অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দলের অসুস্থ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এখন রাজপথে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। বিএনপি নেতারা বলছেন-সরকার যদি খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেয় আর খালেদা জিয়ার কোনো সমস্যা হয় তাহলে তারা সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামবে।
এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন। দেশের প্রায় ২০০০ সিনিয়র সাংবাদিক খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এছাড়া ২ হাজারের অধিক চিকিৎসকও খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
অপরদিকে, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরেও অনেক রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন।
কিন্ত দেখা গেছে, সরকার তার সেই আইন নিয়েই বসে আছে। সরকার শুধু বলছে-আমরা আইনের বাইরে যেতে পারব না। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে খালেদা জিয়াকে বাইরে যেতে দেয়া হবে না। আইন অনুযায়ী দেশেই তার চিকিৎসা করাতে হবে।
এখন সমস্যা কি আসলে আইন নাকি অন্য কিছু? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর জন্য আইন কোনো বাধা নয়। কারণ, ৪০১ ধারায় বলা হয়েছে-সরকার চাইলে কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে সাজা কমিয়ে বা মাফ করে দিতে পারে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আইন শুধু একটা অজুহাত। সরকারের উদ্দেশ্য ভিন্ন। সরকার খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে তার বড় ছেলে তারেক রহমানকে হাতে পেতে চাচ্ছে।
শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতারা তারেক রহমানের উপর খুব ক্ষুব্ধ। শেখ হাসিনার ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা তারেক রহমানের ঘাড়ে চাপিয়ে তাকে অটকানোর চেষ্ট করছে। আর আদালত সাজা দিলেও তারেক রহমান বিদেশে থাকায় সরকার তা কার্যকর করতে পারছে না। এমনকি লন্ডন গিয়ে শেখ হাসিনা অনেক বার তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর জন্য দেশটির সরকারের সাথে দেনদরবার করেছে। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হয়ে মায়ের অসুস্থতায় ছেলেকে ফেরানো যায় কি না তাই নিয়েই চলছে নতুন পরিকল্পনা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মা যেহেতু গুরুত্বর অসুস্থ তাই সাজা মাথায় নিয়েই তারেক রহমান দেশে আসতে পারে বলে সরকার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছপা হচ্ছেনা। আওয়ামী লীগ মনে করছে, খালেদা জিয়াকে যদি বিদেশে পাঠানো হয় তাহলে তারেক রহমানের দেশে আসার সম্ভাবনাটাও শেষ হয়ে যাবে। তাই শেখ হাসিনা পরিকল্পিতভাবে গুরুত্বর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে দিচ্ছে না।
এদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শরীরে তিনবার রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা। তারা পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে ‘হেল্পলেস’ বলে জানান।
খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বলে জানান তারা।
রবিবার সন্ধ্যায় তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বিএনপি চেয়ারপারসের বাসভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. ফখরুদ্দীন জানান, এ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার তিনবার রক্তক্ষরণ হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার পর বর্তমানে তিনি স্ট্যাবল আছেন। তবে পুনরায় রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা আগামী ছয় সপ্তাহে ৬০ ভাগ।
খালেদা জিয়ার এ চিকিৎসক জানান, তৃতীয়বারের রক্তক্ষরণের উৎস জানা যায়নি। এ সময়ে খালেদা জিয়ার অন্ত্রে প্রচুর রক্ত জমাট বেঁধে থাকতে দেখা যায়। পরে অ্যান্ড্রোসকপি করা হয়। তবে রক্তক্ষরণের উৎস জানা যায়নি। এর উৎস জানাতে বিদেশে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে তারা মত দেন।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। লিভারে স্বাভাবিক রক্ত পরিচালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এটি টিপস প্রক্রিয়ায় লিভারে রক্ত পরিচালন চাপ কমাতে হবে। এই চিকিৎসা মূলত যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রেই সম্ভব।
তিনি বলেন, লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে শুধু দেশের না উপমহাদেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কিছু আর আমারে করার নাই। কিন্তু ঝুঁকির মাত্রা লিভারে আবারো রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা আগামি সপ্তাহে ৫০ ভাগ বাড়বে, ৬ সপ্তাহে ৭০ ভাগ বাড়বে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম মোহসীন, অধ্যাপক ডা. শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা আল মামুন।
Discussion about this post