অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সরকারের বাধা-বিপত্তি, গ্রেফতার-হয়রানি উপেক্ষা করে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা সফলভাবেই করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ সভা করতে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের জন্য আবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিএনপির কাছে হল ভাড়া দেয়নি।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের উপর মহলের নির্দেশেই কর্তৃপক্ষ বিএনপিকে সভা করার অনুমতি দেয়নি। আর বিএনপিও অভিযোগ করেছে যে নির্বাহী কমিটির সভা করতে সরকার তাদেরকে কোথাও অনুমতি দিচ্ছে না। সর্বশেষ বনানীর পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ানেই তাদেরকে নির্বাহী কমিটির সভা করতে হয়েছে।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির সভাটি বিএনপির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জানা গেছে, আগামী নির্বাচনসহ দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খালেদা জিয়া নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাহী কমিটির সভায় খালেদা জিয়া ৪১টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তবে, এসব আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে খালেদা জিয়ার মামলার রায় ও রায় পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সাংগঠনিক বিষয়াদি নিয়ে। যদি রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হয় তাহলে তাকে জেলে যেতে হবে। এ অবস্থায় কীভাবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছেড়ে সবাই এক হয়ে দল চালাবে সেই বিষয়ে তিনি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সময়ে তিনি জেলে যাওয়ার পর দলের অনেকেই খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন। সেই বিষয়টিও তিনি গতকাল উল্লেখ করে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, বার বার ভুল করলে ক্ষমা করা হবে না।
বিগত ৯ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গ্রেফতার-হয়রানির শিকার হচ্ছে। আর সরকার পতনের কোনো আন্দোলনই সফল হচ্ছে না। আগামীতেও ক্ষমতায় আসতে পারবে কিনা এনিয়েও তাদের মধ্যে সন্দেহ সংশয় দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন অনেকটাই হতাশ। এ অবস্থায় দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদেরকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তিনি নেতাকর্মীদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে আগামীতে তারা ক্ষমতায় আসবেন। তিনি জেলে গেলেও যাতে তারা সরকারের ফাঁদে পা না দেন।
বিশেষ করে নেতাকর্মীদেরকে চাঙ্গা করতে খালেদা জিয়া বলেছেন, কোনো ভয় নেই, প্রশাসন, পুলিশ, জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনী বিএনপির সঙ্গে আছে।
খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সকল মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেছে। রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মহল খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এর রহস্য বের করার চেষ্টা করছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে একেবারে ফেলে দেয়াও যায় না। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকার তার পছন্দের লোকদের নিয়োগ দিলেও মাঠ পর্যায়ে এখনো অধিকাংশ কর্মকর্তা বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা যদি বেঁকে বসেন তাহলে সরকার চাইলেও বিএনপি-জামায়াতকে ঠেকাতে পারবে না।
কারণ, বর্তমানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনা বাহিনীসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকার তার পছন্দের লোকদেরকে বসিয়েছে। সবাই আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত লোক হিসেবে পরিচিত। দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের পেশাদারিত্ব ভুলে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সরকারের মন্ত্রীদের মতো বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারাও সরকারি দলের কোনো পর্যায়ের নেতা হবেন। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য খুবই গুরুত্ব বহন করে বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
একটি সূত্র অ্যানালাইসিস বিডিকে জানায়, খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের পর থেকে সরকারের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনিয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের রহস্য বের করার জন্য তিনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের নেতারাও শেখ হাসিনার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তারা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার বক্তব্য যদি সত্য হয় তাহলে আগামী দিনে বিএনপির আন্দোলন দমানো কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি বিএনপি বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান না নেয় তাহলে শুধু দলের নেতাকর্মী দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।