গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান (৩৭) ও সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ মাহমুদ হাসানকে (৪২) গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) বিকেলে তাদের গ্রেফতারের পর বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের তিন নেতার অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি টাকা করে ৯ কোটি টাকা চলে যায়। এককভাবে আইনজীবীদের কাছে চলে যায় ১৬ কোটি টাকা। এরাই মূলত যোগসাজশ করে ইউনিয়নের অন্য নেতাদের এবং শ্রমিকদের বুঝিয়েছেন যে, ‘তোমরা যদি এখানে স্বাক্ষর না কর, তাহলে দেখা যাবে একসময় তোমরা সেই টাকাটাই পাবে না।’
হারুন অর রশীদ বলেন, মামলা প্রত্যাহার করতে আইনজীবী ইউসুফ আলী ও শ্রমিক ইউনিয়নের কতিপয় নেতা গুজব ছড়ান ‘বাংলাদেশ হবে শ্রীলঙ্কা। আর দেশের রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রী হবেন ড. ইউনূস।’
তিনি বলেন, “তারা গুজব ছড়িয়েছেন যে ‘কিছুদিন পর বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাবে। এ ছাড়া ড. ইউনূস দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। তখন তারা দেশেই থাকতে পারবেন না। অতএব আমরা চুক্তি করে যে টাকাটা এনেছি সেটি নিয়ে তোমরা স্বাক্ষর করে।’ এই যে এটি একটি অসম চুক্তি। তারা শ্রমিকদের অর্থনৈতিক প্রলোভন এবং ভয় দেখিয়ে স্বাক্ষর করে যে চুক্তি করেছেন, আমি মনে করি এটি একটি অসম চুক্তি। এর মাধ্যমে তারা গোপনে যেভাবে টাকা নিয়েছেন। তারা এ টাকা নিতে পারেন না। এর ফলে তারা চুক্তি ভঙ্গ করেছেন।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ ছাড়া ভয়ভীতি ও প্রলোভনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনিয়নের নেতারা যোগসাজশে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। এখানে তিনজন ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন গ্রামীণ টেলিকমের এমডি। সে এমডি আগে যে এমডি ছিল সে এখন ভাইস চেয়ারম্যান। তার যোগসাজশে কিন্তু তারা টাকাগুলো আঁতাত করে নেতা ও আইনজীবীদের মধ্যে বিতরণ করেন।’
হারুন অর রশীদ বলেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের আরেকজন নেতা মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। তারপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে মামলাটি ডিবিতে আসে। তদন্তের পর দুজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও কারা কারা জড়িত আছেন, রিমান্ডে তা বের হয়ে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ ঘটনায় আরও কার কার দায় রয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় ২০১৬ সালে প্রথম মামলা করেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ১৪ কর্মী। পরে পাওনা চেয়ে ৯৩টি মামলা করেন গ্রামীণ টেলিকমের বর্তমান ও সাবেক কর্মীরা। ঢাকার শ্রম আদালতসহ সব মিলিয়ে ১৯০টি মামলা করা হয়।
গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। চাকরিচ্যুত ১৫৭ কর্মচারীর পাওনা ৪৩৭ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে বলে জানান কর্মচারীদের আইনজীবী ইউসুফ আলী।
তবে হঠাৎ করেই বকেয়া পাওনা দাবিকারীরা মামলা প্রত্যাহার করে নেন।
পরে ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক আখতারুজ্জামান রাজধানীর মিরপুর থানায় অর্থ আত্মসাতের একটি মামলা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৫ জুলাই) ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
উৎসঃ সময়টিভি
Discussion about this post