জনগণের উত্তাল প্রতিবাদে বর্তমান সরকারকে বিদায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নেতার্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-কর্মসূচি থেকে ‘রাজনৈতিক সুবিধা’ নিতে সরকারই নানাভাবে উস্কানি দেবে, তবে তাতে পা দেয়া যাবে না।
শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারা দেশের জেলা, মহানগর ও উপজেলায় একসঙ্গে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্বাক্ষর করতে পারবেন।
শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আমরা আদায় করব। আমি দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানব, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করুন, রাজপথে নেমে আসুন, কোনো বিশৃঙ্খলা করবেন না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বর্তমান অবৈধ সরকার মিথ্যা, সাজানো মামলায় তাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক করে রেখেছে। কারাগার থেকে তাকে মুক্ত করবার জন্য, দেশের হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র মুক্ত করবার জন্য, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। সেই আন্দোলন আজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। তার অংশ হিসেবে আজকের এই গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, এ কর্মসূচি চলতে থাকবে।
গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা অনির্বাচিত, অনৈক সরকারের পদত্যাগ ও খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রকে কারাগারে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি দেশের সাধারণ মানুষ ও গণতন্ত্রের মুক্তি।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে এবং দেশের মানুষ আবারও শান্তিতে থাকতে পারবে।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেই বলেছেন, বিএনপির অক্ষমতার কারণে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। আমি তাকে বলতে চাই- বিএনপি সন্ত্রাস নয়, শান্তিতে বিশ্বাস করে। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে দুর্বলতা ভাবলে ভুল করবেন। আপনারা আমাদের উস্কানি দিচ্ছেন, যাতে সেই সুযোগে নিজেরা অপকর্ম, নাশকতা করে বিএনপির ওপর দোষ চাপাতে পারেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে।
এরপর থেকেই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসেছে বিএনপি। রায়ের প্রতিবাদে ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে দলের নেতাকর্মীরা। ১০ ফেব্রুয়ারি থানা, উপজেলা, জেলা মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ, ১২ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন, ১৩ ফেব্রুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি ও ১৪ ফেব্রুয়ারি অনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
পাশাপাশি বিদেশি কূটনৈতিক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি, পেশাজীবী, আইনজীবী ২০ দলীয় জোটসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের জ্যৈষ্ঠ নেতারা।
সূত্র: যুগান্তর