আহমেদ আফগানী
আজকাল অনেক মুসলিম ইসলামী রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা খুঁজে পাচ্ছেন না। এই নিয়ে তারা সমাজে নানান বিভ্রান্তি তৈরি করছেন। তাই আজকের আলোচনা ইসলামী রাষ্ট্রের কেন প্রয়োজন? মুসলমানরা যদি মুসলমান হিসেবে জীবনযাপন করতে চায়, তবে তাদের নিজেদের গোটা জীবনকে আল্লাহর আনুগত্যের অধীন করে দিতে হবে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনের সকল বিষয়ের ফয়সালা কেবলমাত্র আল্লাহর আইন ও শরীয়াহ মোতাবেক করতে হবে, এছাড়া দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই।
প্রথমত :
আপনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি ঈমান পোষণ করার ঘোষণা করবেন আর জীবনের সামগ্রিক বিষয়াদি পরিচালনা করবেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের আইন অনুযায়ী, ইসলাম কোনো অবস্থাতেই এমনটি বরদাশত করতে প্রস্তুত নয়। এর চাইতে বড় স্ববিরোধিতা আর কিছু হতে পারেনা। এই স্ববিরোধিতাকে বরদাশত করার জন্যে নয়, নির্মূল করার জন্যে ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছে। আমরা যে ইসলামী রাষ্ট্র ও শাসনতন্ত্র দাবী করছি, তার পেছনে এই অনুভূতিই কাজ করছে যে, মুসলমান যদি আল্লাহর আইনই মেনে না চলে, তবে তো তার মুসলমান হবার দাবীই সন্দেহযুক্ত হয়ে পড়ে। গোটা কুরআনই এই নির্জলা সত্য কথাটির সাক্ষ্য দিচ্ছে।
কুরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহই সমস্ত জগত ও সাম্রাজ্যের মালিক। তিনি স্রষ্টা, সৃষ্টিজগত তাঁর। তাই স্বাভাবিকভাবেই শাসনের অধিকার কেবল তাঁরই থাকা উচিত। তাঁর রাজ্যে তাঁর সৃষ্টির উপর তাঁর ছাড়া অপর কারো শাসন সার্বভৌমত্ব চলা মূলতই ভ্রান্ত। সঠিক পন্থা কেবল একটিই। তাহলো, তাঁর খলীফা ও প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর প্রদত্ত আইন ও বিধান অনুযায়ী শাসন পরিচালিত হবে এবং কার্যসম্পাদিত হবে। তাঁর অকাট্য ঘোষণা হলো :
ক. বলোঃ হে সাম্রাজ্য ও সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে চাও রাজ্যক্ষমতা দান করো। আর যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও। [সূরা আলে ইমরানঃ ২৬]
খ. তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রভূ প্রতিপালক। গোটা সাম্রাজ্য তাঁর। [সূরা ফাতিরঃ ১৩]
গ. রাজত্বে তাঁর কোনো অংশীদার নেই। [সূরা বনী ইসরাঈলঃ ১১১]
ঘ. সুতরাং সমস্ত কর্তৃত্ব সমুচ্চ মহান আল্লাহর। [সূরা আল মুমিনঃ ১২]
ঙ. তিনি তাঁর কর্তৃত্বে কাউকেও অংশীদার বানাননা। [সূরা আল কাহাফঃ ২৬]
চ. সাবধান! সৃষ্টি তার, কর্তৃত্বও তাঁর। [সূরা আ’রাফঃ ৫৪]
ছ. ওরা জিজ্ঞেস করছেঃ কর্তৃত্বে আমাদেরও অংশ আছে কি? বলোঃ কর্তৃত্ব সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্যে নির্দিষ্ট। [সূরা আলে ইমরানঃ ১৫৪]
দ্বিতীয়ত :
এই মূলনীতির ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের অধিকার মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। কারণ, মানুষ তো হলো আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁর রাজত্বের প্রজা। তাঁর দাস এবং তাঁর কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্বের অধীন। তাই মানুষের কাজ হলো কেবল তার স্রষ্টা রাজাধিকারাজের আইন মেনে চলা। এক্ষেত্রে তাঁর প্রদত্ত আইনের সীমার মধ্যে অবস্থান করে ইজতিহাদ ও গবেষণার মাধ্যমে প্রাসংগিক বিধি প্রণয়নের নিয়ন্ত্রিত অধিকারই কেবল মানুষের রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সা. যেসব বিষয়ে প্রত্যক্ষ ও সরাসরি কোনো হুকুম প্রদান করেননি, সেসব ক্ষেত্রেও শরীয়তের প্রাণসত্তা এবং ইসলামের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যশীল বিধি প্রণয়নের অধিকারও মুমিনদের দেয়া হয়েছে। কেননা এসব ক্ষেত্রে আল্লাহ ও রসূলের সরাসরি কোনো বক্তব্য না থাকাটাই একথার প্রমাণ যে এসব ক্ষেত্রে নিয়ম বিধি প্রণয়নের আইনগত অধিকার মুমিনদের দেয়া হয়েছে। কিন্তু যে মৌলিক কথাটি স্পষ্ট থাকতে হবে, তা হলো, আল্লাহ প্রদত্ত আইনের সীমারেখার আওতামুক্ত হয়ে যে ব্যক্তি বা সংস্থা নিজেই স্বাধীনভাবে কোনো আইন প্রণয়ন করবে, কিংবা অপর কারো রচিত আইন মেনে চলবে, সে তাগুত, বিদ্রোহী এবং আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিচ্যুত। আর এমন ব্যক্তির কাছে যে-ই ফায়সালা ও সিদ্ধান্ত চাইবে এবং তার প্রদত্ত ফায়সালা ও সিদ্ধান্ত মেনে নেবে সেও বিদ্রোহের অপরাধে অপরাধী।
এসব ফায়সালা স্বয়ং আল্লাহরঃ
ক. আর তোমাদের মুখ যেসব জিনিসের কথা উচ্চারণ করে, সেসব বিষয় তোমরা মনগড়াভাবে বলোনা যে, এটা হালাল আর এটা হারাম। [সূরা আন নহলঃ ১১৬]
খ. তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে, তারই অনুসরণ করো। তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো [মনগড়া] কর্তা ও পৃষ্ঠপোষকের অনুসরণ করো না। [সূরা আ’রাফঃ ৩]
গ. আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান অনুযায়ী যারা ফায়সালা করেনা, তারা কাফির। [সূরা আল মায়িদাঃ ৪৪]
ঘ. হে নবী! তুমি সেইসব লোকদের দেখনি যারা হিদায়াতের প্রতি ঈমান এনেছে বলে দাবী করে যা তোমার এবং তোমার পূর্ববর্তী নবীদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে? কিন্তু তারা নিজেদের যাবতীয় বিষয়ে ফায়সালা করিয়ে নিতে চায় তাগুতদের দিয়ে। অথচ তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো তাগুতকে অস্বীকার করতে। শয়তান চায় তাদের বিভ্রান্ত করতে [সূরা আন নিসাঃ ৬০]
তৃতীয়ত :
বিশ্বজগতের মালিক আল্লাহ তা’য়ালার এই পৃথিবীতে সঠিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা কেবল সেটাই, যা তাঁর নবী রসূলদের মাধ্যমে প্রেরিত আইনের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। আর এর নাম হলো, খিলাফত।
কুরআন এই প্রসঙ্গে যা বলে-
ক. আমি যে রসূলকেই পাঠিয়েছি, এজন্যেই পাঠিয়েছি, যেনো আল্লাহর নির্দেশের ভিত্তিতে তার আনুগত্য করা হয়। [সূরা আন নিসাঃ ৬৪]
খ. হে নবী! পূর্ণ সত্যতার সাথে আমরা এ কিতাব তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে করে আল্লাহর দেখানো সত্যালোকের মাধ্যমে তুমি মানুষের মধ্যে ফায়সালা করতে পারো। [সূরা আন নিসাঃ ১০৫]
গ. আর আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান অনুযায়ী তুমি তাদের মাঝে ফায়সালা করো। তাদের ইচ্ছা বাসনার অনুসরণ করো না। সাবধান থেকো, তারা যেনো তোমাকে ফিতনার নিমজ্জিত করে আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান থেকে এক বিন্দুও বিভ্রান্ত করতে না পারে। [সূরা আল মায়িদাঃ ৪৯]
ঘ. তারা কি তবে জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?। [সূরা আল মায়িদাঃ ৫০]
ঙ. হে দাউদ! আমরা তোমাকে পৃথিবীতে খলীফা বানিয়েছি। সুতরাং তুমি লোকদের মধ্যে সত্যের ভিত্তিতে শাসন চালাও। ইচ্ছা বাসনার অনুসরণ করো না। তাহলে তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। [সূরা সোয়াদঃ ২৬]
চতুর্থত :
যে কোনো ধরণের শাসনব্যবস্থাই বাতিল যদি সেসব ব্যবস্থা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী না হয়। এসব শাসনব্যবস্থার ধরন ও প্রকৃতির মধ্যে যতোই বিভিন্নতা থাকুকনা কেনো, তাতে কিছু যায় আসেনা। এগুলোর সমস্ত কর্মকান্ড ভিত্তিহীন, বৈষম্যপূর্ণ ও ভ্রান্ত। শাসন পরিচালনা এবং রায় প্রদানের মূলত তাদের কোনো বৈধ ভিত্তি নেই।
মুসলিমরা নিজেদের প্রকৃত মালিক আল্লাহর বিদ্রোহীদের আনুগত্য করা এবং তাদের কাছে নিজেদের বিষয়াদির ফায়সালা চাওয়া মুমিনদের কাজ নয়। যদি কেউ এমনটি করে, তাবে নিজেকে মুমিন ও মুসলিম দাবী করা সত্ত্বেও সে আল্লাহর অনুগতদের দল থেকে বিচ্যুত। একথা সরাসরি বিবেক বুদ্ধির সাথেও সাংঘর্ষিক যে, কোনো সরকার একটি গোষ্ঠীকে বিদ্রোহী বলেও আখ্যায়িত করবে, আবার স্বীয় প্রজাদের উপর সেই বিদ্রোহীদের কর্তাগিরি করাকেও বৈধ বলে মেনে নেবে এবং প্রজাদের তাদের শাসন মেনে চালারও অনুমতি দেবে।
দেখুন কুরআন কি বলে :
ক. হে নবী, তাদের বলোঃ আমরা কি তোমাদের বলবো, নিজেদের আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ব্যর্থ ও অসফল লোক কারা? তারা হলো সেইসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের যাবতীয় চেষ্টা সাধনা বিপথগামী হয়েছে। [অর্থাৎ মানুষের চেষ্টাসাধনার মূল উদ্দেশ্য হাসিলের পথে ধাবিত হয়েছে।] অথচ, তারা মনে করছে যে তারা দারুণ ভালো কাজ করছে। এরা হলো সেইসব লোক, যারা তাদের মালিকের আয়াতসমূহ মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তাঁর নিকট উপস্থিত হবার বিষয়টিও বিশ্বাস করেনি। তাই তাদের যাবতীয় আমল নিষ্ফল [শূণ্য] হয়ে গেলো। কিয়ামতের দিন আমরা তাদের কোনো গুরুত্বই দেব না। [সূরা আল কাহাফঃ ৩-৫]
খ. এ হচ্ছে আ’দ [জাতি], যারা তাদের প্রভুর বিধান মানতে অস্বীকার করেছিলো এবং তাঁর রাসূলদের আনুগত্য পরিহার করেছিলো আর অনুগামী হয়েছিলো সত্যদ্বীন অমান্যকারী প্রত্যেক দাম্ভিক দুর্দন্ড দুশমনের। [সূরা হুদঃ ৫৯]
গ. আমরা আমাদের নিদর্শন ও সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ মূসাকে ফিরাউন আর তার রাজন্যবর্গের প্রতি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা ফিরাউনের নির্দেশেরই অনুগামী হলো, অথচ ফিরাউনের নির্দেশ সঠিক ছিলোনা । [সূরা হুদঃ ৯২]
ঘ. এমন কোনো ব্যক্তির আনুগত্য করোনা, যার অন্তরকে আমরা আমাদের স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে স্বীয় কামনা বাসনার অনুগামী হবার নীতি গ্রহণ করেছে আর যার কর্মনীতিই সীমালংঘমূলক। [সূরা আল কাহাফঃ ২৮]
ঙ. হে মুহাম্মদ! বলো, আমার প্রভু অশ্লীলতাকে তার গোপনীয় ও প্রকাশ্য সকল দিক সমেত, পাপ কাজকে, অন্যায়ভাবে পরস্পরের প্রতি বাড়াবাড়ি করাকে এবং আল্লাহ প্রদত্ত প্রমাণ ছাড়াই কাউকেও আল্লাহর প্রতিপক্ষ বানানোকে হারাম করে দিয়েছেন। [সূরা আল আ’রাফঃ ৩৩]
চ. সার্বভৌম ক্ষমতা কেবলমাত্র আল্লাহর। তাঁর নির্দেশ হলো, তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারো গোলামী করোনা। [ সূরা ইউসূফঃ ৪০]
ছ. সঠিক পথ স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেবার পরও যে ব্যক্তি রাসূলের সা. সাথে বিরোধ করবে এবং মুমিনদের নীতি আদর্শের বিপরীত পথে চলবে, তাকে আমরা সেদিকে চালাবো, যেদিকে সে নিজেই মোড় নিয়েছে। আর তাকে আমরা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো, যা খুবই নিকৃষ্ট স্থান। [সূরা আন নিসাঃ ১১৫]
এগুলো হলো কুরআনের অকাট্য সুস্পষ্ট নির্দেশনাবলী। এরকম আয়াত আরো রয়েছে। এগুলোতে সন্দেহ সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই।
পঞ্চমত :
মুসলমানরা ততক্ষন পর্যন্ত তাদের ঈমানের দাবী পূরণ করতে পারেনা, যতক্ষণ না তারা ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে। আল্লাহর আইনের বিজয় ও প্রতিষ্ঠা ছাড়া মুসলমানরা পরিপূর্ণ মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করতে পারেনা। তাই তাদের দ্বীন ও ঈমানের দাবীই হলো ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা এবং নিজেদের যাবতীয় বিষয়াদি আল্লাহর আইনের ভিত্তিতে মীমাংসা ও পরিচালিত করা। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যেই নবীগণ প্রেরিত হয়েছেন।
সে জন্যেই তো হিজরতের পূর্বে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জবানীতে এই দোয়া করানো হয়েছে :
“প্রার্থনা করোঃ প্রভূ, আমাকে যেখানেই নিয়ে যাবে সত্যতার সাথে নিয়ে যেয়ো। আর যেখানে থেকেই বের করবে সত্যতার সাথেই বের করো। আর তোমার পক্ষ থেকে একটি ক্ষমতাসীন কর্তৃত্বকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও।” [সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৮০]
অর্থাৎ, হয় আমাকেই ক্ষমতা দান করো, নয়তো অপর কোনো রাষ্ট্রকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও, যেনো আমি তার ক্ষমতার সাহায্য নিয়ে বিশ্বের এই মহাবিপর্যয়কে প্রতিরোধ ও সংশোধন করতে পারি। যেনো অশ্লীলতা ও পাপের এই প্লাবনের মোকাবিলা করতে পারি। যেনো তোমার সুবিচারপূর্ণ আইনকে কার্যকর করতে পারি। হাসান বসরী এবং কাতাদা (র) এ আয়াতের এই তাফসীরই করেছেন। ইবনে কাসীর এবং ইবনে জরীরের মতো মর্যাদাবান মুফাসসিরগণও এ মতই প্রকাশ করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন এদেরকে যদি আমি পৃথিবীতে শাসন কর্তৃত্ব ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দান করি, তাহলে এরা নামায কায়েম করবে, যাকাত দিবে, সৎকাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় ও পাপ কাজ হতে লোকদের বিরত রাখবে।” [সূরা আল হাজ্জ: ৪১]
এ থেকে প্রমাণ হলো, ইসলাম বিশ্বে যে সংস্কার সংশোধন চায়, তা শুধুমাত্র উপদেশ নসীহতের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারেনা। তা কার্যকর করার জন্যে রাষ্ট্রক্ষমতাও অপরিহার্য। তাছাড়া আল্লাহ নিজেই যখন তার নবীকে এই দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, তখন তা থেকে তো একথা পরিষ্কারভাবেই প্রমাণ হয় যে, আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠা করা, তাঁর শরীয়াকে কার্যকর করা এবং তার আইন ও বিধানকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা পেতে চাওয়া এবং তা পাওয়ার জন্যে চেষ্টা সংগ্রাম করা যে শুধু জায়েয তাই নয়, বরঞ্চ অত্যাবশ্যকীয়।
যারা এই কাজকে দুনিয়া পূজা বা দুনিয়াদারী বলে মনে করে, তারা সাংঘাতিক ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত। তবে একথা সত্য, যদি কেউ নিজের জন্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে চায়, তবে তা নিসন্দেহে দুনিয়া পূজা। কিন্তু ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর করার জন্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা পেতে চাওয়া কোনোক্রমেই দুনিয়া পূজা হতে পারেনা। বরং আল্লাহর গোলামী করার প্রকৃত দাবীই এটা।
বি. দ্র. : এখানে অনেকগুলো কুরআনের আয়াত সংকলন করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরো আয়াত তুলে ধরা যায়নি প্রবন্ধের আকার বড় হওয়ার আশংকায়। আপনারা মেহেরবানি করে কুরআন থেকে আয়াতগুলো পড়ে নিবেন। বেশ চমৎকৃত হবেন একথা নিশ্চিত।