তিন মাস পর আগামীকাল দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার অনুপস্থিতির এই সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে ষোড়শ সংশোধনী রায় বাতিলের পটভূমিতে প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলছে। নানা গুজবে একটি গুমোট অবস্থারও সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কয়েকটি মামলায় খালেদা জিয়ার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। জানা গেছে, দেশে ফিরে বিএনপি চেয়ারপারসন আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি নজর দেবেন রাজনৈতিক কর্মসূচির দিকে। বেশ কিছু সাংগঠনিক বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে দ্রুত।
গত ১৫ জুলাই চিকিৎসা ও পরিবারের সাথে সময় কাটাতে লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। তার এই দীর্ঘ সফর একান্ত ব্যক্তিগত হলেও এর ‘রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক’ গুরুত্ব আছে বলে দলের সিনিয়র নেতারা বলেছেন। সফরকালে কূটনৈতিক পর্যায়ে একাধিক বৈঠকের খবর শোনা গেলেও দলটির তরফ থেকে কেউই তা নিশ্চিত করে বলেনি।
জানা গেছে, চলতি মাসের ২২ তারিখ লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কিন্তু পরপর তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় অনেকটা চ্যালেঞ্জিং মনোভাব নিয়েই ফেরার সময় চার দিন এগিয়ে আগামীকাল দেশে ফিরছেন তিনি। দেশে ফিরেই পরের দিন আইনি লড়াইয়ের অংশ হিসেবে আদালতে হাজির হবেন বিএনপি প্রধান।
চেয়াপারসনের ঘনিষ্ঠ দলের প্রভাবশালী এক নেতা গতকাল জানান, বেগম জিয়া কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাস করেন না। তিনি আপসহীন। সম্প্রতি কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা মহানগর হাকিম এবং বিশেষ জজ আদালতে তিনটি মামলায় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় প্রধান ফেরার সময় পরিবর্তন করে ১৮ অক্টোবর আসার সিদ্ধান্ত নেন। দেশে ফিরে তিনি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে আইনি লড়াই শুরু করবেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয়ে নজর দেবেন তিনি।
গত ৯ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালত খালেদা জিয়া বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর ১২ অক্টোবর মানহানির একটি মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম এবং একই দিনে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার শুনানিতে হাজির না হওয়ায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ আদালতের জজ মো: আক্তারুজ্জামান।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার নয়া দিগন্তকে বলেছেন, ১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম জিয়ার বিশেষ আদালতে হাজির হওয়ার তারিখ নির্ধারিত আছে। বুধবার দেশে ফিরে তিনি সুস্থ বোধ করলে নির্ধারিত তারিখেই আদালতে হাজির হবেন।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে সরকার। কিন্তু কোনো জেল-জুলুমকে খালেদা জিয়া কখেনো ভয় করেনি, আর করবেনও না। দলের নেতারা খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না। তারা বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সরকারের অবস্থা এমনিতেই ভালো নয়। এ সময় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে গ্রেফতার করে পরিস্থিতি ঘোলা করার মতো বোকামি সরকার করবে না।
জানা গেছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি না হলেও ২২ অক্টোবর দেশে ফিরতেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আগামী ২৩ ও ২৪ অক্টোবর দুই দিনের সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হওয়ার বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, সুষমা স্বরাজের সঙ্গে খালেদা জিয়ার এক ঘণ্টার বৈঠক হতে পারে। এখন পর্যন্ত দিনক্ষণ না জানালেও বৈঠক যে হবে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সে রকম প্রস্তুতিও রয়েছে বিএনপির।
জানা গেছে, দেশে ফিরে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মনোযোগ দেয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক বিষয়গুলোতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে বিএনপির নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণ ও কিছুটা রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবীর রিজভী নয়া দিগন্তকে বলেছেন, আগামীকাল বুধবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে ঢাকা পৌঁছবেন খালেদা জিয়া। দলীয় প্রধানের ফিরে আসার সময় বিমানবন্দরে বরাবরের মতোই উপস্থিত থাকবেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post