অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশকে মাদকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছেলে-মেয়ে যাতে মাদকে না জড়ায় সেজন্য বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তিনি প্রতিনিয়ত অভিভাবকদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। মাদক অভিযান চালাতে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে নির্দেশও দিয়েছেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেছেন। তাদের অভিযানে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কয়েকজন করে মারা যাচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার রাতে ফেনী, যশোর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর ও টাঙ্গাইলে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৬ জন নিহত হয়েছে। পুলিশ বলছে, ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই মাদক ব্যবসায়ী।
সরকারের এই মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে নিহতদেরকে পুলিশ মাদক ব্যবসায়ী দাবি করলেও তারা আসলে মাদক ব্যবসায়ী কি না এনিয়ে মানুষের মনে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
কারণ, ইতিপূর্বে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তদন্তে যাদের নাম আসছে তাদের অধিকাংশই সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে করা মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে কয়েক ডজন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতার নাম। আর এই মাদক কেনাবেচার নিরাপদ স্থান হিসেবে তারা ব্যবহার করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আবাসিক হলগুলো। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলকে তারা এখন মাদকের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ৩৮ জনের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২০ জন হলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। এর মধ্যে যুবলীগের দুজন নেতা রয়েছে।
এই তালিকায় দেখা গেছে, মাদক ব্যবসায় জড়িত ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে আটজন ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, দুজন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, তিনজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেতা, পাঁচজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মী এবং দুজন ধানমন্ডি থানা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক শীর্ষস্থানীয় নেতা।
তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তিন সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু, নাজমুল হক ও নিশীতা ইকবাল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল পাঠান ওরফে সেতু ও দারুস সালাম ওরফে শাকিল, আপ্যায়ন সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ, উপ পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম ওরফে সোহাগ ও উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহাবুবুল ইসলাম ওরফে প্রিন্স।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক এহতেশামুল হাসান ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ওয়াসিম ভূঁইয়ার নামও রয়েছে।
এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় শহীদুল্লাহ্ হল শাখার সাবেক সহসভাপতি লিজামুল হক, মুহসীন হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আপেল মাহমুদ, ছাত্রলীগের বঙ্গবন্ধু হল শাখার সহসম্পাদক কামরুজ্জামান, শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসানের নাম মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু, ইতিমধ্যে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে যারা মারা যাচ্ছেন সবাই অখ্যাত। গুলি করে মারার পর পুলিশ বলছে সে মাদক ব্যবসায়ী ছিল। আর তালিকা ভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাইরে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এদেশে মাদকের প্রধান আমদানি কারক হলেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কক্সবাজারের আব্দুর রহমান বদি। আর বদির আমদানিকৃত মাদক দিয়ে সারাদেশে ব্যবসা করছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতারা। তারা হচ্ছে এমপি বদির মাদকের প্রধান ডিলার। সরকার যদি সত্যিকার অর্থেই দেশকে মাদকমুক্ত করতে চায় তাহলে মাদকের প্রধান আমদানিকারক এমপি বদি ও তার প্রধান ডিলার তালিকাভূক্ত ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদেরকে আগে ধরতে হবে।
কেউ কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী যদি দেশকে মাদকমুক্তই করতে চান তাহলে আগে দেশকে ছাত্রলীগমুক্ত করতে হবে। কারণ, দেশের আনাচে কানাচে ছাত্রলীগ নেতারাই মাদক বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। ছাত্রলীগের এই মাদকব্যবসায়ী নেতাদেরকে ক্রসফায়ার দিলেই দেশ মাদকমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।