কদরুদ্দিন শিশির
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার ওয়েবসাইটে আবারও কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজারের রিপোর্ট কপি-পেস্ট করে প্রকাশ করা হয়েছে! গত ক’দিন আগে এরকম একটি হুবহু কপি-পেস্ট সংবাদ দেখা গিয়েছিল।
আজকের রিপোর্টর আনন্দবাজারী শিরোনাম “রিয়াধে কাল ট্রাম্প-শরিফ মুখোমুখি বৈঠক হতে পারে”
আনন্দবাজারের স্ক্রিনশট-
বাসসে এসে শিরোনাম হয়েছে- “সৌদির অনুরোধে কাল শরিফের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক ট্রাম্পের” (বাসসের সংবাদ এই লেখা রেডি করার সময় পর্যন্ত সাধারণ পাঠকদের জন্য ‘পাবলিক’ করা হয়নি।)
বাসসের রিপোর্টের স্ক্রিনশট-
#আনন্দবাজারের ১ম প্যারা–
“অনেক দিন ধরেই সুযোগ খুঁজছিল ইসলামাবাদ। যাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি বসে একটু কথা বলতে পারেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। কিন্তু ওয়াশিংটনের গ্রিন সিগন্যাল কিছুতেই মিলছিল না। পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সেই সুযোগটা করে দিতে পারে সৌদি আরব।”
#বাসসের ১ম প্যারা–
“রিয়াদে রোববার সৌদি আরবসহ ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিট’-এর সদস্য ৫৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনার এক ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প।”
#আনন্দবাজারের ২য় প্যারা–
“রিয়াধে রবিবার সৌদি আরব সহ ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিট’-এর সদস্য ৫৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনার এক ফাঁকে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে মুখোমুখি বসে একটু কথা বলে নিতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এই প্রথম। পাক সংবাদপত্র ‘দ্য ডন’ এই খবর দিয়েছে।”
#বাসসের ২য় প্যারা–
“অনেক দিন ধরেই সুযোগ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মুখোমুখি বৈঠকে বসার খুঁজছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু ওয়াশিংটনের গ্রিন সিগন্যাল কিছুতেই মিলছিল না। অবশেষে সৌদি আরব প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছে।”
আনন্দবাজারের প্র্রথম দুটি প্যারাকে বাসস আগে-পিছে করে দিয়েছে। (বাকি প্যারাগুলোর সিকুয়েন্স অবশ্য ঠিক আছে। নিচে লক্ষ্যণীয়)।
#আনন্দবাজারের ৩য় প্যারা–
“একটি ‘কূটনৈতিক সূত্র’কে উদ্ধৃত করে পাক সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, ইসলামাবাদের অনুরোধ সৌদি আরবের তরফে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল আমেরিকার কাছে। তাতে বরফ কিছুটা গলেছে! ‘‘খুব অল্প সময়ের জন্য যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি বসে একটু কথা বলতে পারেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, আমেরিকার তরফে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
#বাসসের ৩য় প্যারা–
“পাকিস্তানের সংবাদপত্র ‘দ্য ডন’ এই খবর দিয়েছে। একটি ‘কূটনৈতিক সূত্র’কে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, সৌদি আরবের অনুরোধে বরফ কিছুটা গলেছে! ‘খুব অল্প সময়ের জন্য যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি বসে একটু কথা বলতে পারেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, আমেরিকার পক্ষ থেকে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।”
(এখানে প্যারার প্রথমে থাকা “পাকিস্তানের সংবাদপত্র ‘দ্য ডন’ এই খবর দিয়েছে।” বাক্যটি বাদ দিয়ে পড়ুন। আনন্দবাজার তাদের রিপোর্টের ২য় প্যারার শেষে এটি দিয়েছিল। বাসস ৩য় প্যারার শুরুতে নিয়ে এসেছে।)
#আনন্দবাজারের ৪র্থ প্যারা–
“ইসলামাবাদের সরকারি সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ, সন্ত্রাসবাদ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কথা বলবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সৌদি আরবের রাজা সুলেমান বিন আবদুল আজিজের আমন্ত্রণে ৫৪টি দেশের ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিট’-এ যোগ দিতে রিয়াধে পৌঁছে গিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।”
#বাসসের ৪র্থ প্যারা–
“ইসলামাবাদের সরকারি সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাশ্মীরে জঙ্গি কর্মকা-, সন্ত্রাসবাদ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কথা বলবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সৌদি আরব সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের আমন্ত্রণে ৫৪টি দেশের ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিট’-এ যোগ দিতে রিয়াদে পৌঁছেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।”
আনন্দবাজারের ৫ম প্যারা–
“ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম বিদেশ সফর। যেটা আরও তাৎপর্যের, তা হল, আমেরিকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে কয়েকটি মুসলিম দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর তাঁর প্রথম বিদেশ সফরের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘ডেস্টিনেশন’ হচ্ছে সৌদি আরব সহ আরব দেশগুলির এই শীর্ষ সম্মেলন।”
#বাসসের ৫ম প্যারা–
“ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম বিদেশ সফর। যেটা আরও তাৎপর্যের, তা হল, আমেরিকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে কয়েকটি মুসলিম দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর তার প্রথম বিদেশ সফরের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘গন্তব্য’ হলো সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলোর এই শীর্ষ সম্মেলন।”
#আনন্দবাজারের ৬ষ্ঠ প্যারা–
“হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, এই সম্মেলনে ইসলাম নিয়ে তাঁর মতামত ৫৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের জানাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শনিবারই তিনি রিয়াধে পৌঁছে গিয়েছেন। ওয়াশিংটন থেকে রওনা হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘আমি মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে কথা বলব (ইসলাম নিয়ে)। অন্যান্য ধর্মের মানুষের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ দূর করা আর জঙ্গিয়ানার মূলোচ্ছেদ করার জন্য ওঁদের (মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের) এগিয়ে আসতে বলব।’’
#বাসসের ৬ষ্ঠ প্যারা–
“হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, এই সম্মেলনে ইসলাম নিয়ে তার মতামত ৫৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের জানাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শনিবারই তিনি রিয়াদে পৌঁছেছেন।
ওয়াশিংটন থেকে রওনা হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে কথা বলব (ইসলাম নিয়ে)। অন্যান্য ধর্মের মানুষের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ দূর করা আর জঙ্গিয়ানার মূলোচ্ছেদ করার জন্য ওনাদের (মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের) এগিয়ে আসতে বলব।”
এ তো গেল রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থায় বিদেশী পত্রিকার ক্রেডিট দেয়া ছাড়া কপি-পেস্টের নমুনা। নিচে দিচ্ছি বাংলাদেশের বেসরকারি একটি পত্রিকার অনলাইনে বিদেশী পত্রিকার ক্রেডিট ছাড়া কপি-পেস্ট সংবাদ।
দৈনিক ইত্তেফাক বাসস থেকে হুবহু কপি-পেস্ট করে তাদের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশ করেছে, এবং কোথা থেকে নেয়া হয়েছে তার উল্লেখ করে নাই পত্রিকাটি। বরং, ক্রেডিট লাইনে লেখা রয়েছে ‘অনলাইন ডেস্ক’। তবে ইত্তেফাক আনন্দবাজার থেকে কপি না করে বাসস থেকে করেছে এটা কারণে নিশ্চিত যে, কপি-পেস্ট করার সময় বাসস প্রথম প্যারায় একটি ভুল করেছিল (স্ক্রিনশটে লাল দাগগুলো লক্ষ্যনীয়), ইত্তেফাক সেই ভুলটি সংশোধন না করে রেখে দিয়েছে!
ইত্তেফাকের স্ক্রিনশট-
(ইত্তেফাকের রিপোর্টটিতে বাসসের করা ভুলটিও হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে! উভয় রিপোর্টের লাল দাগ দেয়া শব্দগুলো বাক্যের আগাগোড়ার সাথে মিলিয়ে পড়ুন।)
ইত্তেফাকের রিপোর্টের লিংক
এভাবেই দেদারসে কপি-পেস্ট সাংবাদিকতা চলছে বাংলাদেশে। এ ক্ষেত্রে শংকার বিষয় হল, ভারতের বিদেশনীতি আর আনন্দবাজার পত্রিকার সংবাদনীতি নিশ্চয়ই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিদেশীনীতি এবং এখাকার সংবাদমাধ্যমের সংবাদনীতি এক হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এভাবে কোনো ক্রেডিট উল্লেখ করা ছাড়াই ভাষা-শব্দ ও বাক্যের ব্যবহারসহ হুবহু কপি-পেস্ট করা হলে তা সাধারণ পাঠককে বিভ্রান্ত করে। একই সাথে একটা পাঠককে প্রতারিত করার শামিল।
Qadaruddin Shishir এর ব্লগ থেকে
Discussion about this post