সাড়ে তিনশ সফরসঙ্গী নিয়ে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যে সফরে তিন ডজনের মতো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে।
তৃতীয় দফায় বাংলাদেশের সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর শুক্রবারই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তার এই সফর গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে নয়া দিল্লিও।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরের বছরের ১৯ অগাস্ট ভারতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
এরপর ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গত অক্টোবর গোয়ায় দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তবে এই দুটির কোনোটিই দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না।
এবারের সফর দুই দেশের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্বের পথ তৈরি করবে বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা করছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে বলছেন, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সফর।”
চার দিনের সরকারি সফরে শেখ হাসিনা থাকবেন নয়া দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে, ভারতের কূটনীতিকদের দৃষ্টিতেও যা বিরল ঘটনা।
এবার প্রধানমন্ত্রীর ৩৫১জন সফরসঙ্গীর মধ্যে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির নেতৃত্বে ২৫৭ সদস্যের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
এই সফরে ভারতের সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, পরমাণু বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৩৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও থাকছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো.শাহরিয়ার আলম।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও সফরসঙ্গী হচ্ছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো.আমিনুল ইসলাম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, রেলপথ সচিব মো. ফিরোজ সালাহ উদ্দিন, তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ, বিদ্যুৎ সচিব আহমদ কায়কাউস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো.সিরাজুল হক খান, জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, নৌ-পরিবহন সচিব অশোক মাধব রায়, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.মাহমুদ রেজা খান, জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী,আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো.জহিরুল হক, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শাহজাহান খান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আখতার হোসেন ভূইয়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আলম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শুভাশীষ বসু।
২৫৭ ব্যবসায়ীদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল আহমাদ, চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক শেখ ফজলে ফাহিম এবং মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি নিহাদ কবীর থাকছেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী।
রাজনীতিবিদের মধ্যে সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহও রয়েছেন।
শুক্রবার সকালে ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটে দিল্লি রওনা হবেন শেখ হাসিনা। রাতে বাংলাদেশের হাই কমিশনের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে যোগ দেবেন তিনি।
শনিবার সকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন শেখ হাসিনা। যাবতীয় চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক এই সময়ই সই হবে।
বিকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সৈন্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। রাতে নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন তিনি।
রোববার আজমির শরীফ জিয়ারত করবেন শেখ হাসিনা। এদিন বিকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। রাতে রাষ্ট্রপতি ভবনে নৈশভোজেও তিনি অংশ নেবেন।
সোমবার হোটেল তাজমহলে ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বিকালে তিনি ঢাকা ফিরবেন।
সূত্র: বিডিনিউজ
Discussion about this post