জসিম উদ্দিন
প্রটোকল ভেঙে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পালাম বিমানবন্দরে হাজির হন। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজ দেশে স্বাগত জানান। যেখানে প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় তাকে বিমানবন্দরে গ্রহণ করার কথা ছিল। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সফরের শুরুতে অভিভূত হন। তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উষ্ণ অভ্যর্থনার উচ্চ প্রশংসা করেন। তার ভাষায় ভারত বিশাল একটা দেশ। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত একজন মানুষ। এই ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে ছোট একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে রিসিভ করার জন্য সময় ব্যয় করে একেবারে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছেন। মিডিয়ার বরাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এ মনোভাব প্রকাশ হয়েছে।
অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতীয় নেতাদের জন্য উপহার নিয়ে গেছেন। প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও অনেকে এ উপঢৌকন পেয়েছেন। প্রত্যেকের জন্য ছিল ঢাকার রসগোল্লা। অন্য অনেক কিছু থাকলেও সবার জন্য রসগোল্লা ছিল কমন। রসে টইটম্বুর যে গোল্লা তা রসগোল্লা। ‘খাইলে চাটবেন; না খাইলে পস্তাইবেন।’ ঢাকার রসগোল্লার এমন স্বাদ। বাস্তবে এমন রসনা চটকানো উপঢৌকন দিল্লির মন গলাতে পারেনি। মমতা বরং পানি নিয়ে উপহাস করে সবাইকে দুঃখ দিয়ে দিলেন। এর জবাবে শেখ হাসিনা হিন্দিতে মমতাকে লক্ষ্য করে বলেছেন। ‘পানি মঙ্গা, ইলেকট্রিসিটি দেয়া…কই বাত নিহি… কুছ তো মিলা।’ পানি চাইলাম, দিলেন বিদ্যুৎ; কোনো ব্যাপার না… কিছু তো পেলাম। যদিও মমতার ভাষা বাংলা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারতের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণের প্রশংসা করতে হয়। কোনোভাবে তিনি অখুশি হননি।
জনসংখ্যার বিচারে দেশের বড়ত্ব বিবেচনা করা যেতে পারে। আবার ভৌগোলিক আয়তনের দিক দিয়েও এর অবস্থান বিবেচনা করা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় দেশের তালিকা করতে গেলে সম্ভবত কানাডা ও রাশিয়ার কথা সবার আগে আসবে। আর জনসংখ্যার বিবেচনা করলে চীন ও ভারতের বিবেচনা আসতে পারে। সেই বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ পৃথিবীর সপ্তম বৃহৎ দেশ। পৃথিবীতে যদি ২০০’র মতো দেশ থাকে আমরাও বৃহৎ দেশের মধ্যে পড়ি। কোনো দেশের ক্ষুদ্রতা ও বিশালতা এখন প্রকৃতপক্ষে এভাবে বিবেচনা করা যায় না। অর্থনীতি ও সামরিক শক্তি দেশের বড়ত্ব বিবেচনার প্রধান মানদণ্ড হয়ে আছে। সে জন্য জনসংখ্যা ও আয়তন এই দুটোর কোনো দিক থেকে বৃহৎ না হয়েও যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বৃহৎ রাষ্ট্র। অন্য দিকে জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক দিয়ে মাঝারি পর্যায়ের দেশ হয়েও ব্রিটিশরা পৃথিবীর নেতৃস্থানীয় দেশ। এই দেশটি সম্ভবত বিশ্বপর্যায়ে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। যদিও কোনো দেশের বড়ত্ব দেশটির মানুষের মনের উদারতা ও বিশালতা দিয়ে মাপা উচিত।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অন্ততপক্ষে বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের চেয়ে ভারতের কাছে অনেক বেশি গুরুত্ব রাখেন। ভারত নামক দেশটি তার অখণ্ডতা ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে সংহত অবস্থান ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশকে তার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে সেভেন সিস্টারসে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য দেশটির ওপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিরাপত্তার স্বার্থে যতটা প্রয়োজন সবরকমের সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হওয়ার কথা। সে হিসেবে বাংলাদেশকে বন্ধু বানানোর কাজটি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যতটুকু বন্ধুত্ব ভারত পাচ্ছে, সে জন্য এ ধরনের বাড়তি আন্তরিকতা (বিমানবন্দরে গিয়ে স্বাগত জানানো) অস্বাভাবিক কিছু নয়। বাস্তবতায় দেখা গেল বন্ধুত্বকে দৃঢ় করার জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রটোকল ভেঙে বিমানবন্দরে ছুটে যাননি। অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করিয়ে দেয়ার পর প্রমাণ হলো তার অন্য কারণ ছিল। কারণ, বন্ধুত্ব সুদৃঢ় করার জন্য বাংলাদেশের যে চাহিদা ছিল তার কোনোটি চুক্তি ও স্মারকে ছিল না। সেগুলো আলোচনার টেবিলেও আসেনি।
তিস্তাচুক্তি যাতে সই হয় সে জন্য মমতাকে মানসিকভাবে তৈরি করছিলেন ভারত সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। এতে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিও যোগ দিয়েছেন বলে বাংলাদেশের মিডিয়ায় উচ্ছ্বসিত খবর দেখা গেছে। সফরের আগে অনেকে একেবারে উল্লসিত হয়ে তিস্তাচুক্তি হয়ে যাচ্ছে সেই নিশ্চিত আশাবাদও ব্যক্ত করেন। মিডিয়ার ভাষায় সেটা হয়ে যাচ্ছে মমতাকে পটিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে। এই কাজটি সফল করতে গিয়ে কে কী কৌশল নিচ্ছেন সেটাও কেবল বাংলাদেশী মিডিয়ায় প্রকাশ হলো। শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে মমতার কথা হয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাথেও মমতা একান্তে আধা ঘণ্টা বৈঠক করেন। এই বৈঠকের পর হাসিনার সাথে বৈঠকে মমতা যে প্রস্তাব দিলেন তা বিস্ময়কর। তিস্তার ব্যাপারে তার কাছে কেউ দেনদরবার করেছেন এর কোনো আলামত তার প্রস্তাবের মধ্যে দেখা গেল না। তিনি সেই পুরাতন বক্তব্যের সাথে নতুন করে আজগুবি এক প্রস্তাব দিলেন। পাঁচটি আঞ্চলিক নদীর পানি ভাগাভাগির কথা হাসিনাকে জানালেন। এটা যেন ছেলেখেলা। এসব নদী অনুল্লেখযোগ্য। পানিপ্রবাহের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বড় অবদান এই নদীগুলোর নেই। বাড়তি হিসেবে বিদ্যুৎ রফতানির পরামর্শ দিলেন। ভারত নির্ধারিত দামে বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। এটি দান-অনুদানের কিছু নেই। উদ্বৃত্ত সম্পদ সহজে বাংলাদেশে বাজারজাত করছে। অন্য দিকে পানির প্রাপ্যতার অধিকার ন্যায্য।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছয়টি চুক্তি ও ১৬টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি চুক্তি পরমাণু শক্তি নিয়ে। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে সহযোগিতা, কারিগরি সহযোগিতা গ্রহণ ও পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা। রাশিয়া থেকে প্রযুক্তি নেয়া হয়েছে, বাংলাদেশে এর বাস্তবায়নও তারা করছে। দুই দেশের মধ্যে ভারতকে কেন লাগছে এর উত্তর কোথাও নেই। পরমাণু প্রযুক্তিতে ভারত অনেক দূর এগিয়ে গেছে এমনও নয়। বরং আছে ভারতের ভয়াবহ পরমাণু দুর্ঘটনার নজির। চুক্তি অনুযাযী বাংলাদেশে পরমাণু সেক্টরে এমন কোনো প্রকল্প থাকছে না যেখানে ভারতের পর্যবেক্ষণ থাকবে না। একটি দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমের ওপর পার্শ¦বর্তী একটি দেশের এমন পর্যবেক্ষণের কী যুক্তি থাকতে পারে।
সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রসঙ্গে সবার আগে প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল ভারতের আকাশে উন্মুক্ত করা। ভারতীয় টিভি চ্যানেল বাংলাদেশের আকাশ দখল করে নিয়েছে। দেশটির সাথে যৌথভাবে বাংলা সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। সিনেমা হলগুলো ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের অনুমতি অনেক কষ্টে সংস্কৃতিসেবীরা প্রতিরোধ করেছেন। এই অবস্থায় দেশটির সাথে অডিওভিজুয়াল যৌথ প্রযোজনা চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি কার স্বার্থ রক্ষা করবে স্পষ্ট নয়। মোটরযান নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে এগুলো ভারতীয় চলাচলের রুটের কল্পনা সামনে রেখে করা হয়েছে, যার বাস্তবায়ন অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। এ ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ নিয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। অথচ ১০ একরের চেয়ে সামান্য কিছু ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধপূর্ণ মুহুরির চর বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। বিতর্কিত এই ভূমি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাননি মোদির কাছ থেকে। এই ধরনের অতি জরুরি বিষয়গুলোকে সম্পূর্ন এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
১৬টি সমঝোতা স্মারকের মধ্যে পাঁচটি সামরিক বিষয়ে। এগুলোর প্রত্যেকটির বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠতা অর্জন। সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ ও এগুলোর সাথে পরিচিতি থাকা। এই চুক্তির প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুভূত হয়নি। দেশের ভেতর থেকে এই ধরনের সমঝোতায় আসার ব্যাপারে প্রবল বিরোধিতা আছে। বিচার বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ বিগত দশ বছরে যে পরিমাণ বিতর্কিত হয়েছে এর আগে কখনো এমনটি দেখা যায়নি। এই পর্যায়ে বিচার প্রশাসনের মান উন্নয়নের মাধ্যমে যদি বিচার বিভাগের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা যায় ভালো একটা কিছু হতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সাইবার নিরাপত্তা এগুলোর সাথে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। এসব বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সমঝোতা হয়েছে।
ভূবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা, মহাকাশ শান্তিপূর্ণ ব্যবহার। এই ধরনের বৈজ্ঞানিক প্রকল্পগুলোতে বৈশ্বিক পর্যায়ে ভারতের কৃতিত্ব নেই। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে আমাদের মতো তারাও পিছিয়ে পড়া। একসাথে এ বিষয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে তারা যদি অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে উদারতা দেখাতে পারেন তাহলে এগুলোর ভবিষ্যৎ আছে। সেটা না হয়ে যদি বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও গবেষণাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয় হতাশা বাড়াবে। নৌচলাচলে সহযোগিতা ও উপকূলীয় প্রটোকল রুটে যাত্রী ও জাহাজ চলাচলে পর্যটকদের জন্য সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশ থেকে মানুষ সহজে ভারতে যেতে পারবে। তা নির্ভর করবে ভারতীয়দের আচার-আচরণের ওপর। ভারত সহজে পারমিট দিতে চায় না। উপযুক্ত মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার করতে পারে না বাঙালদের সাথে। গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। কিন্তু এর যথেষ্ট মান অর্জিত হয়নি। গণমাধ্যম ব্যবস্থা একপেশে। মূলত কথিত সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করতে গিয়ে এই দেশের মিডিয়া অনেকটাই ভারতের অন্ধ ভক্ত। এই অবস্থায় এ ব্যাপারে ভারত কী সহযোগিতা করতে পারে!
সমঝোতার যে বিষয়গুলো সামনে আনা হয়েছে তাতে এই বিষয়টা স্পষ্ট, সেটা বাংলাদেশের চাহিদার দৃষ্টিকোণ থেকে নয়। বাংলাদেশের প্রধান চাওয়া হচ্ছে বাণিজ্য অসমতা দূর করা। দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৬০০ কোটি ডলার। এরমধ্যে সাড়ে ৫০০ কোটি ডলার ভারত একাই রফতানি করে। বাংলাদেশের রফতানি অর্ধশত কোটি ডলারের কম। বাংলাদেশী পণ্য কর শুল্ক ছাড়াও নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেশটিতে রফতানি ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ডাম্পিংয়ের অভিযোগ এনে পাট আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।
স্লিপ অব টাঙ্গ না অন্য কিছু
ঘোষক দুই প্রধানমন্ত্রীকে বললেন, ‘স্টেপ ডাউন’। শব্দ দুটি একসাথে ব্যবহার হয় বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো অর্থে। অনেকে পদচ্যুত হন, অনেকে গণ-অভ্যুত্থানে ছিটকে পড়েন। কেউ স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। ঘোষকের এমন উচ্চারণের পর দুই প্রধানমন্ত্রী এক মিনিট ধরে হাসতে থাকেন। এই খবর বাংলাদেশী মিডিয়ায় খুব আহলাদ করে প্রকাশ করা হয়। তারা এতে খুব আপ্লুত যে এই দুই নেতা এক মিনিট ধরে হাসি থামাতেই পারেননি। বিষয়টা ছিল মূলত স্টেজ থেকে নেমে আসার আহ্বান। ঘোষকের দুর্বল ইংরেজি শব্দ চয়নে সেটা হয়ে যায় ক্ষমতার পতন। তাতে হাসির রোল ছড়িয়ে পড়ে।
স্থূল স্তুতি
আলোচনার টেবিলে যখন অভিন্ন নদীর পানি নেই, সীমান্ত হত্যা বন্ধ নেই, বাণিজ্য অসমতা নেই তখন ভারতীয় নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভূয়সী প্রশংসা করছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর বিজেপির আরেক নেতা এল কে আদভানি ‘ছোট’ দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বনেত্রী হিসেবে সম্মান দেয়ার কসরত করলেন।
শেখ হাসিনার সম্মানে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বৈরী সম্পর্কের অবসানে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যস্থতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ভারতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে শেখ হাসিনা সহায়তা করতে পারেন। পাকিস্তানের নেতানেত্রীরা বাংলাদেশে আয়োজিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের সভা-সমিতি বর্জন করছেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও অনেকক্ষেত্রে পাকিস্তান ভ্রমণ থেকে বিরত রয়েছেন। ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের কোনো নেতার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে, আন্তরিক পরিবেশে কথা হয়েছে এমনটি দেখা যায়নি। দেশটির কোনো নেতার সাথে হাসিনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন দেখা যায় না।
দুটো দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তৃতীয় যে পক্ষটি মধ্যস্থতা করে সেই পক্ষ উভয়পক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখে। যেমনটি একটা সময় পাকিস্তান এমন বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়েছিল চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। দেশ দু’টির সাথে পাকিস্তান দীর্ঘ দিন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে উভয় দেশের বিরোধ নিষ্পত্তিতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রেখেছে। সেটা আসলে কোনো নেতা নন; রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান তা করেছিল। ২০১৭ সালে উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে যদি আমরা সম্পর্কের মাত্রা বিশ্লেষণ করি তাহলে ভারতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক কোনোভাবে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সম্পর্কের চেয়ে খারাপ বলতে পারি না। দু’টি দেশের মধ্যে প্রতিনিয়ত প্রতিনিধি বিনিময় হচ্ছে। উচ্চপর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ভাববিনিময় হচ্ছে। এই অবস্থায় রীতিমতো শত্রুতাপূর্ণ অবস্থানে থাকা একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব গড়তে মধ্যস্থতা করার আহ্বান জানানো আসলে কতটা আন্তরিক আহ্বান। না আসলে কৃত্রিমভাবে বড় দেখানোর উদ্ভট প্রয়াস।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post