যেহেতু করোনাভাইরাসের এখনও কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। তাই সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা সংক্রমণ এড়াতে এবং শরীরকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত রাখার জন্য দিয়েছেন বিশেষ পরামর্শ:
অপেক্ষাকৃত কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তির শরীরে যে কোনো ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। কিন্তু কিছু বিষয় মেনে চললে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুত রাখা সম্ভব।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সঙ্কটকালে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের চিকিৎসকরাও পরামর্শ দিচ্ছেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরের ভেতর অ্যান্টিবডি তৈরি করার। এতে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ড. মুজিবুর রহমান বলেন, যেহেতু করোনাভাইরাসের এখনও কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি, তাই সচেতন থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসসহ যে কোনো ভাইরাস প্রতিরোধে সেসব খাবারই বেশি খাওয়া উচিৎ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ড. তাসনুভা মিম বলেন, শরীরের প্রতি যত্নশীল এবং স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও দ্রুত সেরে উঠতে পারবেন।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনুসরণ করতে পারেন এসব পরামর্শ-
তাজা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
সংক্রমণ এড়াতে পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিকর, সুষম ও তাজা খাবার খাওয়ার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সের শিক্ষক ড. মো. আমিনুল হক ভুইয়া বলেন, “ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ওপর আমাদের জোর দিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফল, শস্যদানা, শিম জাতীয় সবজি, বাদাম, বীজ, মরিচ, অলিভ অয়েলের পাশাপাশি তেলযুক্ত মাছ, পনির ও পূর্ণ ননীযুক্ত দই খাওয়া যেতে পারে। ”
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ভিটামিন ‘সি’
ভিটামিন ‘সি’ শরীরে কোলাজেন তৈরি ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোষ, টিস্যু ও জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
তাই প্রতিদিনই কমলালেবু, আঙুর, স্ট্রবেরি, সবুজ মরিচ, ব্রকোলি জাতীয় ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল বা সবজি খাওয়া প্রয়োজন।
আর দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার অনেক খাবারেই ভিটামিন ‘সি’ থাকায় আলাদা করে এটি গ্রহণের প্রয়োজন হয় না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
শরীরকে জীবাণুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে তোলে যেসব খাবার
আমাদের পেটের ভেতরে থাকে লক্ষ-কোটি ব্যাক্টেরিয়া, ফাঞ্জাইসহ বিভিন্ন জীবাণু যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অর্গানিক বা সরাসরি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া খাবার এদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে শরীরকে সহায়তা করে।
শতমূলী, রসুন, পেঁয়াজ এমনই কিছু খাদ্যদ্রব্যের নাম। এছাড়া, ফার্মেন্টেড ফুড যেমন- দই বা এ জাতীয় খাবারও এক্ষেত্রে শরীরকে সহায়তা করে।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার শরীরে থাকা ছোট ছোট জীবাণু, অণুজীবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শরীরকে প্রস্তুত রাখে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব নিউট্রিশ অ্যান্ড ফুড সায়েন্সের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, “ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার শরীরে অ্যান্টিবডির ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। পাশাপাশি, ভিটামিন সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার পারে যে কোনো রোগকে প্রতিরোধের জন্য শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরিতে ভূমিকা রাখতে।”
ব্রিটিশ নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের মতে, এমন কিছু খাবার হলো- ওট, মশুর, মটরশুঁটি, ব্রকোলি, গাজর, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা
রোগ প্রতিরোধে পানির একটি বড় ভূমিকা হলো এটি শরীরে “লিম্ফ” উৎপন্ন হতে সহায়তা করে, যা শ্বেত রক্তকণিকাসহ রোগ প্রতিরোধী অন্যান্য কোষগুলোকে ধারণ করে।
তাই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তবে আমাদের উচিৎ কফিজাতীয় পানীয় পরিহার করে চলা, কারণ এটি কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও, আমাদের উচিৎ প্রচুর পরিমাণে পানিসমৃদ্ধ ফলমূল যেমন- শসা, তরমুজ খাওয়া উচিৎ।
বয়স্কদের জন্য পরামর্শ
বয়স্ক মানুষরা করোনাভাইরাস সংক্রমণে অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষজ্ঞরা তাদেরকে বেশি করে ভিটামিন জাতীয় খাবারের পাশাপাশি সম্পূরক খাবার (সাপলিমেন্ট) গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।
এক্ষেত্রে, রঙিন ফল ও শাক-সবজি খাওয়া যেতে পারে।