অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
নানা জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখেছে ই-পাসপোর্ট (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট)। গত ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট সেবার উদ্বোধন করেন ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ই-পাসপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১৯ এর ডিসেম্বরে উদ্বোধন করার কথা থাকলেও মুজিব শত বার্ষিকীতে বায়ুবীয় উন্নয়নের বিষ্ফরণ ঘটাতে ই-পাসপোর্ট উদ্বোধনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
শুধু তাই নয় ই-পাসপোর্ট নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ই-পাসপোর্ট চালু করায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নয় বরং চতুর্থ ও বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে ডিজিটাল সুবিধা সম্বলিত ই-পাসপোর্ট চালু করেছে বাংলাদেশ।
উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বপ্রথম ই-পাসপোর্ট চালু করে পাকিস্তান। ২০০৪ সালে পাকিস্তান প্রথম ই-পাসপোর্ট চালু হয়। এরপর ই-পাসপোর্ট চালু করে আফগানিস্ততান। এরপর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ই পাসপোর্ট চালু করে আফগানিস্তান। এছাড়া ২০১৬ সালে ই-পাসপোর্ট চলু করে মালদ্বীপ।
ই-পাসপোর্ট নামটি বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন নামে পরিচিত। অনেক দেশে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট বা ডিজিটাল পাসপোর্ট নামেও প্রচলিত রয়েছে। ই-পাসপোর্টের চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফি ও বায়োমেট্রিক তথ্যাদি সিল্ড অবস্থায় সুরক্ষিত থাকে। ডিজিটাল সিগনেচার প্রযুক্তির সাহায্যে ই-গেটের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ডে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পাসপোর্টধারীর প্রকৃত তথ্য ও ফেসিয়াল রিকগনিশন যাচাই করা সম্ভব।
সার্কভুক্ত দেশ পাকিস্তান, ভারত,মালদ্বীপ, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে বেশিরভাগ দেশেই বায়োমেট্রিক (ই-পাসপোর্ট) পাসপোর্ট চালু রয়েছে। কোন দেশ কবে থেকে ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করছে সে বিষয়ে সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হলো-
পাকিস্তান
২০০৪ সালে পাকিস্তান প্রথম বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট চালু করে। কিন্তু এটি ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। কারণ ই-পাসপোর্টের ভেতরে এক ধরনের চিপ থাকে যা ওই পাসপোর্টে ছিল না। ২০১২ সালে আইসিএও-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বহুমাত্রিক বায়োমেট্রিক ই-পাসপোর্ট চালু করে পাকিস্তান।
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে দুই ধরনের ই-পাসপোর্ট (বায়োমেট্রিক) ইস্যু করা হয়। একটি হচ্ছে আফগান কূটনীতিকদের জন্য অপরটি সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য। ২০১৩ সালের মার্চে জনসাধারণের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ই-পাসপোর্ট চালু হয় দেশটিতে।
মালদ্বীপ
মালদ্বীপে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট চালু হয়। বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত বায়োমেট্রিক পাসপোর্টের মধ্যে এটি অন্যতম। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক ও বাস্তবধর্মী বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট হচ্ছে মালদ্বীপের।
বাংলাদেশ
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১৮টি দেশে ই-পাসপোর্ট চালু রয়েছে। বাংলাদেশ ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু করলো। ই-পাসপোর্ট মূলত ৪৮ ও ৬৪ পাতার। এ ধরনের পাসপোর্ট তিন ধরনের হয়- ‘অতি জরুরি’, ‘জরুরি’ ও ‘সাধারণ’। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এর আগে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট চালু হয়।
ভারত
ভারতে এখনও ই-পাসপোর্ট চালু হয়নি। সেখানে এখন তিন ধরনের পাসপোর্ট চালু আছে।
সাধারণ পাসপোর্ট (গাঢ় নীল) : সাধারণ নাগরিকদের জন্য এ ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ, পড়াশুনা বা ব্যবসায়িক কাজে এ ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। এটি টাইপ ‘পি’ পাসপোর্ট যা দ্বারা ব্যক্তিগত বোঝায়।
দাফতরিক পাসপোর্ট (সাদা) : ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এ ধরনের পাসপোর্ট। এটি টাইপ ‘এস’, যার মানে সার্ভিস।
কূটনৈতিক পাসপোর্ট (মেরুন) : ভারতের কূটনীতিক ও শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এ ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। এটি টাইপ ‘ডি’ পাসপোর্ট অর্থাৎ কূটনৈতিক পাসপোর্ট।
নেপাল
নেপালে ২০১০ সালের পর থেকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু রয়েছে। ২০১০ সালের ৩১ মার্চ তারা হাতে লেখা পাসপোর্ট ইস্যু বন্ধ করে দেয়। গত এক বছর ধরে নেপাল ই-পাসপোর্টের বিষয়ে কাজ করছে। এর আগে নেপাল জানিয়েছিল যে, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৯ সালের মে মাসের মধ্যে ই-পাসপোর্ট চালু হবে। তবে এখনও দেশটি ই-পাসপোর্ট চালু করতে পারেনি।
শ্রীলঙ্কা
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট থেকে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট ইস্যু করছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে বেশ কয়েক ধরনের পাসপোর্ট চালু রয়েছে। যেমন- কূটনৈতিক, দাফতরিক, সাধারণ, জরুরি, নন-মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট।
ভুটান
সার্কভুক্ত দেশ ভুটানে এখনও ই-পাসপোর্ট চালু হয়নি। কবে নাগাদ দেশটিতে এ ধরনের পাসপোর্ট চালু হতে পারে সে বিষয়েও তেমন কোনো তথ্য জানা যায়নি।