নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের আচরণবিধি মেনে চলাতে কঠোর হওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত চিঠি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন চিঠিটি এমন সময়ে দিল যখন রাজধানীতে বিএনপি অফিসের সামনে হাজার হাজার নেতা-কর্মী জড়ো হতে শুরু করেছেন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নানাভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে।
এর আগে ১০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দুই কিশোরের প্রাণহানি ঘটে। তখন ইসির ভূমিকা ছিল অনেকটাই নির্বিকার। কিন্তু এখন বিএনপির জনসমাগম দেখে তারা আচরণবিধি লঙ্ঘণের নাম করে দলটির টুটি চেপে ধরতে চাইছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা যেন আচরণবিধি মেনে চলেন সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসি ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এর পরদিন ৯ নভেম্বর থেকে ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে ১০ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খানের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করাকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রতিপক্ষ জাহাঙ্গীর কবির নানকের গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে গাড়ির ধাক্কায় দুই কিশোর মারা যায়। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনো ধরনের শোভাযাত্রা বা মিছিল করা যাবে না। তা সত্ত্বেও ইসি থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একইভাবে শোভাযাত্রা করে মনোনয়ন ফরম কেনাটা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও ইসি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে সোমবার নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের পক্ষে সাফাই গেয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে উৎসব করা মানুষের মৌলিক অধিকার। তা ছাড়া মোহাম্মদপুরের ঘটনায় ইসির কী করার আছে? সেখানে তো প্রার্থী নেই। তাই বিষয়টিকে আচরণবিধির লঙ্ঘন বলা যায় না।
একই সময়ে নির্বাচনকে ঘিরে গত দুই দিন ধরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দলটির হাজার হাজার নেতা-কর্মী জমায়েত ও শোভাযাত্রা করতে শুরু করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে ইসি আজ মঙ্গলবার প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকেরা যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের সময় মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন নিয়ে মিছিল ও শোভাযাত্রা করা হচ্ছে। বিষয়টি নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে এ ধরনের ঘটনা যেন আবারও না ঘটে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসি থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা ও জমা দেওয়ার সময় কোনো ধরনের শোভাযাত্রা বা মিছিল করা যাবে না। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন থেকে পূর্ববর্তী ২১ দিনের আগে কোনো ধরনের প্রচার চালানো যাবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ চলাকালীন তারাও ব্যাপক জনসমাগম করেছে। জিগাতলার রাস্তা ব্লক করে নেতাকর্মীরা শোডাউন করেছে। খুনোখুনি করে দুইজন নিহত হয়েছে। তখন ইসি ছিলো নির্বিকার।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও আগে এই ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়নি কেন, জানতে চাইলে সচিব বলেন, মোহাম্মদপুরে দুজনের প্রাণহানির ঘটনা ইসির কাছে প্রত্যাশিত ছিল না। দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার কারণেই ইসি কঠোর এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
ইসির পুনর্নির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে ৩০ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর। প্রার্থীদের অনুকূলে প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ ডিসেম্বর। সেই হিসাবে ১০ ডিসেম্বরের আগে কোনো ধরনের প্রচার চালালে তা আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো