস্তিকরা উপলব্ধি করতে পারেননি। যার কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো :
ডা: হুগো মারকাস
ডা: হুগো মারকাস বলেছেন- ‘মুহাম্মদ সা: একজন সৈনিক পুরুষ, একজন বীরপুরুষ যতদিন শক্ররা তার সৎকর্মে বাধা দিয়েছে ও অসৎকর্মে লিপ্ত রয়েছে, ততদিন অসি ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু যুদ্ধে বিজয় লাভ ও শত্রু নিরস্ত্র হওয়ার পর তার মনের গতি পরিবর্তন হয়েছে। পরাজিত প্রতিপক্ষকে তখন আর শত্রু মনে করেননি; তাকে মার্জনা করে সাদরে গ্রহণ করেছেন। ফলত স্বয়ং বিজয়ী বিজিতের বন্ধুত্ব লাভের জন্য আগ্রহান্বিত হয়েছে। এই হলো মুহাম্মদ সা:-এর আচরণ, উদারতা ও বীরোচিত ব্যবহার। পরবর্তীকালে ও মধ্যযুগে ইউরোপ বীরত্বকে অতীব সম্মানের চোখে নিরীক্ষণ করেছে কিন্তু এ বীরত্বের জন্মস্থান আরব দেশ ও মুহাম্মদ সা:-এর সর্বপ্রথম প্রদর্শক।’
অধ্যাপক সি এইচ বেকার
অধ্যাপক সিএইচ বেকার তার ‘ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ড ইসলাম’ (লন্ডন-১৯০৯) গ্রন্থে বলেছেন, ‘মুহাম্মদ ও তার সমসাময়িক সহকর্মী ও অনুসারীরা যেসব কর্মপন্থা গ্রহণ করেছিলেন, তাতে খ্রিষ্টবাদবিরোধী কোনো কাজ ছিল না। মুহাম্মদ কেমন করে একজন এতিম বালক হয়েও আল-আমিন বা সবার বিশ্বাসী হতে পেরেছিলেন, অমুসলিমরা তা যত বেশি জানবেন তাতে তাদেরই তত বেশি মঙ্গল হবে।’
লওন ভ্যাগলিয়ারী
ইতালির প্রখ্যাত সাহিত্যিক ড. লওন ভ্যাগলিয়ারী তার রচিত ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে একটি বইতে বলেছেন, ‘ইসলাম, কুরআন ও মুহাম্মদ এক শাশ্বত ও অবিভাজ্য শক্তি। মুহাম্মদের কাছে কুরআনের মাধ্যমেই ইসলাম অবতীর্ণ হয়েছিল। মুহাম্মদ সেই ইসলামকে বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছে দিয়ে গেছেন। মুহাম্মদ বিশ্বমানবতার সুন্দর জীবনধারার পথ নির্দেশক, একজন কালজয়ী মহামানব, এ প্রসঙ্গে কারো কোনো দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই।’
লা কোঁথে ডি বোলভিলার
লা কোঁথে ডি বোলভিলার তার ‘লা খি দ্য মোহামেড’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘মুহাম্মদ যে ধর্মীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, তা তাঁর সাথীদের মন-মেজাজ ও দেশের প্রচলিত রীতিনীতির ক্ষেত্রে শুধু উপযুক্তই ছিল না, বরং তা ছিল এসবেরও অনেক ঊর্ধ্বে। তাঁর এ আদর্শ মানবিক প্রবণতার সাথে এমন সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, মাত্র ৪০ বছরের কম সময়ের মধ্যে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ তাঁর ধর্মে আশ্রয় গ্রহণ করে। সুতরাং এটা এমন একটি মতাদর্শ যার কথা শুনতে হয় এবং যা স্বাভাবিকভাবে হৃদয়ে প্রবেশ করে থাকে।’
আর্থার গিলম্যান
আর্থার গিলম্যান বলেছেন, ‘মক্কা বিজয় মুহাম্মদের প্রশংসনীয় চরিত্রের এক মহৎ দৃষ্টান্ত। মক্কাবাসীর অতীত দুর্ব্যবহার তাঁকে স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজিত করা উচিত ছিল? কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীকে সব রক্তপাত থেকে বিরত রাখেন। মহাবিজয়রূপ প্রদর্শনের জন্য তিনি আল্লাহর কাছে বিনম্র মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মাত্র ১০ অথবা ১২ ব্যক্তিকে তাদের অতীতের জঘন্য অপরাধের জন্য দণ্ড দেয়া হয়। এর মধ্যে চারজন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ছিল। অন্যান্য বিজেতার তুলনায় এটা একান্ত মানবিক। ১০৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জেরুসালেম অধিকারকালে খ্রিষ্টান ক্রসেডাররা ৭০ হাজার মুসলিম নারী, শিশু ও অসহায়দের নির্মমভাবে হত্যা করে।’
মুনিটিড
অমুসলিম বুদ্ধিজীবীদের একটি দল অত্যন্ত ধর্মীয় গোঁড়ামির বশবর্তী হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়। তাদের এহেন হতাশাব্যঞ্জক কর্মের রহস্য উদঘাটন করে অপর একজন বিখ্যাত, প্রাচ্যের আদর্শে বিশ্বাসী অমুসলিম পণ্ডিত মনীষী লিখেছেন, ‘কিছু ইউরোপিয়ান অমুসলিম পণ্ডিত চিন্তা ও বুদ্ধির সঙ্কীর্ণতা, ধৃষ্টতা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে মুহাম্মদ সা:-এর উচ্চমর্যাদা পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হননি। কারণ বিশ্বের যত সংস্কারক এসেছেন এবং যাদের অবস্থা বিস্তারিত জানা গেছে, তাদের সবার মধ্যে মুহাম্মদ সা: অতুলনীয়। মুহাম্মদ সা: চরিত্র সংশোধন, মানবসমাজের সংস্কার ও পবিত্রতার যে বিশাল খেদমত করেছেন সে জন্য আল্লাহর রাসূলকে মানবতার সবচেয়ে বড় হিতাকাক্সক্ষী মনে করা উচিত।’
রেভারেন্ড-ডবলিউ স্টিফেন
রেভারেন্ড-ডবলিউ স্টিফেন বলেছেন, ‘নবী মুহাম্মদ সা: মূর্তিপূজার এক জগাখিচুড়ি দর্শনের স্থলে নির্ভেজাল একত্ববাদের আকিদা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মানুষের চারিত্রিক মান উন্নত, সাংস্কৃতিক জীবনকে বিকশিত এবং একটি সুসমন্বিত ও যুক্তিভিত্তিক উপাসনা রীতি প্রবর্তন করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি এ আকিদা ও ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে আবর্জনার মতো ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভয়ঙ্কর অসভ্য ও উচ্ছৃঙ্খল গোত্রগুলোকে একসূত্রে গেঁথে এক শক্তিশালী দলে পরিণত করেন। তিনি আরবে প্রচলিত অনেক ঘৃণ্য রেওয়াজ ও প্রথার ভিত্তিমূলে চরম আঘাত হানেন এবং লাগামহীন যৌনচর্চার স্থলে একাধিক বিয়ের এক সতর্ক ও বিধিবদ্ধ রীতি প্রবর্তন করেন। কন্যা হত্যার বর্বর নিয়মকে সমূলে উচ্ছেদ করেছেন তিনি।’
জর্জ স্টিফেনসন
জর্জ স্টিফেনসন বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা:-এর ব্যক্তিত্ব স্বীয় সম্প্রদায়ের জন্য প্রভ‚ত কল্যাণ বয়ে আনে। তিনি বিভিন্ন দেবদেবীর স্থলে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার শিক্ষা দেন। দূষণীয় মন্ত্র রীতি-নীতি ও প্রথার মূলোৎপাটন করেন। যখনই ইসলাম বহির্বিশ্বে পা বাড়াতে লাগল তখন থেকে অসংখ্য জংলি সম্প্রদায় ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে ইসলামের উত্তরাধিকার হয়ে চলল। ইসলাম বনি আদমের জন্য বরকত, অন্ধকার থেকে আলো এবং শয়তান থেকে আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়ার মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়ে এসেছে।’
নেপোলিয়ান বোনাপার্ট
দিগি¦জয়ী সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা: মূলত মহান নেতা ছিলেন, তিনি আরববাসীকে সবক শিখিয়ে তাদের পারস্পরিক ঝগড়া ও মতবিরোধ নিরসন করেছেন। স্বল্প সময়ে তাঁর অনুসারীরা অর্ধ পৃথিবী বিজয় করেছেন। মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে আরবের বেশির ভাগ মানুষ মিথ্যা দেবতা ও ভ‚তপূজা ছেড়ে দিয়ে মূর্তিকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। এ বিস্ময়কর অবদান শুধু মুহাম্মদ সা:-এর শিক্ষা মান্য করার কারণে সম্ভব হয়েছে আর তাও মাত্র ১৫ বছরে।’
অধ্যাপক ম্যাক্সমুলার
অধ্যাপক ম্যাক্সমুলার আর্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্ধভক্ত। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সত্য ও ন্যায়ের উদ্দেশ্যে ও লোকের হিতার্থে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি যে, সত্যের মধ্যেই ঈশ্বরের ভাব ধরতে পেরেছিলেন এতেই বোঝা যায় তিনি একজন ধর্মগুরু।’
অধ্যাপক স্নোক
অধ্যাপক স্নোক ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড আপ টুডে’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, ‘সমতার ভিত্তিতে মানব জাতিগুলোর মিলন সাধনা করতে ইসলামই সবচেয়ে বেশি কৃতকার্য হয়েছে। কারণ, মুহাম্মদের ধর্মের সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব অনুসারে প্রতিষ্ঠিত জাতিসঙ্ঘই মানবকুলের এমন এক মহামিলন ঘটাতে পারে, যা দেখে অন্যান্য ধর্মের লোকেরা লজ্জাবোধ করবে।’
স্যার আরনল্ড টয়েনবি
স্যার আরনল্ড টয়েনবি ‘সিভিলাইজেশন অন ট্রায়াল’ শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন, ‘মুহাম্মদ ইসলামের মাধ্যমে মানুষের বর্ণ, বংশ ও শ্রেণীগত বিশিষ্টতা সম্পূর্ণরূপে খতম করে দিয়েছেন। কোনো ধর্মই এর চেয়ে বড় সাফল্য লাভ করতে পারেনি, যে সাফল্য মুহাম্মদের ভাগ্যে জুটেছে।’
এ ব্লাইডন
এ ব্লাইডন তার ‘ক্রিশ্চিয়ানিটি, ইসলাম অ্যান্ড দ্য নিগ্রো রেইস’ (১৯৬৯) নামক গ্রন্থে বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা: এমন সাম্য ও গণতন্ত্র জন্ম দিয়েছেন, যা এর আগে পৃথিবীতে ছিল না। তিনি ঘুমন্ত মানুষকে সজাগ করেছেন। মানব জাগরণের সে ধ্বনি আজো পৃথিবীতে প্রতিটি দেশেই প্রতিধ্বনিত হতে শোনা যায়। মুহাম্মদ সা: পদদলিত ক্রীতদাসদের মালিক বানিয়ে দিয়েছেন।’
অধ্যাপক অলিভার জে থেচার
অধ্যাপক অলিভার তার ‘এ জেনারেল হিস্ট্রি অব ইউরোপ’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘মুহাম্মদ আরবদেরকে একটি জাতিতে পরিণত করে তাদের ইতিহাসের আওতাধীনে আনেন। তাদের ওপর তার শিক্ষাগত প্রভাব এমনই ছিল যে, আরবরা প্রায় ৩০০ বছর বিশ্ব-সভ্যতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।’
প্রফেসর সাধু টি এল বাস্বনী
প্রফেসর সাধু টি এল বাস্বনী বলেছেন, ‘দুনিয়ার অন্যতম মহান বীর হিসেবে মুহাম্মদকে অভিবাদন জানাই। মুহাম্মদ এক বিশ্বশক্তি, মানবজাতির উন্নয়নে এক মহানুভব শক্তি।’
অন্যতম ইসলামী চিন্তাবিদ শায়খুল উবুদিয়া ইমাম সাইয়েদ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুহু আল-হোসাইনী প্রণীত ‘জগৎ গুরু মুহাম্মদ সা:’ খণ্ড বই থেকে হজরত মুহাম্মদ সা: সম্পর্কে ওই তথ্য এখানে উল্লেখ করা হলো। মূল লেখকের প্রতি রইল অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।
লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)
E-mail: [email protected]
Discussion about this post