আহমেদ আফগানী
আজ ১১ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭৯ সালে এই দিনে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সফলতার মুখ দেখে। সেই থেকে ৪১ বছর ধরে পাশ্চাত্য সভ্যতার হুমকি হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইরানিরা। এই বিপ্লবকে ইসলামী বিপ্লব বলতে রাজি হন না আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীরা। তারা এটাকে ইরানি বিপ্লব বা শিয়া বিপ্লব বলেই অভিহিত করেন।
বিশ্ব সভ্যতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন এক নাম ইরানি সভ্যতা বা পারসিক সভ্যতা। একসময় মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু ছিল দেশটি। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ও শাহী ঐতিহ্যবাহী রাজবংশের একজন ধারক ছিল ইরানের সর্বশেষ সম্রাট মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভী। প্রায় আড়াই হাজার বছরের এই রাজবংশের বিলুপ্তি ঘটে গেলো ১৯৭৯ সালে। ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইরানি বিপ্লব ছিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমাজের বিদ্রোহ। ইসলামকে জিন্দা করা, পাশ্চাত্য সভ্যতাকে প্রতিরোধ করা, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক মুক্তি ছিলো যার মূল চাওয়া।
বিংশ শতকের প্রথম দিকে, প্রায় সমগ্র মুসলিম বিশ্বই ইউরোপিয়ান শক্তির উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে উসমানীয় খিলাফতের পতন ঘটে যা ছিল ক্লাসিক ইসলামি সভ্যতার সর্বশেষ প্রতিনিধি। সুতরাং বিংশ শতকের প্রথমার্ধে মুসলিম বিশ্ব তাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুদ্ধ শুরু করে।
ধর্মনিরপেক্ষ-জাতীয়তাবাদী, পশ্চিমা, শিক্ষিত অভিজাত শ্রেণি, যারা বিশ্ব বিপ্লবের প্রথম এই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তাদের নিজ নিজ দেশের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব অর্জনের তাগিদ থেকেই। এই নেতারা সমাজ ও রাজনীতিতে খ্রিস্টানদের দৃঢ়তা কমাতে ইউরোপের প্রগতিশীলতাকে অনুকরণ করতে চেয়েছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে, মুসলিম সমাজে যদি সংস্কার আনা সম্ভব হয় এবং সমাজের ওপর থেকে ধর্মের প্রভাব এমনকি ধর্ম থেকে রাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয় তাহলে মুসলিম সমাজ অগ্রগতি লাভ করতে সক্ষম হবে।
সংস্কারবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো তুরস্কের নতুন ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র গঠন। ১৯২৪ সালে উসমানীয় খিলাফতের পতন ঘটেছিল যা সমগ্র মুসলিম বিশ্বে একটি ধাক্কা সৃষ্টি করেছিল। এই ধাক্কার ফলে আলেম-উলামাদের নেতৃত্বে বিকল্প তৃণমূল ইসলামী তাজদিদ আন্দোলনের উত্থান ঘটায়, যারা মনে করতো ইসলামের অস্তিত্ব বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। এই আন্দোলনগুলির সূচনা অরাজনৈতিক ছিল এবং মুসলমান জনগণের কাছে আধ্যাত্মিক সান্ত্বনা ও সামাজিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল বলেই জনসমর্থন অর্জন করেছিল। সময়ের স্রোতে তারা সমাজে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছিল এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা সক্রিয় হয়ে উঠলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বে ক্ষমতার মেরুকরণে একটা বিশাল পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, মুসলিম বিশ্বগুলো ইউরোপিয়ান উপনিবেশের হাত থেকে মুক্ত হতে শুরু করে, শুধুমাত্র ইরান ও তুরস্ক স্নায়ুযুদ্ধে প্রভাবিত হয়। ইরান ও তুরস্ক এমন দুটি দেশ ছিল যেখানে সোভিয়েত সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা তীব্রতর হয়েছিল। প্রতিক্রিয়ায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক পশ্চিম ব্লকের সদস্য হওয়ার জন্য উভয় দেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহায়তা প্রদান করেছিল। তুরস্ক ও ইরান তাদের এই সহায়তা গ্রহণ করে এবং যথাক্রমে ১৯৫০ সালে এবং ১৯৫১ সালে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে ওঠে।
১৯৫১ সালে ইরানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম সরকার নির্বাচিত হয় মোহাম্মাদ মোসাদ্দেকের ন্যাশনাল ফ্রন্ট। মোসাদ্দেক ছিলেন একজন ধর্মনিরপেক্ষ নেতা। তিনি একইসঙ্গে পশ্চিমা, ইসলামি উলামা ও ধর্মনিরপেক্ষ সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জন করতে পেরেছিলেন। সম্রাট রেজা শাহ পাহলভির রাজত্বকালীন তাদের তেল ক্ষেত্রের শোষণের কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মধ্যে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠা ক্রোধ থেকেও তিনি বেনিফিট পেয়েছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি আক্রমণের হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য ব্রিটেন ও রাশিয়া পার্সিয়ান তেল ব্যবহার করেছিল যা ব্রিটিশ অর্থনীতির উন্নতিতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছিল। তবে, ইরানিরা কেবল লাভের ২০ শতাংশই পেয়েছিল। ঠিক এমন সময়ে এই ইস্যুকে সামনে এনে ব্রিটিশ মালিকানাধীন অ্যাংলো-ইরানিয়ান তেল কোম্পানিকে জাতীয়করণ করার মাধ্যমে মোসাদ্দেক একটি দৃঢ় ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। যদিও এটা তার জন্য হিতের বিপরীতই হলো, ব্রিটিশ ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে হয়েছে যা ইরানি অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করতে শুরু করে।
১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা ও মার্কিন সিআইএর সংগঠিত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করা হয়েছে। রেজা শাহ পাহলভীর নিকট ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া হলো এবং অ্যাংলো-ইরানিয়ান তেল কোম্পানিটি ৫০-৫০ মুনাফায় হলো বিপি বা ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম।
এই হস্তক্ষেপটিই শুধুমাত্র ইরানিদেরই আঘাত করেনি বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এটি এই মেসেজ মুসলিম বিশ্বকে দিয়েছিলো যে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে পশ্চিমা স্বার্থের সাথে মানানসই না হলে এটি বাতিল করা হবে। এই চিত্রটি আজ পর্যন্ত চালু রয়েছে। মিশরেও কিছুদিন আগে ইখওয়ানকে একইভাবে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৭৭, এই সময়ে ইরানের বিকাশের দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যাবে কী চরমভাবে শাহ মার্কিনদের ওপর নির্ভর করেছিল। মার্কিনদের প্রচেষ্টানুযায়ী এই সময়কালে ইরানি সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ, ইরানি সমাজব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে নির্মাণ করেন শাহ, যাকে তিনি শ্বেত বিপ্লব বলে আখ্যায়িত করেন।
যদিও তার অর্থনৈতিক কর্মসূচি ইরানে সমৃদ্ধি ও শিল্পায়ন এনেছিল এবং শিক্ষাগত উদ্যোগের ফলে সাক্ষরতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু এসবই ছিল বেশ ব্যয়বহুল। সম্পদ সমানভাবে বিভক্ত হয়নি, কৃষকদের মধ্যে নগরায়নের প্রভাব লক্ষণীয় ছিল। ভিন্নমত পোষণকারীদের রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক দমনপীড়ন করা হয়েছিল। আলেম-উলামারা ইরানি জাতির ওপর পশ্চিমা জীবনধারা চাপানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করতেন। তারা মনে করতেন যে, ইসলামকে সমাজ থেকে সম্পূর্ণভাবে সরানো হচ্ছে।
শাহের রাজনৈতিক সহিংসতামূলক দমন ইরানি সাধারণ জনগণকে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে বাধ্য করে। ১৯৬০ এর দশকে মার্কসবাদী ফাদাইয়ান-ই-খালক ও ইসলামী বামপন্থী মুজাহিদীন-ই-খালক নামক দুইটি জঙ্গি গোষ্ঠী বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ চালাতে শুরু করে। আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং আলী শরিয়তীর নেতৃত্বে বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী থেকে আরো কার্যকর ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিরোধিতা আসতে শুরু করে।
আলী শরীয়াতি, একজন ফরাসি থেকে শিক্ষার্জন করা বুদ্ধিজীবী যিনি আলজেরীয় এবং কিউবান বিপ্লব দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। তিনি সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য সক্রিয় সংগ্রামের আহ্বান জানান এবং সমাজের পশ্চিমা মডেলের পরিবর্তে ইসলামী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি শিয়া পণ্ডিতদের সমালোচনা করেছিলেন তাদের শতাব্দী-পুরাতন রাজনৈতিক শান্তির মতবাদে আটকে থাকার জন্যে যা বিপ্লবী প্রগতিতে একটি উল্লেখযোগ্য বাধা হিসাবে দেখা যায়।
আয়াতুল্লাহ খোমিনির মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাটি ভেঙে যায়, যিনি ১৯৬৩ সালের বিক্ষোভে স্পষ্ট ভূমিকা পালন করার জন্য অগ্রসর হন এবং ফলস্বরূপ নির্বাসিত হন। শাহকে খোলাখুলিভাবে সমালোচনা করা তাঁর রেকর্ডকৃত উপদেশ ইরানে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল। ঔপনিবেশিক পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের অবসান ঘটিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের নতুন ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইসলামকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলে খোমেনি যুক্তি দেন। কুরআনের ওপর ভিত্তি করে ইসলামিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, উদাহরণস্বরূপ নবী মুহাম্মাদ সা.-এর মদিনা রাষ্ট্রকে তিনি সামনে নিয়ে আসেন।
তার বিখ্যাত বই ‘উইলিয়াত-ই ফকিহ : হুকুমাত-ই ইসলামি’তে খোমেনী জোর দিয়ে বলেছেন যে সত্য ইমামের (শিয়া মাজহাবে মুহাম্মদ সা.-এর বংশধর থেকে একমাত্র বৈধ নেতা) অনুপস্থিতিতে আলেমরা ইসলামী ধর্মগ্রন্থগুলির জ্ঞান অর্জনের দ্বারা তাদের শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য দায়িত্বরত। এই ধারণাটি ইরানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো কারণ সুফীবাদের কারণে ইরানি আলেমরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকতেন। তিনি এর মাধ্যমে আলেমদের রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার শুধু বৈধতাই দেননি বরং তা অত্যাবশ্যকীয় করে দিয়েছেন।
খোমেনির জ্বালাময়ী বক্তব্য ও লেখনী দ্বারা ইরানিরা ব্যাপকভাবে উদ্দিপ্ত হন। শাহের বিরুদ্ধে তার অনুসারীদের বিক্ষোভগুলি ইরানের সব প্রধান প্রধান শহরে ছড়িয়ে পরেছিল। ১৯৭৯ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি যখন নির্বাসিত খোমেনি বিজয়ী হয়ে ইরানে ফিরে আসে তখনই বিপ্লব পূর্ণতা পায়। এর দশদিন পর যখন আন্দোলন তীব্রতা চরমে পৌঁছায় তখন রেজা শাহ পাহলভি পদত্যাগ করেন এবং পালিয়ে যান।
ইরানি বিপ্লব এমন একটি ঘটনা যা কেবল ইরানকেই সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরিত করেনি, বরং বিশ্বের জন্যও এর প্রভাব ছিলো ব্যাপক। এটি স্নায়ু যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির রূপান্তর ঘটিয়েছিল। আমেরিকা কমিউনিস্ট হুমকির বিরুদ্ধে কেবলমাত্র একটি কৌশলগত সহযোগীকেই হারায়নি বরং তারা নতুন এক শত্রুও অর্জন করেছে।
বিপ্লবের শুরুর প্রহরেই আমেরিকা এর বিনাশে সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখে। ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের উত্থান ঘটে, যা নতুন ইরানি শাসনকে আরো সুসংহত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাদ্দাম হোসেনকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করেছিল, ইরাককে বিশ্বে শক্তিশালী ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করেছিল।
এছাড়াও ইরানি বিপ্লব মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতেও নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন ঘটায়। এটি ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় স্নায়ূযুদ্ধকে উস্কে দেয়। এই বিপ্লব সৌদি আরবের রাজতন্ত্র এবং মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের দাবির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে ধর্মীয় ও মতাদর্শিক যুদ্ধ আজও বিদ্যমান। রাজনৈতিক ইসলামের পুনরুত্থানের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে ইরানি বিপ্লবের প্রভাব দেখা যায়। ইরানের সফলতা দেখায় যে, ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা শুধু একটি স্বপ্ন নয়। পশ্চিমা ও তাদের সহযোগী সম্রাট / স্বৈরশাসকদের ওপর জয় লাভ করা যে সম্ভব তাও ইরান প্রমাণ করেছে।
১৯৮০ ও ৯০র দশকে, পৃথিবীর সব ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলি (শিয়া ও সুন্নি) সব মুসলিম দেশেই উৎসাহিত হয়েছিলো ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠায়। তাদের আহ্বানের মূল কথা ছিলো, ধর্মনিরপেক্ষতার পশ্চিমা মডেল অগ্রগতি এবং জনগণের স্বাধীনতা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে যেখানে ইসলামি মডেল একমাত্র বিকল্প ছিল। এটা যে বাস্তবায়ন হতে পারে তার প্রমাণ ছিলো ইরানি বিপ্লব।
ইরানি বিপ্লব এখনও বহাল তবিয়তে বিদ্যমান রয়েছে। ৮ বছর ধরে ইরান-ইরাক যুদ্ধের পাশাপাশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ এটি চার দশক ধরে টিকে রয়েছে। বরং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শক্তি দিনে দিনে দৃঢ় হচ্ছে। তবে এর বিপরীত দিকও আছে। এই বিপ্লব ইরানিদের একটি স্বাধীনচেতা জাতি হিসেবে সম্মান এনে দিয়েছে তবে ঠিক যে কারণে এই বিপ্লব জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে তা এখনো অর্জিত হয়নি। খোমেনি ও তার সমর্থকরা ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যকার পার্থক্য দূর করা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি প্রদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। বর্তমানে ইরানের অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে, তেলের রাজস্ব পতন রোধ করা থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে হিমশিম খাচ্ছে। উচ্চ বেকারত্বের হার এবং মুদ্রাস্ফীতির মানুষের মনে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক ভাগ্য পরিবর্তনে তাদের আশা অতি ক্ষীণ। বেশিরভাগ ইরানি নাগরিকরাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসমাপ্ত নিষেধাজ্ঞাকেই বিপ্লবের ব্যর্থতা হিসেবে দোষারোপ করে। যদিও ইরান ইউরোপীয় শক্তি, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করছে, তবুও তারা বিশ্বাস করে যে, পশ্চিমারা তাদের সফল হতে দিতে চায়না।
ইরানের বিপ্লবের যে লক্ষ্য ছিল তা বাস্তবে এখন কোন অবস্থানে রয়েছে তা নিরুপণ করা বেশ কঠিন। একবিংশ শতকে এসেও ইরান মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। বিশ্ব ভূ-রাজনীতির জঘন্য রোষানলের ফলে দেশটিতে এখনও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বে ইউরোপের পরে মার্কিন আগ্রাসনের সঙ্গে শত্রুতা করে কোন দেশই এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি, ইরান সেখানে এখনও এমন এক মুসলিম রাষ্ট্র যারা বিগত ৪০ বছর ধরে মার্কিন আগ্রাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে টিকে আছে।