অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
হঠাৎ করে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী । গত তিন দিনে ঢাকায় অন্তত ২২ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।
গতকাল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জানান, শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে যারাই বের হয়েছেন তাদেরকেই আটক করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ১৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে গতকাল রাত ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নয়াপল্টনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, তানভীর আহমেদ রবিন শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে কার্যালয় থেকে বের হন। এরপর মোটরসাইকেলে করে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে রওয়ানা হন। তখন আগে থেকে কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে অবস্থান করা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ধাওয়া করে।
একপর্যায়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘিরে ফেলে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে শুনেছি। উপস্থিত অনেক লোক এ ঘটনা দেখেছেন। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সেটা নিশ্চিত হয়েছি। কিন্তু ডিবি পুলিশ তা স্বীকার করছে না।
তুলে নিয়ে গিয়ে স্বীকার না করার এই ব্যাপারটি মনুষ্যত্বহীন কাজ। অথচ এ কাজটি তারা ধারাবাহিকভাবে করছে। তিনি আরও বলেন, এই সরকার আগামী নির্বাচনও একতরফা করতে চায়। সে কারণে বিএনপিসহ বিরোধী দল নির্মূলের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাদের বেছে বেছে টার্গেট করে গ্রেপ্তার, হত্যা, গুম করা হচ্ছে।
এর আগে গত শুক্রবার ছাত্রদলের ৬ নেতাকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা। তারা বলেন, প্রথমে শুক্রবার আজিমপুরের বাসা থেকে সাদা পোশাকে তুলে নেয়া হয় ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুমিনুল ইসলাম জিসানকে। তুলে নেয়ার পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর ছাত্রদলের ৫ জন নেতা খোঁজ নিতে জিসানের আজিমপুরের বাসায় গেলে তাদেরকেও সাদা পোশাকে তুলে নেয়া হয়। এরপর থেকে তাদের কারোরই সন্ধান মিলছিল না। গতকাল দিনভর নিখোঁজদের পরিবার, বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা এ নিয়ে পৃথক পৃথক বিবৃতি দেন। তারা আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে আল্টিমেটামও দেন। তবে পুলিশ, ডিবি ও র্যাব’র পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু গতকাল বিকালে মানবজমিনের কাছে এই নেতাদের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীম। তিনি মানবজমিনকে বলেন, তিনটি অস্ত্রসহ এই নেতাদের আটক করা হয়েছে। রাতে লালবাগ থানায় দুটি মামলা হবে।
এদিকে আজ রোববার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তর) খোন্দকার নুরুন্নবী বলেছেন, গতকাল শনিবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ছাত্রদলের ৬ নেতাকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা। তাদের কাছ থেকে ৩টি অস্ত্র জব্দ করা হয়। দু’টি অস্ত্র পাবনা ও একটি টেকনাফ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন তারা। পুলিশের এই কর্মকর্তার দাবি, তাদের হোয়াটসঅ্যাপেও অস্ত্র সংগ্রহের তথ্য পাওয়া গেছে।
নুরুন্নবী আরও জানান, গতকাল রাতে আরেকটি অভিযানে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের ছেলে রবিনসহ আরও ১২ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।
নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাকর্মীর হাতেও অস্ত্র দেখা যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ডিবির অভিযান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাব না দিয়েই চলে যান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
Discussion about this post