কামরুল হাসান নোমানী
আমাদের প্রধানমন্ত্রী বরাবরই সবাইকে চমকে দিতে পছন্দ করেন। ছিটমহলের অশতীপর সেই বৃদ্ধা কখনো ভাবেনাই দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বুকে টেনে নেবেন। আমরাও কি ভেবেছি? বোধহয় না। আমাদের সবাইকে চমকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেই অশতীপর বৃদ্ধাকে বুকে টেনে নিলেন। আমরা আবারো চমকে যাই প্রধানমন্ত্রীকে যখন গণভবনে পিঠা উৎসবে খুশি কবিরদের সাথে প্রটোকল ভুলে মাটিতে বসে পড়তে দেখি। এইটুকুই কেবল না। প্রধানমন্ত্রী নিজের ছেলেকেও চমকে দেন জন্মদিনে ছেলের জন্য নিজ হাতে পোলাও রান্না করে। মাকে পোলাও রান্না করতে দেখে জয় সাহেব কতটা চমকিত হয়েছেন সেটা আমরা জয় সাহেবের স্ট্যাটাস পড়ে জানতে পারি। নাতী নাতনীদের জন্য নিজ হাতে মাছ কাটেন তিনি, নানা পদের আচার তৈরি করেন, আলু ভর্তা বানান, এখনো। এত ব্যস্ততার মাঝেও। খেতে বসে নাতি নাতীনরা দাদীর হাতের রান্না দেখে চমকে যান।
সত্যিই সবাইকে চমকে দিতেন ভালবাসেন তিনি। প্রণব বাবু কখনো কি ভেবেছেন শেখ হাসিনা তাকে নিজ হাতে ইলিশ রান্না করে খাওয়াবেন? না ভাবাটাই স্বাভাবিক। বিশ্ব আর কখনো এরকম নজির দেখেছে বলে মনে হয়না। রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে এক দেশের প্রধানমন্ত্রী আরেক দেশের রাষ্ট্রপতিকে ইলিশ রান্না করে খাওয়াবেন, বালিশ ঠিক করে শোয়াবেন এতটা বোধহয় কেউই ভাবেনি। যেহেতু কেউ ভাবেনি অথচ এরকম কিছু দেখতে হচ্ছে তাই সবাই চমকে গেছি। রাষ্ট্রীয় সফরও যে পিকনিক অথবা গেট টুগেদার হয়ে উঠতে পারে সেটা দেখাটাও চমকের ব্যাপার।
চমকের শেষ নেই। সতের দিন পর পরিপাটি রেশমা রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপের নীচ থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে চমকে দিয়ে বলে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবাইকে চমকে দিয়ে রেশমার সাথে দেখা করেন। হোটেল ওয়েস্টিনে রেশমার চাকুরী হয়। আমরা চমকিত হই। এইখানেই শেষ না। প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে যুবলীগ নেতা রানা যুবলীগের কেউ নয় বলে দাবী করেন। পরদিন সোশাল মিডিয়ায় সাভারের সাংসদ মুরাদ জং রানার কপালে চুমু খাচ্ছে এরকম একটা ছবি দেখে আমরা আবার চমকিত হই।
৮৬ র নির্বাচনের আগে তিনি লালদীঘির জনসমাবেশে বলেছিলেন, এরশাদের সাথে যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান। অত:পর তিনি নিজেই সে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। জাতি চমকের সোদনে তব্দা খেয়ে যায়। প্রকাশ্য জনসভায় ছাত্রলীগকে একটার বদলে দশটা লাশ ফেলার নির্দেশ দিয়ে তিনি সবাইকে চমকে দেন। লগি বৈঠা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি জাতিকে বোকচোদ বানিয়ে দেন। ৯৬ তে ক্ষমতায় থাকার সময় আওয়ামীলীগ বিরোধীদলে গেলে কখনো হরতাল করবেনা বলে ঘোষণা দেন, পরের পাঁচ বছরে সাকুল্যে ১৭৩ খানা হরতাল দিয়ে তিনি জাতিকে চমকে দেন।
প্রধানমন্ত্রী যখন পাঁচই জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচন করেন তখন সব বিশ্লেষকরা বলেছিল এই সংসদ পাঁচ বছর পর্যন্ত স্টে করবেনা। সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি সেই সংসদকে তিন বছর পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। পাঁচেও টেনে নেবেন। সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি আগামী নির্বাচনও একতরফা ভাবে করে নেবেন। আশা করা যায়।
ইস্যু দিয়ে ইস্যু কিভাবে ঢাকতে হয়, বোকাচোদা বাঙ্গালের সামনে কখন কোন মূলা ঝুলায়া দিতে হয়, কখন জঙ্গী ইস্যু আনতে হয়, কখন বিরোধীদলকে ঠ্যাঙ্গাতে হয়, এরশাদকে কিভাবে সামলাতে হয়, আমেরিকাকে কিভাবে হ্যান্ডল করতে হয়, চীনকে কিভাবে বশ মানাতে হয়… উনার বুদ্ধি, উনার প্রজ্ঞা, উনার কৌশল, উনার রসিকতা যত দেখি ততই চমকিত হই।
এমন চমক প্রিয় একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়ে আমরা গর্বিত। দু:খ লাগে ওয়াজেদ মিয়ার কথা ভেবে। এত চমক বেচারার সয়নাই।
Discussion about this post