লেনিন শুভ্র
দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের কর্ণধার নুরুল ইসলাম বাবুল ইন্তেকাল করেছেন। নুরুল ইসলাম বাবুল নিসন্দেহে দেশের একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তার গড়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানে শত শত লোক কর্ম করে খাচ্ছে।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে একজন মৃত মানুষের ব্যাপারে বেশি সমালোচনা না করাই ভাল। তার অপকর্মের জন্য কবরে তাকে জবাবদিহী করতে হবে। তার চূড়ান্ত ফায়সালা এখন সেখানেই হবে।
কিন্তু মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে যখন অতিরিক্ত প্রশংসা করা হয়, বেশি বাড়াবাড়ি করা হয়, প্রশংসার মাত্রা যখন সীমা অতিক্রম করে, একজন ভূমিখেকো ও মদ ব্যবসায়ীকে যখন আল্লাহর ওলীতে পরিণত করা হয় তখন আর কিছু না বলে উপায় থাকে না।
নুরুল ইসলাম বাবুলের ক্ষমতার অপব্যবহার, দখল বাণিজ্য, অসহায় মানুষের জমিদখল করে আবাসভূমি তৈরির ঘটনাগুলো সবার কাছে পরিষ্কার।
বিশেষ করে এদেশে নুরুল ইসলাম বাবুল একজন মদ ব্যবসায়ী হিসেবেও মানুষের কাছে পরিচিত। এদেশে তিনিই প্রথম প্রকাশ্যে মদের ব্যবসা শুরু করেন। বিয়ার আর হান্টার নাম দিয়ে মদ উৎপাদন করে তিনি এদেশের মুসলমানদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন।
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নুরুল ইসলাম বাবুল মদের লাইসেন্স পেলেই তখন তিনি মদ উৎপাদন শুরু করতে পারেননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে তার সেই লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকারকে ম্যানেজ করে আবার মদের লাইসেন্সের অনুমতি নেন।
এরপর থেকেই তিনি বিয়ার ও হান্টার নাম দিয়ে মদ উৎপাদন শুরু করেন। তার এই মদ শুধু দেশের হোটেল আর ক্লাবগুলোতেই যায়নি, প্রকাশ্যে দোকানেও বিক্রি শুরু হয়।
এরপরই আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতা মদ নিষিদ্ধের দাবি জানান। মদের লাইসেন্স বাতিল করার জন্যও তারা সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। কিন্তু মদ আর নিষিদ্ধ হয়নি।
যমুনা গ্রুপের সেই মদেই আজ এদেশের মুসলিম যুব সমাজের নৈতিকতা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। কুরআনে যে মদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে সেই মদ উৎপাদন করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে কুরআনের বিধানকে লঙ্ঘন করেননি নুরুল ইসলাম বাবুল, এদেশের তরুণ-তরুণীদের জীবন ধ্বংসেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো-সেই নুরুল ইসলাম বাবুলের ভেতর নাকি এখন ধর্মের আলো দেখতে পেয়েছেন দৈনিক যুগান্তরের জীবন ও ইসলাম পাতার সম্পাদক হাফেজ আহমদ উল্লাহ।
নুরুল ইসলাম মানে ধর্মের আলো শিরোনামে একটি আর্টিক্যাল লিখেছেন তিনি যুগান্তরে।
তিনি তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, মানুষের ভেতর জগতে এত ঐশী আলো লুকিয়ে থাকতে পারে আমি কোনো আলেম, কোনো সুফি বা কোনো পীর সাহেবকেও দেখিনি। আমি তার ধর্মবোধ দেখে তার কাছ থেকে মাঝে মধ্যেই গোপনে সবক নিয়েছি।
তিনি ভেতর জগতে আলেম সমাজকে খুব ভালোবাসতেন। মাঝে মধ্যেই তিনি আমার মাধ্যমে আলেমদের সমস্যা হলে বেশ থোক টাকা পাঠিয়ে দিতেন। হাফেজ্জী হুজুরের একটা বড় অনুষ্ঠানের সময় তিনি বিশাল বড় অঙ্কের অর্থ অনুদান দিয়েছিলেন। এতে হাফেজ্জী হুজুরের ছেলেরা এবং আলেম সমাজ খুশি হয়ে তার জন্য দোয়া করেছেন এবং বলেছেন- এ মানুষটাকে দেখে বোঝা যায় না যে, তিনি ধর্মকে আলেম সমাজকে এত ভালোবাসেন। তিনি মাঝে মধ্যেই আলেম সমাজকে আমার মাধ্যমে সেনাকল্যাণে ডেকে পাঠাতেন।
ইসলামের আলো এভাবেই হয়তো ভেতর জগত থেকে আলো ছড়ায়। এ আলো কেউ দেখে, বেশিরভাগ মানুষই দেখে না। নুরুল ইসলাম বাবুলকে আমি যতই দেখেছি, ততই মুগ্ধ হয়েছি।
তিনি আরও অনেক কিছুই লিখেছেন। আমরা এখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু উল্লেখ করলাম।
হাফেজ আহমদ উল্লাহ তার ভেতর ইসলামের এমন আলো দেখেছেন যে কোনো আলেম বা পীরের মধ্যেও দেখেননি।
বিষয়টা শুধু হাস্যকরই নয়, দুর্ভাগ্যজনকও বটে। যার অন্তরে ছিল আল্লাহর নিষেধকৃত মদের ব্যবসার স্বপ্ন, সেই ব্যক্তির ভেতর নাকি তিনি দেখেছেন ইসলামের আলো। তেলবাজি আর চামচামিরও তো একটা সীমা থাকা দরকার।
তারপর নুরুল ইসলাম বাবুল আলেমদেরকে অনেক টাকা দিয়েছেন। আচ্ছা, আলেমদরকে টাকা দিলেই কি একজন মানুষ ধার্মিক হয়ে যায়? মানুষের জমি দখল আর অবৈধ ব্যবসা করে যে টাকা উপার্জন করেছে, এসব হারাম টাকা সব দিয়ে দিলেওতো কোনো ছাওয়াব হবে না। আর এদেশের কিছু আলেম আছেন যারা টাকা পাইলে একজন সুদখোর, ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজকে খাটি ইমানদার বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না।