- মিথ্যা আর দুর্নীতি বেড়েই চলেছে
আওয়ামী চাটুকাররা রিলিফ মারছে। মরছে নিরন্ন মানুষ। রিলিফ গুরা মারবেই বা না কেননা । ওদের ক্ষমতার ভিত্তিতে মিথ্যার বেসাতী আর সীমাহীন দুর্নীতি। জুরিখ থেকে প্রকাশিত টসে আক্রগার পত্রিকায় ‘৭৪-এর ২৯ আগস্ট এ বিষয়ে লিখেছেন কার্লোস উইগম।
প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে ভয়াবহ খবর আসে। আমরা আমাদের এশীয় সংবাদদাতা মি, কালোস উইগমকে ‘এশিয়ার পর্ণ কুটীরে’ পাঠিয়েছিলাম। সেখানকার পরিস্থিতির তিনি যে মূল্যায়ন করেছেন তা অত্যন্ত ভীতিপ্রদ: লোভী বাংলাদেশ সরকারের কর্তারা বন্যাপীড়িত লোকের জন্য দেয়া আন্তর্জাতিক খয়রাত আত্মসাৎ করে মোটা হচ্ছেন। সাহায্যকারী দেশগুলো এ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, ফলে তারা আর সাহায্য দিতে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু এদিকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ প্রতিদিন গরীব থেকে আরো গরীব হচ্ছে।
এমনকি আদর্শবাদীরাও বাংলাদেশ সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। প্রথমদিকে বাংলাদেশ সরকারের হিসাব বন্যায় মৃতের সংখ্যা ছিল ২০০০। এখন তা নেমে ১,৭০০তে দাঁড়িয়েছে। এই বিভ্রান্তিকর তথ্যের জন্য কারো কারো মুখে মন্তব্য শোনা যাচ্ছে যে, তারা ঠিক জায়গামতো কমা বসিয়েছিলেন কি না? আরো সন্দেহ করা হয় যে, বন্যা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে দেখিয়ে বেশি সাহায্য আদায়ের উদ্দেশ্যে সরকারি হিসাব বাড়িয়ে তোলা হয়েছিল। তবে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহ এই বিষয় বেশ সচেতন। ফলে পুরান প্রবাদটিরই পুনরাবৃত্তি চলছেঃ “বাঙ্গালীদের মাথা আকাশে, পা ধুলায় ও হাত অপরের পকেটে”।
এ ব্যাপারে কারোর সন্দেহ নেই যে, দুর্ভিক্ষ সামলাবার জন্য বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ সাহায্যের প্রয়োজন। কিন্তু সাহায্যকারী দেশগুলোর ধারণা এই যে, বন্যার অজুহাতে বাংলাদেশ সরকার অধিকতর খয়রাত আদায় করে নিজেদের দুর্নীতির খোরাক যোগাতে চাচ্ছে।
যদিও বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের শেষ নাগাদ প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ফ্রাংক সাহায্য পেয়েছে (এ সময়ে এতো বেশি সাহায্য আর কোনো উন্নয়নশীল দেশ কখনো পায়নি)। তবুও সরকার বন্যা প্রতিরোধকল্পে কোনো টাকাই বরাদ্দ করেনি। এক কোটি বেকার বাঙ্গালীকে মাটির বাঁধ তৈরি, খাল খনন প্রভৃতি ফলপ্রসূ কাজে নিয়োজিত করা যেত। এভাবে চীন ও ভারতে কাজ হয়েছে। ‘নিজের সাহায্যের জন্য নিজেও সাহায্য কর’ — একথা বাংলাদেশে অর্থহীন। কেননা, যতো সাহায্য এসেছে তা আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যক্তিগত পকেটে গিয়েছে। মিঃ টনি হেগেন- যিনি বাংলাদেশে জাতিসংঘের দেয়া সাহায্যের চার্জে ছিলেন- প্রকাশ করেছিলেন যে, যাবতীয় খয়রাতি শিশুখাদ্য ও কম্বলের অতি অল্পই ঠিক জায়গায় পৌঁছেছে। বাদবাকী কালোবাজারে বিক্রি হয়েছে অথবা পাচার হয়ে ভারতে চলে গেছে। সে অবস্থার আজো পরিবর্তন হয়নি। ঢাকার সংবাদপত্রে যখন ঘোষণা করা হলো যে, বন্যাপীড়িতদের জন্য এক উড়োজাহাজ ভর্তি গুড়োদুধ বিমানবন্দরে আসছে, ঠিক তার পরদিনই ঢাকার হোটেল ম্যানেজাররা ওগুলো কিনতে বাজারে তাদের লোক পাঠিয়ে দিলেন। বস্তুতঃ এইভাবেই বাংলাদেশে বন্যার্তদের জন্য দেয়া সাহায্য বিতরণ করা হয়ে থাকে।
যে সরকার শিয়ালকে হাঁস পাহারা দিতে দিয়েছেন, অর্থাৎ যে সরকার কুখ্যাত জোচ্চোর (দেশে ও বিদেশে) গাজী গোলাম মোস্তফাকে জাতীয় রেডক্রসের সভাপতি নিযুক্ত করেছেন, সে সরকার সম্পর্কে কোনো কিছুতেই বিস্ময় হওয়ার কিছু নেই। মোস্তফা এ পদ পেয়েছেন, যেহেতু তিনি শুধু গুঁড়োদুধই কালোবাজারে বিক্রি করেননি, অনেক ওষুধপত্রও আত্মসাৎ করেছেন। বাংলাদেশ রেডক্রসের সভাপতি এখন ৩৭টি ওষুধের দোকানের মালিক।
এ ধরনের বিবেকবর্জিত কাজের ফল চাক্ষুষ দেখতে হলে ৩ মাইল দূরে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া স্কুলে যাওয়া যেতে পারে। স্কুলটি এখন বন্যায় ঘর-বাড়ি হারিয়েছে এমন দুই হাজার পাঁচশ লোকের আশ্রয়স্থল। সারি সারি কংকালসার শিশু শুয়ে আছে- এতো দুর্বল যে, ওদের কাঁদবার শক্তিটুকুও লোপ পেয়েছে।
ক্যাম্প-এর পরিচালককে জিজ্ঞাসা করা হলো, সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তিনি কিছু পেয়েছেন কি না? তিনি জবাব দিলেনঃ “পেয়েছি- জাতীয় রেডক্রসের কাছে থেকে। দুর্ভাগ্যবশতঃ তা কাজে আসেনি। যে দুটি সুইডিশ বিস্কুটের ও একটি ফরাসী শিশুখাদ্যের বাক্স রেডক্রস দিয়েছিলেন, তা কীট আর পোকায় ভর্তি ছিল। এসব খাদ্য গত কালকের উড়োজাহাজে আসেনি। ১৯৭০ সালের বিপর্যয়ের সময় থেকেই এগুলো গুদামজাত হয়ে পড়ে ছিল।”
বই: বিদেশী সাংবাদিকের দৃষ্টিতে শেখ মুজিবের বাংলাদেশ (পৃষ্ঠা: ১১-১২)
লেখক: খন্দকার হাসনাত করিম
প্রকাশনী: ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স
আর্মি অফিসারদের শেখ মুজিবের প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি
১৯৭৪ সনের জানুয়ারি মাসে কয়েকজন যুব আর্মি অফিসার এমন এক ঘটনার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে যা পরবর্তীতে শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডকে সরাসরি প্রভাবান্বিত করেছিলো। ঢাকা লেডিজ ক্লাবে একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে মেজর ডালিম আর তার স্ত্রীকে নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। শেখ সাহেবের ডান হাত ও রেডক্রসের চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফার ভাই মিসেস ডালিমের উপর কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করে। বাদানুবাদের এক পর্যায়ে গাজীর ভাড়াটে গুন্ডা বাহিনী যোগ দেয় এবং দম্পতিটিকে বেইজ্জতি করে। ঘটনা শুনে ডালিমের সহকর্মী আর্মি বন্ধুরা এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়। দুই ট্রাক ভর্তি সৈন্যসামন্ত নিয়ে গাজী গোলাম মোস্তফার বাংলো তছনছ করে। উভয় পক্ষ শেখ সাহেবের কাছে বিচার চাইলে তিনি মিলিটারী পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করেন এবং তার ফলশ্রুতি স্বরূপ ২২ জন যুবক আর্মি অফিসারকে চাকুরীচ্যুত করা হয় কিংবা জোরপূর্বক অবসর গ্রহনে বাধ্য করা হয়। এদের মধ্যে মেজর ডালিম, মেজর নূর, মেজর হুদাও ছিলেন। এতে যুবা অফিসারদের মধ্যে শেখ মুজিবের উপর দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয় যার পরিণাম হয়েছিল অত্যন্ত মারাত্মক।
(বাংলাদেশ রক্তের ঋণ – এ্যন্টনী ম্যাসকারেনহাস)
বই: আমার দেখা সমাজ ও রাজনীতির তিনকাল (পৃষ্ঠা: ১৭৫)
লেখক: সা’দ আহমদ
প্রকাশনী: রিজিয়া সা’দ ইসলামিক সেন্টার
চলবে…