অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া বলেন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই বলেন, ড্রইংরুমে বসে আলাপ বলেন কিংবা রাস্তার চায়ের দোকানে- সবচেয়ে বেশী যে বিষয়টি আলোচনা হয় তাহলো রাজনীতি। আর দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি আলাপ হয় তাহলো অর্থনীতি। মানুষের নিত্য নৈমত্তিক চাহিদা পূরনের সংগ্রামের উপাখ্যান। আর কি করা যায়, এরপর কি করা যায়? কি করলে আয় আরো বাড়ানো যায় ইত্যাদি।
এই সব আলাপের মাঝে যে সমস্যাটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভয়াবহ আকারে বেড়ে গিয়েছে তা হলো অশ্লীলতা আর অসামাজিক কার্যকলাপের ছড়াছড়ি। এই সমস্যাটি টেলিভিশন, মোবাইল আর ইন্টারনেটের বদৌলতে মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারন মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এমনকি বাবা-মা বেশ ভাল ধর্ম চর্চা করেন এমন পরিবারগুলোতেও গোপনে ছড়িয়ে পড়ছে এই ব্যধি। মানুষের সমাজে ঘুনপোকা হয়ে এই সংকটটা যেন ক্রমশ শুধু বেড়েই যাচ্ছে। প্রতিদিন পত্রিকায়, ইউটিউবে এরকম গল্প চলে আসছে যা ইংগিত করছে যে সমাজে সম্পর্কের অস্থিরতা আর বিকৃতি কি বিভৎসরূপে বেড়ে চলেছে।
সর্বশেষ যে ঘটনাটি আমাদের সামনে চিন্তার নতুন খোরাক খুলে দিয়েছে তাহলো চট্টগ্রামের চিকিৎসক ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যা। পরকীয়ার কারনে অনেক স্ত্রী এর আগে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে, আত্মহত্যাও করেছে অনেকেই। কিন্তু স্বামী আত্মহত্যা করেছে তাও সমাজের একজন শিক্ষিত, মার্জিত এবং পেশায় চিকিৎসক একজন মানুষের এহেন আত্মহত্যা অনেককেই ভাবিয়ে তুলেছে।
অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তার স্ত্রী ডা. মিতু নাকি স্বামী ছাড়া আরো অনেক পুরুষের সাথেই অনৈতিক ও অবৈধ শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। অনেকেই আকাশ আর মিতুর এই সম্পর্ক নিয়ে নানা বিশ্লেষন করছেন, কেউ কেউ আকাশের ভুল বের করছেন, কেউ মিতুকে পতিতা বলছেন। কিন্তু আসলে সমস্যা কি এখানে?
এই ঘটনাটি আমাদের সমাজের অবক্ষয়, চরিত্রের অধ:পতন এবং বিবাহ নামক বৈধ সম্পর্কের মারাত্মক ধরনের অপব্যবহারকে আমাদের সামনে উম্মোচন করে দিয়েছে। একজন ছেলে বা মেয়ে বিবাহিত করার পরেও ঠিক কোন কারনে আরেকজন মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরী করে, কিভাবে স্বামী বা শাশুড়িরা বাসায় থাকার পরেও একজন স্ত্রী দিনের পর দিন বা রাতের বেলায় পরপুরুষের সাথে হোটেলে থাকার সুযোগ পায়- এসব মৌলিক প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে।
স্বামী বা পিতামাতা বাসায় থাকার পরও একজন সন্তান কিভাবে আরেকজন মেয়েকে বাসায় এনে বিয়ে ছাড়াই রাত কাটাতে পারে? ডা. আকাশের ঘটনার বাইরে গিয়ে আরেকটি ঘটনা আলোচনা করি। প্রখ্যাত ইউটিউবার সালমান মুক্তাদিরের সাথে তার কথিত প্রেমিকা জেসিয়া ইসলামের প্রেম প্রসংগটাও সামাজিক অবক্ষয়ের আরেকটি জ্বলজ্যান্ত উদাহরন। সালমান আর জেসিয়ার সম্পর্কটি তাদের ঘনিষ্ঠজনদের সবাই আগে থেকেই জানতো। এমনকি ওদের বাবা-মাও। এমনকি আমজনতাও তাদের দুজনের নানা ধরনের ঘনিষ্ঠ ভিডিও শেয়ার করার সুবাধে এই সম্পর্কটি নিয়ে অবগত ছিলো।
অতি সম্প্রতি এই দুজনের সম্পর্কে ফাটল ধরে। গভীর রাতে জেসিয়া সালমানের বাসায় গিয়ে ভাংচুর করে। সালমানের মা এবং সালমান বাসায় থাকলেও তারা দরজা খুলেননি, জেসিয়াকে বাসায় ঢুকতে দেননি। পরবর্তীতে সালমানের মা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সালমান সেদিন রাতে ওর কিছু বান্ধবীদেরকে নিয়ে ঘরে মুভি দেখছিল। এরকম নাকি সালমান প্রায়শই করে। এমনকি জেসিয়াও সালমানের বাসায় প্রায়ই থাকতো। বিয়ে ছাড়া সালমানের বাসায় রাতবিরাতে জেসিয়ার যাতায়াতের বিষয়টি কনফার্ম করেছে সালমানের বাড়ির প্রতিবেশীরাও। যাক, জেসিয়ার সেই ভাংচুরের ঘটনার পর অনেক তিক্ত সত্যই বেরিয়ে আসতে শুরু করে। জানা যায়, ওদের সম্পর্ক আর নেই। আর সর্বশেষ নাকি জেসিয়া আর সালমানের অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। বলা বাহুল্য, এর আগে একটি বেসরকারী রেডিওতে সালমান আর জেসিয়া সাক্ষাতকার দিয়েছে যেখানে তারা বিয়ে বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের পক্ষে সাফাই গেয়েছে।
ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ যেমন শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের ছেলে, তার স্ত্রীও মিতুও পেশায় চিকিৎসক, শিক্ষিতা। অপরদিকে সালমানের বাবাও একজন প্রতিষ্ঠিত সরকারী চাকুরীজীবি। সালমান নিজেও অনেক অল্প বয়সে অনেক বেশী টাকা উপার্জনকারী একজন মানুষ। আর তার প্রেমিকা জেসিয়া সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে এসেছেন।
তারমানে অশ্লীলতা আর পাপাচারের জঘন্য ভাইরাস এখন এই ধরনের পরিবারগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। আর নাম না জানা অসংখ্য পরিবারেও এখন এসব ওপেন সিক্রেট। কলেজ বা ভাসির্টির ক্যাম্পাসেও এখন একাধিক প্রেম করা, সকলের সাথেই শারীরিক সম্পর্ক তৈরী করার মত বিষয়গুলো এখন কমন হয়ে গেছে। আমরা কি টের পাচ্ছি, আমাদের অগোচরে আমাদেরই বাসায়, আমাদেরই পরিবারে কিংবা আমাদের সমাজে এই পাপাচার ক্যান্সার আকারে কিভাবে ছড়িয়ে পড়ছে?
এ থেকে বাঁচতে গেলে ধর্মীয় অনুশাসন বিশেষ করে ইসলামের দিক নির্দেশনা মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক নারী ও পুরুষ উভয়কেই পর্দা করার ব্যপারে জোর নির্দেশ আরোপ করেছেন।
‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশ্য, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের উপর ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা নূর : আয়াত ৩১)