জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার এবং গ্রেফতার নেতা-কর্মী ও আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সভায় জামায়াত আমির এ আহ্বান জানান। বুধবার (১০ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জামায়াতের আমির বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমাগতভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই ভয়াবহ অবস্থায় সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য আরেক দফা বাড়িয়ে জনগণকে চরম দুর্দশার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখন কমছে, তখন বাংলাদেশে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকারের মন্ত্রীগণ বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে যে তেলের দাম কমেছে, তা বাংলাদেশে আসলে তেলের দাম কমানো হবে।’ মন্ত্রীদের এ বক্তব্য জনগণের সাথে উপহাসের শামিল। অবিলম্বে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজিত মিছিলে সরকার বাধা দিয়েছে ও রাজধানীসহ সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। সারাদেশে অসহনীয় লোড শেডিংয়ে জনগণ কষ্টকর জীবন-যাপন করছে। সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত ও দুর্নীতি দেশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই সরকারের হাত থেকে দেশকে উদ্ধারে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা ব্যতীত আর কোনো পথ নেই।
তিনি আরও বলেন, সরকার জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণকে জিম্মি করে জোর করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়। এ কারণে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন ও সাবেক এমপি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ১২ বছর, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে প্রায় ১১ বছর এবং সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক মণ্ডলকে প্রায় ৭ বছর যাবৎ কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি জনাব শাহজাহান চৌধুরীসহ জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মীকে সরকার দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রেখেছে।
জামায়াতের আমির বলেন, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ার আগেই ফের মিথ্যা মামলা দিয়ে বারবার কারাগারে আটকে রেখে তার ওপর জুলুম করা হচ্ছে। সারা দেশে জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মীকে গুম ও নিখোঁজ করে দেয়া হয়েছে। দেশের বরেণ্য আলেমদেরকে মাসের পর মাস মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।
অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মী ও আলেম ওলামাদের মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জামায়াতের আমির বলেন, সরকারের জুলুম-নিপীড়ন সত্ত্বেও জামায়াত এবারের বন্যায় সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়ে জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। বন্যার্তদের মাঝে খাদ্য ও উপহার সামগ্রী বিতরণ, পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা, এসএসসি, দাখিল ও সমমনা পরীক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের পাশে থেকে কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করেছে। রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার জামায়াতে ইসলামী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভোজ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও সকল অপকর্মের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, বিনা ভোটে ক্ষমতাদখলকারী এই সরকার গণবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জনগণের দুর্দশা একের পর এক বাড়িয়ে তুলছে। তাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে হবে।
তিনি দলনিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
Discussion about this post