বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর তার মুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই শান্তিপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনকেও গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। আগামী মে দিবসে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক দলের উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ করতে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দফায় দফায় প্রস্তুতি সভাও করা হচ্ছে। ওই দিন ঢাকায় বিশাল শোডাউন করতে চায় বিএনপি। ঢাকা এবং এর পাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা সে দিন অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ইতোমধ্যে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর ঘোষিত এক সপ্তাহের কর্মসূচির মধ্যে পাঁচ দিন শেষ হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও আরোগ্য কামনা করে বাদ জুমা দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং আগামীকাল রোববার দলের উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এ দিকে আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
জানা গেছে, নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পর। তার মুক্তিই এখন বিএনপির প্রধান লক্ষ্য। এর আগে নির্বাচন নয়। কারণ বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি যাবে না সেটি একান্তই নির্ভর করছে দলীয় প্রধানের মুক্তির বিষয়টির ওপর। সেই সাথে ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত হলেই বিএনপি নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ইতোমধ্যে দেশের বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে বিএনপির সিনিয়র ও তৃণমূল নেতারা তাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি। দলটির নেতাদের দাবি অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াসহ সব নেতাকর্মীকে মুক্তি দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করে নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। যাতে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রচারণার জন্য সমান সুবিধা পায়। বিশেষ করে ভোটারেরা যাতে নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রহসনের নির্বাচন হবে। কিন্তু সে ধরনের নির্বাচন জনগণ আর হতে দেবে না।
দলীয় সূত্র জানায়, হাইকোর্টের দেয়া খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপরে আপিলের ওপর শুনানি হবে ৮ মে। ওই দিনকে ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের যেন আগ্রহের শেষ নেই। সে দিন ঢাকায় বিশাল জমায়েতের কৌশল তৈরি করছে বিএনপি। তবে সে দিন কোনো কর্মসূচি দেয়া না হলেও নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন। ইতোমধ্যে এক সপ্তাহের টানা কর্মসূচিও শেষপর্যায়ে। রাজধানীতে বিােভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এভাবে আরো কিছুদিন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। রমজানেও থাকবে নানা কর্মসূচি। যাতে করে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখা যায়। পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথেও যোগাযোগ থাকবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আড়াই মাস হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা খালেদা জিয়াকে এ ফ্যাসিবাদী সরকার অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছে। পরিত্যক্ত ও স্যাঁতসেঁতে একটা ঘরের মধ্যে রেখেছে। কারাগারে ক্রমান্বয়ে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে। আমরা কোনো খবর পাচ্ছি না। পরিবারের সদস্যরা (মঙ্গলবার) তার সাথে দেখা করার পর জেনেছি তিনি এতই অসুস্থ যে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচ তলায় নামতে পারেননি।
তিনি বলেন, দেশনেত্রীকে আটকিয়ে রাখার একটি মাত্র কারণ হচ্ছে যে, এ সরকার খুব আতঙ্কিত। যদি খালেদা জিয়া বাইরে থাকেন তাহলে গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলনকে কোনোমতেই প্রতিরোধ করতে সফল হবেন না এবং তারা মতায় অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। এ অবস্থার পরিপ্রেেিত আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকা। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। অবশ্যই তাকে মুক্ত করে আনতে হবে। তার মুক্তি আমাদের একমাত্র ল্য।
জানা গেছে, আগামী পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ঢাকায় একটি শ্রমিক সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে দেখা করে কথাও বলেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। ওই সমাবেশে ব্যাপক শোডাউনের চিন্তা আছে বিএনপির। সমাবেশের ব্যাপারে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদন করেছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। এখনো অনুমিত মেলেনি। যদি অনুমতি না মেলে তাহলে সে দিনই ঢাকায় একটি শ্রমিক র্যালি করারও বিকল্প চিন্তা আছে বলে কয়েকজন নেতা জানান। তারপর ফের নতুন কর্মসূচি দেবে দলটি। প্রত্যেকটি কর্মসূচিতেই বড় ধরনের শোডাউন হবে।
শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা অনেক আগেই ডিএমপির কাছে আবেদন করেছি পয়লা মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশ করার জন্য। কিন্তু কিছুই বলেনি। এরপরও আমরা সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছি। অনুমতি পেলেই সমাবেশ করব। অনুমতি না দিলে র্যালি করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মানবপ্রাচীর, ঢাকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত মানববন্ধন করা হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে আবারো সমাবেশের অনুমতি চাইবে বিএনপি। এতে ব্যাপক শোডাউনের চিন্তা রয়েছে। এর মাধ্যমে বিএনপি সরকারকে যে বার্তা দিতে চায় তা হলো যে, জনগণ বিএনপির সাথেই আছে।
বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই। এখনই কোনো কঠোর আন্দোলনে গিয়ে শক্তি খরচ করতে চায় না বিএনপির হাইকমান্ড। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাড়াবেন। ক্রমান্বয়ে আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। এভাবেই একপর্যায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যেতে চায় বিএনপি।
দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ অবৈধ সরকার খালেদা জিয়া এবং বিএনপিকে বাইরে রেখে আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি পাতানো খেলা খেলতে চায়। কিন্তু সেই খেলা তারা আর খেলতে পারবে না। জনগণ এ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা শুধু সুযোগ পেলে ভোটের মাধ্যমে তার জবাব দেবেন। তিনি বলেন, নিয়ম রক্ষা ও সংবিধান রক্ষার নির্বাচনের কথা বলে সরকার ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। আমরা বলতে চাই অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। খালেদা জিয়া ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। এভাবে আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সময় মতোই আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। রমজান মাসেও বিএনপির কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র: নয়াদিগন্ত