জুনায়েদ আব্বাসী
পহেলা বৈশাখে ভারতীয় সংস্কৃতি পুঁজারীদের অমঙ্গল যাত্রা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে তেহারিতে গরুর গোস্ত থাকায় কিছু দুস্কৃতিকারীরা ক্যান্টিন ভাঙচুর ও ম্যানেজারকে মারধর করেছে। গরুর গোস্তের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভও করেছে। এঘটনার পর জানা গেছে পূর্ব থেকেই নাকি চারুকলায় খাবারের সঙ্গে গরুর গোস্ত রান্না ও পরিবেশন নিষিদ্ধ করা আছে। আর তেহারীতে গরুর গোস্ত দেয়ার ঘটনাকে শোভাযাত্রা ভ-ুলের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন চারুকলা অনুষদের ডিন ও মঙ্গল পুঁজারি নিসার হোসেন। এদিকে, পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তর মুসলিম দেশের একটি প্রতিষ্ঠানের এমন ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। অনেকেরই প্রশ্ন- চারুকলা কি ভারতীয় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? বাংলাদেশ তবে ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যে পরিণত হতে যাচ্ছে?
জানা গেছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পর চারুকলার ক্যান্টিনে বিভিন্ন খাবার পরিবেশন করা হয়। যার মধ্যে ছিল গরুর তেহারী। চারুকলার নিয়ম অনুযায়ী এই ক্যান্টিনে গরুর গোস্ত পরিবেশন নিষিদ্ধ। এদিন আয়োজনের সঙ্গে শিক্ষার্থীর মাঝে তেহারি পরিবেশন করা হয় ক্যান্টিনের পক্ষ থেকে। পরে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন যে খাবারে গরুর গোস্ত ছিল। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে ক্যান্টিনে ভাঙচুর চালান তারা।
ক্যান্টিন ম্যানেজার জাকির হোসেনের দাবি, গরুর গোস্ত পরিবেশন করা যাবে না এটি তিনি জানতেন না।
আর শোভাযাত্রা উদযাপনের নেতৃত্বে থাকা চারুকলার জ্যেষ্ঠতম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক সাগর হোসেন সোহাগ বলেন, চারুকলা অনুষদে গরুর গোস্ত রান্না সম্পূর্ণ নিষেধ। তিনি ক্যান্টিন ম্যানেজারকে বিতাড়িত করারও দাবি জানান।
চারুকলার এ ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে চারুকলায় আগ থেকেই গরুর গোস্ত নিষিদ্ধের বিষয়টি মানুষের জানা ছিল না। এঘটনা জানার পর মানুষ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন দেশের ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা।
শিক্ষাবিদ, ওলামায়ে কেরাম ও সচেতন মানুষ মনে করছেন, বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানের দেশ হলেও এখানে সব ধর্মের লোকই স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। আর চারুকলা এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে উভয় ধর্মের শিক্ষার্থীই আছে। হিন্দু শিক্ষার্থীরা গরুর গোস্ত না খেলে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে। কিন্তু, ক্যান্টিনে গরুর গোস্ত নিষিদ্ধ হবে কোন যুক্তিতে? একটি মুসলিম দেশে তারা এমন আইন করার দু:সাহস পেল কী করে?
তাদের মতে, একটি মুসলিম দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনে গরুর গোস্ত রান্না হতেই পারে। কিন্তু, এজন্য ভাঙচুর, মারধর ও গরুর গোস্ত বিরোধী বিক্ষোভ এদেশের মুসলমানদের ঈমান-আকিদায় আঘাত করেছে। ইসলাম ও কুরআন-সুন্নাহকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। ভারতের মতো বাংলাদেশে গরুর গোস্ত নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। চারুকলায় যারা গরুর মাংশ নিষিদ্ধের আইন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের চারুকলা অনুষদে ধর্ম পালনে হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সবিধা রাখা হলেও মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য নামাজের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ভারতীয় সংস্কৃতি পুঁজারি হিসেবে পরিচিত তথাকথিত শিক্ষকরাই এমনটা করে রেখেছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। চারুকলার এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও।
তাদের মতে, বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের দেশ হওয়ায় হিন্দু শিক্ষার্থীরা ধর্ম পালনে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার দাবি জানাবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু, এখানে উল্টো মুসলমান শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার বঞ্চিত। এটা খুবই দু:খজনক। অসাম্প্রদায়িকতার নামে কিছু শিক্ষক এখানে এমন বৈষম্য আচরণ করছেন বলেও তাদের অভিযোগ।
Discussion about this post