মানুষের মন প্রকৃতির মতই সুন্দর। ঠিক তেমনি মানুষের মনে কখন যে কী ঘটে যায় তা আসলে বলা যায় না। যারা একসময় লাইট ক্যামেরা, অ্যাকশেন কাটের মধ্য দিয়ে দিন থেকে রাত পার করতেন তারাই আবার এখন ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত হয়েছেন। ইসলাম ধর্মের বাণী এবং সম্পূর্ণ নিয়মকানুন মেনেই তারা জীবন-যাপন করছেন।
শুধু কী তাই? আর অভিনয়তো দূরের কথা ক্যামেরার সামনেই দাঁড়াতে যেন লজ্জা বা ভয় পান। ইতিহাস ঘাটলে এমনটা আর কোন তারকাদের করতে দেখা যায়নি বাংলাদেশে। আর যদিও বা দেখা যায় তাহলে তার সংখ্যা খুবেই কম। বাংলাদেশের এমন কিছু তারকারা কথাই আজকে বলব আপনাদের। তারা হলেন চিত্র জগতের জনপ্রিয় জুটি নাঈম-শাবনাজ, চিত্রনায়িকা শাবানা, চিত্রনায়িকা, ববিতা-সুচন্দা, চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল, ও তরুণ মডেল হ্যাপি।
নাঈম-শাবনাজ: ঢাকাই ছবির নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় জুটি ছিলেন নাঈম-শাবনাজ। চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী’ ছবির মাধ্যমে এই জুটির অভিষেক হয়। তারপর থেকে রুপালি পর্দায় তারা জুটি বেঁধে দারুণ সাড়া ফেলেন। নাঈম-শাবনাজ অভিনীত অধিকাংশ ছবিই ছিল ব্যবসা সফল।
তার মধ্যেই নাঈম-শাবনাজ একে অন্যের মন রদবদল করেন। তাদের প্রেম পূর্ণতা পায় বিবাহের মাধ্যমে। ১৯৯৪ সালের আজকের এই দিনে (৫ অক্টোবর) তারা দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর থেকেই তারা চলচ্চিত্র থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। তাদের ঘরে রয়েছে দুই কন্যাসন্তান। দাম্পত্য জীবনের ২৩ বছর পার করে ফেলেছেন তারা। নাঈম-শাবনাজ বর্তমানে চলচ্চিত্র ছেড়ে দূরে আছেন। নাঈম মনোযোগী তার ব্যবসা নিয়ে এবং শাবনাজ ব্যস্ত সংসার নিয়ে। তারা জুটি বেঁধে ২০টির মতো ছবিতে অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘জিদ, ‘লাভ, ‘চোখে চোখে, ‘অনুতপ্ত, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সোনিয়া’, ‘টাকার অহংকার’, ‘সাক্ষাৎ’ ও ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’।
শাবানা: ঢালিউডের বিউটি কুইনখ্যাত জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা এখন ইসলাম ধর্মের পরিপূর্ণ অনুসারী। বড় পর্দার শাবানার সাথে বাস্তবের শাবানার এখন কোনো মিল নেই। ফুলহাতা কামিজ ও হিজাব সেই শাবানাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। এখন তার দেখা পাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে তো বটেই, কোনো সাংবাদিকের পক্ষেও প্রায় অসম্ভব।
স্বামী ওয়াহিদ সাদিক, দুই মেয়ে সুমী ও উর্মি এবং একমাত্র পুত্র নাহিনকে নিয়ে তিনি বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে। তবে বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন তিনি। কোটি দর্শকের স্বপ্নের নায়িকা হিজাবপরা শাবানাকে এখন দেশে-বিদেশে দেখলে তার পরিচিতরা অবাক হন। একজন শীর্ষস্থানীয় নায়িকা হঠাৎ পর্দার অন্তরালে নিজেকে এভাবে লুকিয়ে রাখবেন এটা তারা ভাবতেও পারেন না। শাবানা তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, হজ করার পর তিনি আর ছবি না করে পর্দা করার সিদ্ধান্ত নেন।
ববিতা-সুচন্দা: তারা দুজনই একসময়কার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা। অভিনয় করেছেন অসংখ্য চলচ্চিত্রে। পেয়েছেন তারকা খ্যাতি। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা নিজেদের চলচ্চিত্র থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। এমনকি হজও করে এসেছেন এই চিত্র নায়িকারা। আর ক্যামেরারর সামনেই আসতে নারাজ এই দুই অভিনেত্রী। তবে হুটহাট করেই ক্যামেরার সামনে পাওয়া যায় তাদের। আর বাকি সময় তারা ধর্মের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।
অনন্ত জলিল: সময়ের সব থেকে আলোচিত এক নাম অনন্ত জলিল। তবে চিত্রনায়ক থেকে বদলে গেছেন অনন্ত জলিল। নিজেকে টম ক্রুজের সঙ্গে তুলনা করা এ নায়ক বেশ-ভূষায় আচরণে আর আগের মতো নেই। প্রতিদিন ভোরে ঘুম ভেঙেই নামাজ পড়ছেন অনন্ত জলিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, আর সময় পেলেই হাদিসের বই অনন্তর হাতে, গাড়িতেও যাত্রাপথে পড়ছেন ইসলামী বই। অফিসের কাজের বিরতিতে কুরআনও পড়ছেন। আর সুযোগ পেলেই ছুটে যাচ্ছেন ধানমন্ডি ৩২ এর তাকওয়া মসজিদে। এ মসজিদের খতিব মাওলানা উসামার সঙ্গে গত একবছর ধরেই সময় দিচ্ছেন অনন্ত জলিল।
গত ২৯ জুলাই থেকে টানা তিনদিনের জন্য এ মসজিদে তাবলীগে জামাতে অংশ নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকেও ইসলামি পোশাকে প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করেছেন তিনি। প্রকাশ করেছেন মসজিদের ভেতর তারা নানা কর্মকাণ্ড। গত ২৯ জুলাই তিনি তাকওয়া মসজিদে শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান। দুপুরের খাবার থেকে শুরু করে রাতের আহারও সারেন শিশুদের সঙ্গেই। এমন একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে।
নাজনীন আক্তার হ্যাপী: আলোচিত চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপী মিডিয়াজগৎ থেকে আগেই নিজেকে আড়াল করেছেন। মিডিয়ায় তাঁর কখনো আর ফেরার ইচ্ছে নেই। এখন তিনি রাজধানীর একটি কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছেন।
হ্যাপীর বদলে যাওয়া জীবন নিয়ে সম্প্রতি একটি বই প্রকাশ করেছে মাকতাবাতুল আযহার প্রকাশনা। বইটির নাম ‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’। সাক্ষাৎকারধর্মী বইটি লিখেছেন সাদিকা সুলতানা সাকী। বইটির প্রকাশকের নাম মাওলানা উবায়েদুল্লাহ।
মাওলানা উবায়েদুল্লাহ গণমাধ্যমে বলেন, ‘বইটি চলতি সপ্তাহে আমরা বাজারে এনেছি। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৭০০ কপি বিক্রি হয়েছে। অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি আমরা। একজন শোবিজ তারকা এখন ধর্মীয়ভাবে জীবনযাপন করছেন, এ বিষয়টা সবাইকে জানাতে মূলত বইটি আমরা প্রকাশ করেছি। একজন স্টার কেন তাঁর জীবনযাপনে পরিবর্তন এনেছেন এই বিষয়ের প্রতি সবার অনেক আগ্রহ আছে।
বইটি প্রসঙ্গে নাজনীন আক্তার হ্যাপী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নতুন বইয়ের ঘ্রাণে আমার ঘর সুবাসিত হয়ে আছে, আলহামদুলিল্লাহ! ১০০ কপি বই পাঠিয়েছেন মাকতাবাতুল আযহার থেকে। অনেক অনেক জাযাকাল্লাহ মাকতাবাতুল আযহারের প্রকাশক ভাইকে এবং বইটির সম্পাদক ভাইয়া এবং তার আহলিয়াকে যিনি আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এবং প্রচণ্ড কষ্ট করে সবকিছু ম্যানেজ করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। আল্লাহ আপনাদের কবুল করুন। অন্তর থেকে আপনাদের জন্য আমার দোয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। অনেক খুশি লাগছে আলহামদুলিল্লাহ! বইটা কল্পনার চেয়েও বেশি সুন্দর হয়েছে মাশাআল্লাহ! হাতে না নিলে এই বইয়ের সৌন্দর্য বোঝা সম্ভব নয়। অনেক বেশি সুন্দর।’
নাজনীন আক্তার হ্যাপী ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’ ও ‘রিয়েল ম্যান’ নামে দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া শফিক হাসান পরিচালিত ‘ধূমকেতু’ ছবির একটি আইটেম গানে তিনি নেচেছেন। বেশ কিছু মিউজিক ভিডিওর মডেল হয়েও আলোচিত হয়েছিলেন হ্যাপী। গত বছরের অক্টোবরে হঠাৎ করে বিয়ে করেন হ্যাপী। তাঁর স্বামী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়।
২০১৫ সালে দেশের তারকা ক্রিকেটার রুবেলের সঙ্গে হ্যাপীর সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক কথাবার্তা ছড়ায়। উভয়ের সম্পর্কের বিষয়টি শেষে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ কারণে রুবেলকে স্বল্প সময়ের জন্য জেলেও যেতে হয়। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে বিশ্বকাপগামী দলে যোগ দেন পেসার রুবেল।
পরিশেষে বলতে হয়, মানুষের মনে কখন কী ঘটে তা আসলে কেউ জানেনা। নিজেকে বদলাতে হলে আগে নিজেকে জানতে হয়। নিজেকে জানুন এবং বদলে যান।
সূত্র: প্রিয় ডটকম
Discussion about this post