অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কিছু দিন আগে হঠাৎ করেই সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী আবিষ্কার করলেন সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি সংস্থার জরিপে শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। এমনকি মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীরা শেখ হাসিনাকে এজন্য ধন্যবাদও দিলেন। আর এ সংবাদটি সরকারের কয়েকটি গৃহপালিত গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করলো।
তবে, শেখ হাসিনা বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রীর সেই খবরটি তখন মূলধারার কোনো গণমাধ্যম কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। পরে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক যে সংস্থার নাম বলা হয়েছে আসলে এই নামে শুধু সিঙ্গাপুর নয়, পৃথিবীতে কোনো সংস্থার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এনিয়ে পরে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তীব্র সমালোচনা করেছেন। কিন্তু, সরকারের পক্ষ থেকে এসব সমালোচনার কোনো জবাব দেয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই ভুয়া জরিপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
আজ রোববার আবার হঠাৎ করে আরেক জরিপের তথ্য দিয়ে সজিব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়ে জানালেন তার মা শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট নামে অখ্যাত একটি সংস্থার ওয়েব সাইটের লিংক দিয়েছেন।
এমন একটি অজ্ঞাত ও অখ্যাত সংস্থা এই জরিপ করেছে যার নাম বাংলাদেশের কোনো নাগরিক আগে শুনেনি। আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও কোনো গুরুত্ব পায়নি সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠানটি এতই অখ্যাত ও অজ্ঞাত যে গত ২৬ এপ্রিল জরিপের ফলাফল তাদের সাইটে আপলোড করার পর ২৯ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোনো গণমাধ্যমই তা জানতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই এর সাইটে জরিপের ফলাফল নিউজ আকারে প্রকাশ করে জয় তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন সেই কথিত জরিপের কথা।
জরিপকারী প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষকে তারা কী প্রশ্ন করেছেন সেটা উল্লেখ করেননি। শুধু উত্তরগুলো প্রকাশ করেছেন। উত্তরে দেখা যাচ্ছে তারা শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান সরকারের ব্যাপক মাত্রায় প্রশংসা করেছেন। বিপরীতে বিএনপি বা জিয়াউর রহমানের কেবল সমালোচনাই করা হয়েছে। এতেই বুঝা যায় যে, জরিপে তাদের প্রশ্নের ধরণ কেমন ছিলো। মন্তব্যগুলোতে এটাও অনেকটা স্পষ্ট, যাদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী। এদের একজনও সাধারণ মানুষ নয়।
অন্যদিকে, কয়েকজন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ময়মনসিংহের একজন বলেছেন, শেখ হাসিনা উচ্চশিক্ষিত আর খালেদা জিয়ার পরিবারের লোকজন অশিক্ষিত।
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন সৃষ্টি হয় যে, দেশের এত সমস্যা বাদ দিয়ে জরিপকারী প্রতিষ্ঠান খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের পড়ালেখা নিয়ে প্রশ্ন করেন কেন? এতে প্রমাণিত হয় যে, এ জরিপ আসলে ঘরে বসে করা হয়েছে। এটা মাঠ রিপোর্ট নয়। এটা টেবিল রিপোর্ট।
তারপর জামায়াতে ইসলামী নিয়ে বলা হয়েছে যে, জরিপে অংশগ্রহণকারী একজনও জামায়াতকে সমর্থন করেনি। এখানেও বড় ধরণের অসঙ্গতি রয়েছে।
এছাড়া সংস্থাটি তাদের রিপোর্টে বলেছে, নিরাপত্তা নিয়ে মানুষ সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট। আসলে এই সংস্থার দৃষ্টিতে দেশে কোনো সমস্যা নেই।
অথচ, মাত্র অল্প কিছু দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে। গণমাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রিত। মানুষের মতপ্রকাশের কোনো স্বাধীনতা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিনাবিচারে হত্যা সব সীমা অতিক্রম করেছে। কিন্তু, অখ্যাত এই সংস্থা বলছে ভিন্ন কথা।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ বলছেন, অখ্যাত এই প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের টাকায় এই কথিত টেবিল জরিপ তৈরি করেছে। নিজের মাকে তুলে ধরতে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ করে অখ্যাত, অজ্ঞাত ও ভুয়া সংস্থাকে দিয়ে জরিপ করিয়েছেন জয়।
তারা বলছেন, শেখ হাসিনা যদি এতই জনপ্রিয় হয়ে থাকেন তাহলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক। এরপরই দেখা যাবে তার জনপ্রিয়তা কত নম্বরে আছে।