হাসান রূহী
শুনেছি আপনি মদীনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালাবেন। শুনেছি জান্নাতে নাকি আপনার ভাগ আছে। গতকাল তো আরও এক দারুন খবর শুনেছি। আপনি নাকি খলিফা ওমর-উসমান রা: এর মত দেশ চালাচ্ছেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে নাকি পৌঁছে যাচ্ছে আপনার সেবা। তাই নাকি আপনাকে হযরত বলে এখন থেকে সম্বোধন করতে হবে।
না হয় আপনাকে হযরত বললাম। মানবতার জননী বললাম। দেশরত্ন কিংবা জননেত্রী বলতে বললেও বলবো। আপত্তি করবো না। সব কিছু মেনে নিয়ে শুধু একটা দাবি করবো। নিছক রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে যাদের আপনার বাহিনীর সদস্যরা গুম করে রেখেছে, তাদের মুক্তি দিন হযরত।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্র ওয়ালী উল্লাহ ও আল মুকাদ্দাসকে গুম করা হয়েছে আজ আট বছর অতিক্রান্ত হলো। কিন্তু আজও পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। ওদের যদি কোনো অপরাধ থাকে তবে আপনার আদালতেই তাদের সোপর্দ করতে বলুন। প্রয়োজনে সিনহা বাবু কিংবা কালা মানিকের মত পা চাটা কোনো বিচারককে দিয়ে ওদের সে গুরুতর অপরাধের বিচার করান। কিন্তু দোহাই লাগে হযরত, আর ওদের গুম করে রাখবেন না।
আপনার হুইপ সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, আপনি নাকি প্রতিটি ঘরের খোঁজ নিচ্ছেন। দয়া করে গুম করে রাখা এই মানুষগুলোর পরিবারের খবর নিন হযরত। জানার চেষ্টা করুন কিভাবে কাটছে ওদের পরিবারের সদস্যদের দিন! কিভাবে ওরা বেঁচে আছে একটু খোঁজ নিন।
আপনি তো কথায় কথায় প্রায়ই বলে থাকেন, স্বজন হারানোর ব্যাথা নাকি আপনি খুব বেশি বুঝতে পারেন। একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন কি স্বজনহারা এই পরিবারগুলোর? জানেন, ওয়ালী উল্লাহর পিতার আফসোস কি? সে আফসোস করে বলে- ‘যদি আমার আদরের ছেলে মারাও যেত, তার কবরটা অন্তত আমি জিয়ারত করতে পারতাম!’
আপনার বাহিনীর লোকেরা দিন গোনে কিনা জানিনা। কিন্তু যারা গুমের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারগুলো পথের পানে চেয়ে অবিরাম দিন গুনে চলেছে। তাদের বেদনার্ত নিশ্বাসগুলো নিশ্চয়ই আপনি উপলব্ধি করতে পারেন। সেই উপলব্ধির জায়গা থেকে ওদের প্রতি ইনসাফ করুন। ওদেরকে মুক্তি দিন হে হযরত!
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট