সাইফ মানিক
“আড়মোড়া ভেঙে ছাই ভস্মের ফিনিক্স জেগে ওঠে”। ঐতিহ্যের ধারার তুরস্ক গভীরভাবে ইসলামে বিশ্বাসী এরদোগানের হাত ধরে, পায়ে পায়ে এগিয়ে চলা, ইতিহাসের নানা বাঁক মাড়িয়ে সাফল্যের সূর্যস্নানে ইতিহাস বিচ্যুতির দায়মুক্তির পথে। সে যাই হোক তুরস্ক সম্পর্কে একটু জানা দরকার বাস্তবতা উপলব্ধির জন্যই।
সামরিক কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৩টি জলপথ এশিয়া ও ইউরোপীয় তুরস্ককে পৃথক করেছে। মর্মর সাগর, বসফরাস প্রণালী ও দার্দেনেল প্রণালী একত্রে কৃষ্ণসাগর থেকে ঈজীয় সাগরে যাওয়ার একমাত্র পথ তৈরি করেছে। গোটা মানব সভ্যতার ইতিহাস জুড়েই তুরস্ক এশিয়া ও ইউরোপের মানুষদের চলাচলের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে, যা তুরস্ককে দিয়ে চলছে বাড়তি সুবিধা।
পূর্ব-ইউরোপের এদেশটিতে ৭,৯৪,৬৩,৬৬৩ লোকের বাস। তাছাড়াও ইরাক ও সিরিয়ার উদ্বাস্তুরা তো আছেই। আয়তনের দিক দিয়ে রাশিয়া বাদে ইউরোপের যেকোন দেশের সক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে। ৭৮৩,৫৬২ বর্গকিলোমিটার যা চতুর্ভুজ আকৃতির স্বার্থকতাকে অন্য একটি মাত্রা দিয়েছে। পশ্চিমে এজিয় সাগর ও গ্রীস, দক্ষিণে ইরাক, উত্তর-পূর্বে জর্জিয়া, আর্মেনিয়া ও স্বায়ত্তশাসিত আজারবাইজান পূর্বে ইরান, দক্ষিণে ইরাক, সিরিয়া ও ভূমধ্যসাগর। তুরস্কের রয়েছে বিস্তৃত উপকূল যা দেশটির তিন চতুর্থাংশ গঠন করেছে। ইউরোপের সঙ্গমস্থলে দাঁড়িয়ে এদেশটি ইতিহাসের বিবর্তন ঘটিয়েছে বহুবার।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯২০ সালের ৩ মে তুর্কি সেনাবাহিনী নতুন করে যাত্রা শুরু করে সারাবিশ্বে সামরিক বাজেটে শীর্ষ ১৫ তে, ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট। ১৯৫২ সালে ন্যাটোতে যোগদান। অটোমানদের রাজ্যজয়ের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের দৃঢ়তা, দুর্ধর্ষ আজজেনেসারী বাহিনী একসময়ের সাগরপথের সম্রাট এ তুর্কিরা ভারত সাগর, দক্ষিণ চীনসাগর থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর মর্মর সাগরসহ প্রায় পৃথিবীর সকল প্রান্তে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় ছিল। তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিভাগে মোট ১০ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫৫০ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য রয়েছে। বর্তমান তুর্কি সেনাবাহিনীরও ইতিহাস কম নয়। নাজিমুদ্দিন আরবাকান সাইপ্রাসের মানুষকে গ্রীস নির্যাতন থেকে মুক্তি দিতে তুর্কি সাইপ্রাস গঠন করেন। সেখানে ৩৬ হাজার সেনা দায়িত্ব পালন করছে।
ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থান। ন্যাটোভুক্ত যে ৫টি দেশ নিয়ে যৌথ পরমাণু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তুরস্ক তার অন্যতম। এর বাকি সদস্য দেশগুলো হলো- বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ড।
২০০১ সালে আফগানেও দায়িত্ব পালন করে তুর্কি সেনারা। ন্যাটোর অধীনে শান্তিরক্ষা মিশনে সোমালিয়া, সাবেক যুগোস্লাভিয়া, উপসাগরীয় যুদ্ধে সহযোগিতা, ইসরাইল-লেবানন সংঘাত এড়াতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় ২০০৬ সালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যুদ্ধ জাহাজ ও ৭০০ সেনা মোতায়েন করে।
ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী দেশ তুরস্ক অবস্থানের দিক থেকে যুক্তরাস্ট্রের পরেই এর অবস্থান। দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা আর সাহসীকতার দিক থেকে কোন অংশে কম নয় বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগিয়ে। এ বাহিনী পশ্চিমা বলয়ে মিলেমিশে একাকার। বলা চলে মূলত পূর্ব ইউরোপের নিরাপত্তাদাতা।
এরদোগান যখন দেশকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করাচ্ছিল, অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপ, এশিয়া আমেরিকা, রাশিয়া, ইউক্রেন, ইরান সবার সাথে সম্পর্ক তৈরি করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এমন ভিত্তির উপর দাঁড় করান যা দেখে পশ্চিমারা ঈর্ষা করতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, এ যাবতকালের সকল ঋণ যা প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় তুরস্কের উপর চাপানো হয়েছিল। তা থেকে বের হয়ে আসতে অন্যশাসকদের মত আজারবাইজানকে বিক্রি না করে বরং পার্শ্ববর্তী দেশ গ্রিস দেওলিয়া হয়ে গেলে গ্রীসকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাবও দেন এরদোগান।
এখানেই শেষ নয়, ২০১৩ সালে মিসরে মুরসির সমর্থনে ব্রাদারহুডের প্রতি ব্যাপক সহানুভূতি প্রকাশ এবং মিশরের শাসকসহ সকলের সমালোচনা করেন। এছাড়াও পুরো পৃথিবীতে মসজিদ প্রতিষ্ঠা ও কূটনীতির আশ্রয় গ্রহণ করে মুসলমানদের হৃদয়ে স্থান করে নেন এরদোগান। মসজিদ উদ্বোধনে হাজার হাজার লোক তাকে দেখতে আসে। বিশেষ করে সেনা অভ্যুত্থান ঠেকানোর পর নায়ক বনে যান তিনি।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে ভারত পাকিস্তানে আক্রমণ করলে ছেড়ে দেবে না তুরস্ক এরদোগান এরকম মুসলিম বিশ্বের হয়ে কথা বলা ছাড়াও তুরস্কের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মুসলিম বিজ্ঞানীদের জীবন ও কর্ম। যেমন রোবটের জনক ১৩ শতকের অট্যোমান আলজাজারী। মাদরাসা মক্তব খুলে দেওয়া, মাদরাসায় পড়া ছাত্রদের চাকরির নিশ্চয়তা, উপবৃত্তিসহ সকল সুবিধা প্রদান। ঘনঘন ইসলামিক কনফারেন্স, সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা প্রদান। পৃথিবীর সকল মৌলিক ইসলামী দল ও মুসলিমদের অধিকার নিয়ে কথা বলা। জাতিসংঘ ও ওআইসিতে মুসলমানদের দাবি আদায়সহ নানা বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা। শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার ঘটানো।
আফ্রিকা মহাদেশে কূটনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা, সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে ব্যবসায়িক, সামরিক ও নিরাপত্তা চুক্তি করা। অনেক তথ্য আদান প্রদানসহ আরও কত কি! কাতারের মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি গড়া এবং তুর্কি সেনাদের অবস্থান করার ঘোষণা ভবিষ্যৎ-এর জন্য অর্থবহ একটা তাৎপর্য বহন করে।
সোমালিয়ার ভুখা, নাঙা মানুষের জন্য ওষুধ, খাদ্যসহ ১২২ মিলিয়ন সাহায্য প্রদান। আরাকানেও একই ধরনের সহযোগিতা বরং আরাকানে মুসলিম নিধনের দৃশ্য দেখে আমেনা-এরদোগানের চোখের অশ্রু বিশ্ববিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। সিরিয়ার আশ্রয় প্রার্থীদের আশ্রয়, খাদ্যসহ যা কিছুর প্রয়োজন সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান। ইরানের সাথে একটা ব্যবসায়িক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি যদিও ইরান মাঝে মাঝে তুরস্কের সমালোচনা করে চলেছে, মাত্রাটা একটু বেশিই বলা চলে।
চীনের সাথে ৩ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারের চুক্তি। যা ব্যয় হবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি উন্নয়নে এটি মেনে নেয়নি ন্যাটো। চীনের সাথে একধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির তড়িঘড়ি চেষ্টা যা অন্য পরাশক্তিরা ভাল চোখে দেখেনি।
পাকিস্তানের সাথে পূর্বের সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় সম্পর্ককে ভ্রাতৃসুলভ একটি যৌক্তিক পরিণতিতে যাওয়া। তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা দিয়ে পাকিস্তানের মিসাইল ও বিমান প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রকল্পে সহযোগিতা যা পাকিস্তান সরকারের সাথে তুরস্ককে মধুচন্দ্রিমায় আবদ্ধ করে ফেলেছে।
এরদোগানের যখন ক্ষমতায় আসার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিবিসি সাক্ষাৎকারে তুরস্কের শ্রেষ্ঠ নর্তকীকে বলা হয়েছিল একে পার্টি ক্ষমতায় আসলে তোমাদের নাচ বন্ধ হয়ে যাবে। নর্তকী সেদিন উত্তর দিয়েছিল নাচ বন্ধ হবে কিনা জানি না তবে একে পার্টি ক্ষমতায় আসলে সুতরস্কের সকল ক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন ঘটবে।
মুসলিম ইউরোপীয়দের উদ্দেশে এরদোগান বলেছিলেন ইউরোপে যারা আছে তাদের ন্যূনতম পাঁচটি করে সন্তান নিতে হবে। ইউরোপের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রগুলিতে তুর্কিদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
এই এরদোগানের হাত ধরেই তুর্কিরা পেয়েছে নতুন দিশা। সংবিধান সংশোধনীর কথা বলতে গিয়ে নতুন সংবিধানের মাধ্যমে তুর্কিদের জন্য উন্মোচিত হবে এক নতুন দিগন্ত। ফিরে পাবে হারানো ইতিহাসের গৌরব উজ্জ্বল অধ্যায়। তারা পাবে এক নতুন দিন।
ঠিক যখনি তুরস্ক এমনিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, যোগাযোগ, সকল ধরনের উন্নত ইনফ্রাস্টাকচার আর অর্থনীতির ঘোড়া ছুটিয়ে সামরিকসহ সকল অর্জন তুর্কিদের জন্য এরদোগান ও তুরস্কের জনগণ মিলে ছিনিয়ে আনছে, তখনি শুরু হয়েছে এক নতুন ষড়যন্ত্র।
একসময় পশ্চিমাদের পছন্দের প্রিয়পাত্র এরদোগান সম্পর্কে বারাক ওবামা বলেছিলেন, “গণতন্ত্র ও ইসলামকে একসাথে নিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনা করা যায় এরদোগানের তুরস্ক তা দেখিয়ে দিয়েছে।”
ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের সফল নায়ক এরদোগান কিন্তু সমস্যা বাধতে থাকে মূলত গ্রেটার মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে। এখানে গড়ে উঠবে একটি কুর্দি রাষ্ট্র। তুরস্ক প্রথমে আমেরিকার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জোবাইডেনের কথার অর্থ না বুঝলেও পরে বুঝে যায়। দক্ষিণ তুরস্ক, ইরাকে একটা অংশ ও সিরিয়ার একটি অংশ নিয়ে কুর্দি রাষ্ট্র গঠন। এখানেই বাধসাধে এরদোগান, শুরু হয় নতুন বাকযুদ্ধ। আমেরিকার সব নীতির সাথে একমত পোষণ না করে, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বিশ্বস্ত বন্ধু ন্যাটোর দ্বিতীয় শক্তিধর তুরস্ক। কখনও কখনও ইউরোপকেও ছেড়ে কথা বলেননি এরদোগান।
২০১৩ সালে গেজি পার্কের আন্দোলনকে শক্ত হাতে দমন করা, মুরসির মত আন্দোলনকে বাড়তে না দিয়ে সকল অন্যায় ও উদ্দেশ্যমূলক আন্দোলনকে দানাবাঁধার আগেই দমিয়ে দেওয়াতে সকলেই বুঝে ফেলে এরদোগানতো মুরসি না, এ হল দু’ধারী তরবারি।
এদিকে রাশিয়ার সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যান এরদোগান। রাশিয়ান পর্যটক আর নর্তকীতে টইটুম্বুর পুরো ইস্তাম্বুল। এদিকে ইউক্রেন, ক্রিমিয়া চায়নাসহ রাশিয়া ঘেঁষা মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর সাথে একটা সম্পর্কের নতুন মাত্রা সূচনা করে আবার মেক্সিকো, কিউবা সকল জায়গায় এরদোগানের বিচরণ মানতে নারাজ পশ্চিমারা। এসবগুলোই এরদোগান সেরে ফেলেছে কৌশলে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার মুরসির মত তাড়াহুড়ো করে ইসলামিক সংবিধানের পথে কিন্তু এরদোগান হাঁটেননি।
কারো কারো ধারণা, বর্ষিয়ান মধ্য বয়সের প্রারম্ভে দাঁড়িয়ে থাকা আব্দুল্লাহ গুলের ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয়তা আর বিচক্ষণ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষজ্ঞ, কূটনৈতিক ঝানু রাজনীতিবিদ, নিরেট ওসমানী খেলাফতে বিশ্বাসী উচ্চাভিলাসী আহমেদ দাবতগলুদের পরবর্তী ব্যাকআপ যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে কিনা তাও ভাবাচ্ছে পশ্চিমাদের।
তবুও ভাবনার কথা, এরদোগান মুখে যাই বলুক না কেন তার লিখিত কবিতা পশ্চিমাদের নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে, যে কবিতা রেনেসাঁর অর্থ বয়ে এনেছে তার্কিদের মনে-
মসজিদ আমাদের ব্যারাক
গম্বুজ আমাদের হেলমেট,
মিনার আমাদের বেয়নেট এবং
ঈমানদাররা আমাদের সৈনিক।
সবকিছু বিশ্লেষণ করে পশ্চিমা মিডিয়া দেখল আমাদের পছন্দের পাত্র, আমাদের বিশ্বস্ত দেশ, তুরস্ক আমাদের কথায় আর উঠেও না বসেও না। সবঠিক আছে মাঝে মাঝে কেন যেন বেঁকে বসে তবেতো ন্যাটো ইউরোপ ও আমেরিকার জন্য বিষফোঁড়া।
পশ্চিমা মিডিয়া এবার তুরস্কের বিষয় নিয়ে শুরু করে চুলচেরা বিশ্লেষণ, একদিকে ২ কোটি তুর্কি কুর্দিদের স্বাধীনতার মদদ দিতে থাকে, সাথে অভিযোগ তুলতে থাকে কুর্দি মানবাধিকার লঙ্ঘনের। অথচ ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার কাছে কুর্দি গেরিলারা সন্ত্রাসী সংগঠন। আর তাদেরকেই অস্ত্র, গোলাবারুদ ও প্রশিক্ষণ দিতে থাকে পশ্চিমারা।
এদিকে পশ্চিম মিডিয়া চিৎকার করে বলতে থাকে ছেঁকে ফেলো এরদোগানকে, সে আর এখন আমাদের মিত্র নয়। বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স পথ বাতলিয়ে দেয় সিআইএর মাধ্যমে সামরিক হস্তক্ষেপের। শুরু হয় এরদোগানকে ভর্ৎসনা, ডিকটেটর, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, নব্য সুলতান, তুলে ধরে অর্থনৈতিক দৈন্যতা।
এর সফল অভিযানের ক্রীড়নককে খুঁজে পায় পশ্চিমারা। এক সময়ের এরদোগানের বিশস্ত বন্ধু ফেইতুল্লাহ গুলানসহ ব্যবহার করা হয় তার পুরো নেটওয়ার্ক।
সিআইয়ের পরিকল্পনার আলোকে অভ্যুত্থান হওয়ার কথা ছিল আরও পরে, কিছুসংখ্যক সেনা অফিসার নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে তর সইছিল না। ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই ঘটিয়ে ফেলে রক্তাক্ত এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান।
এরদোগান তখন ছিলেন এজিয়ান সাগরতীরের অবসর যাপন কেন্দ্র মারসারিসে। এখানেও হত্যার চেষ্টা চলে কিন্তু আল্লাহ তাকে নিয়ে চলে ইস্তাম্বুলে কামাল আতার্তুক বিমান বন্দরে। মাঝখানে তিনি সিএনএনের তুর্কি ভাষার নিউজ চ্যানেলে মোবাইল ফোনে ভিডিও সাক্ষাৎকারে জনগণকে রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থান প্রতিহত করার ডাক দিলেন।
এবার তুর্কি জনগণ, দেশপ্রেমিক সৈনিক, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা সবাই সিদ্ধান্ত নিলেন বারবার হোঁচট খাওয়া গণতন্ত্র আর হারানো যাবে না।
জনগণ ফিরে তাকাল সোনালী অতীতের দিকে ১৯২৪ সালে খেলাফতের বিদায়। কামাল আতাতুর্ক ও তার অনুসারীরা তথা তার হাতে গড়া সেনাবাহিনী। তুরস্ককে সেক্যুলার ও আধুনিক করতে গিয়ে ধর্ম, কৃষ্টি, ইতিহাসসহ ইসলামী মূল্যবোধ ও খেলাফতের সকল চিন্তাশক্তিকে দাফন করতে আজান, মসজিদ, মক্তব, মাদরাসা, হিজাবসহ ইসলামী মূল্যবোধের সবকিছু তারা মুছে ফেলে।
ইউরোপ তাদের সামনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের মূলো ঝুলিয়ে ইউরোপীয় আদলে মদ, যৌনতার ছড়াছড়ি, আধুনিক হওয়ার নামে পোশাকের কি ঢং, বিজ্ঞান শাখা, আরবী অক্ষরের পরিবর্তে ল্যাটিন অক্ষরে তুর্কি ভাষা শাখা, মৌলবাদীদের ঝেঁটিয়ে বিদায় আরও কত কি তার ইয়ত্তা নেই। তবুও তারা আধুনিক ও ইউরোপীয় হতে পারলো না। জনগণ সব উজাড় করে ক্লান্ত হয়ে ইউরোপের পথে তবুও এলো না সুদিন। কামালের দর্শন শুধু নিয়েছে তুর্কিকে দেয়নি তেমন কিছুই। খেলাফত খতমের মধ্য দিয়ে তুরস্ক শুধু হারিয়েছে আর হারিয়েছে। আর ইউরোপ নামের মরীচিকায় পিষ্ট হয়েছে অর্থনীতি, জীবনবোধ, কল্যাণ আর আভিজাত্য।
আরও পড়ুন: এরদোগানের তুরস্ক : ইসলাম ও গণতন্ত্রের এক মডেল (২য় পর্ব)
সূত্র: সংগ্রাম