অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশে এখন কোনো ধরণের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। করোনার কারণে সবই স্থবির হয়ে গেছে। বিএনপি-জামায়াতও সরকার বিরোধী তেমন কোনো কর্মসূচি হাতে নেয়নি। সব কিছুই হচ্ছে এখন ভার্চুয়ালে। আর সরকারের গুম-অপহরণের প্রতিবাদে মাঝে মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
কিন্তু, এই শান্ত পরিবেশের মধ্যেও বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে বিশাল এক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
কাদেরের ভাষায় সেই ষড়যন্ত্র হলো-মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে নাকি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটনার জন্য বৈঠক করেছেন।
বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের কাছে এমন ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। শুক্রবারও ওবায়দুল কাদের এবং হাছান মাহমুদ পৃথক সভায় এসব নিয়ে কথা বলেছেন। বিএনপি-জামায়াত নাকি নাশকতা সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছে।
দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ তো শান্ত। হঠাৎ করে ওবায়দুল কাদের বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করলেন কেন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুইটি কারণে ওবায়দুল কাদের বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন।
প্রথমত: এই করোনাকালীন সময়ে সব স্থবির হয়ে পড়লেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাদের লুটপাট-চুরি বন্ধ হয়নি। এসময়ে একাধিক কেলেংকারির ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে ছিল পেয়াজ সংকট, তারপর, গরিবের ত্রাণের চাল চুরি, বাজারে চাল সংকট, মাস্ক কেলেংকারি, হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকা, করোনা টেস্টের কিট কেলেংকারি, জিকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের করোনা টেস্টে প্রতারণা, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুদানের টাকা আত্মসাতসহ আরও নানা কেলেংকারির ঘটনা ঘটেছে।
এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লুটপাট-আত্মসাত ও দুর্নীতির ভয়ংকর ঘটনাও বেরিয়ে আসছে সম্প্রতি। এর সঙ্গে বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতির খবরও। এসব ঘটনা সরকারকে চরমভাবে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
এর সঙ্গে সাবেক সেনা কর্মকর্তা রাশেদ সিনহা হত্যার ঘটনা তো আছেই। সবমিলিয়ে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা এখন এসব কারণে মুখ দেখাতে পারছেন না। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সারাদিন শুধু সরকারের সমালোচনাই হচ্ছে।
মানুষের দৃষ্টিকে এসব থেকে সরানোর লক্ষ্যেই বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করে নতুন একটি ইস্যু সৃষ্টি করেছেন ওবায়দুল কাদের।
দ্বিতীয়ত: সকল সেক্টরে দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা, সরকারের দমন-পিড়ন ও জান-মালের নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষ এখন সরকারের উপর চরমভাবে ক্ষুব্দ হয়েছে। সহজভাবে বললে-দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সব কিছুই ভেঙ্গে পড়েছে। কথিত উন্নয়নের নামে দেশে লুটপাট-দুর্নীতি ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না। কেউ আন্দোলনের ডাক দিলেই ক্ষুব্ধ জনগণ যেকোনো সময় মাঠে নেমে আসতে পারে।
অপরদিকে, বিগত ১২ বছর ধরে সরকারের জুলুম-নিপীড়নের শিকার বিরোধীদলগুলো এখন সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামার চিন্তা করছে। এই মুহূর্তে মাঠে নামলে জনগণও তাদের পাশে থাকবে বলে মনে করছেন তারা। আর বিরোধীদলকে দমনের জন্য সরকারের হাতে এই মুহূর্তে অন্য কোনো ইস্যুও নেই। তাই বিরোধী দলকে দমনের লক্ষ্যেও ওবায়দুল কাদের এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন।