অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সরকার সমর্থক কথিত ইসলামি সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান কথিত মাওলানা মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঢাকার ২ হাজার ও সারাদেশে হাজার হাজার ভুয়া গণশিক্ষা কেন্দ্র দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কর্মরত আওয়ামী লীগপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধর্মমন্ত্রণায়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন।
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বাংলাদেশে একজন চরম বিতর্কিত ও সমালোচিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। সচেতন মানুষ তাকে সুবিধাবাদী ও প্রতারক হিসেবে জানে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সরকার মিছবাহুর রহমানসহ আরও বেশ কিছু এ ধরণের লোককে দীর্ঘদিন ধরেই লালন-পালন করে আসছে। এদেরকে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু এজেন্ডাও বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরমধ্যে প্রধান এজেন্ডা হল জামায়াত বিরোধীতা। সভা সেমিনার ও টকশোতে জামায়াতে ইসলামী ও দেশের হকপন্থি ইসলামী নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক হওয়ায় সরকার তাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়েছে।
জানা গেছে, মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ও তার পিতা আবদুর রহমান চৌধুরী ওরফে ছানু মিয়া স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। মৌলভীবাজার মহকুমা শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা ‘শতাব্দী’ এবং মোমিনুল হক রচিত ‘মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাস’ নামে বইতে তা উল্লেখ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা ও আরেকজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। রাজনগরের পাঁচগাঁও গণহত্যার সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন। তবে তিনি তা অস্বীকার করেন। ১৯৯৪ সালে রাজধানীতে সাপুড়িয়াদের একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন অপরাধের কারণে তিনি দুই বার জেল খেটেছেন।
২০১২ সালে জামায়াতের সাবেক আমির ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা সাক্ষীও দিয়েছে মিছবাহুর রহমান। ওই সময় সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধেও মিথ্যা-ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়েছিল। ব্যারিস্টার রাজ্জাককে যুদ্ধাপরাধী বানাতেও মিছবাহুর রহমানের চেষ্টার কমতি ছিল না। ব্যারিস্টার রাজ্জাক একবার মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানহানিকর মামলাও দায়ের করেছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারেও তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা তাকে প্রতারক এবং সুবিধাবাদি আলেম হিসেবেই চিনে।
এদিকে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর সুবিধা নিতে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী জামায়াত বিরোধীতার মিশন নিয়ে মাঠে নামে। সরকার তাকে পুরস্কার হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালনা বোর্ডের গভর্ন্সের পদ দেয়। এরপর থেকেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম আফজালের সঙ্গে মিলেমিশে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে শুরু হয় লুটপাট।
ইফা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কর্মরত আওয়ামী লীগপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শামীম আফজালসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ম সচিবের কাছে দুর্নীতি, লুটপাট ও অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেছে। দুর্নীতিবাজদের তালিকায় সরকার সমর্থক সংগঠন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কথিত মাওলানা মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নামও রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকার ২ হাজারসহ সারাদেশে হাজার হাজার ভুয়া গণশিক্ষা কেন্দ্র দেখিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোটি কোটি টাকা মিছবাহুর রহমান চৌধুরী লুটে নিচ্ছেন। ধর্ম সচিব এসব অভিযোগ তদন্ত করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
Discussion about this post