অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কথিত দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি নিয়ে আদালতে বিএনপি ও আ.লীগপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। বিএনপির আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেছেন। তারা আদালতে কোনো প্রকার ভাঙচুর করেনি। কারো গায়ে হাতও তুলেনি। এতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতারা।
গত দুইদিন ধরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আ.লীগের অন্যান্য নেতারা কড়া ভাষায় হুঙ্কার ছাড়ছেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের। বিএনিপর আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আনিসুল হক। আর নাসিম বলেছেন-আমরা কখনো আদালতকে জিম্মি করে দাবি আদায় করিনি।
কিন্তু অতীতের দিকে তাকালে কি দেখা যায়? বিচারপতিদের বিরুদ্ধে এদেশে কারা লাঠি মিছিল করেছিল? রায় বিপক্ষে যাওয়ায় কারা বিচারপতিদের এজলাস ভাঙচুর করেছিল? প্রধান বিচারপতির দরজায় কারা লাথি দিয়েছিল? আওয়ামী লীগ নেতারা কি আজ সেই সব ভুলে গেছে? তারা ভুলে গেলেও দেশের মানুষ কিন্তু এসব ভুলেনি।
দেখা গেছে, ২০০০ সালে শেখ মুজিব হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দাবিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিম, আওয়ামী লীগ নেত্রী সাজেদা চৌধুরী ও মতিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতারা লাঠি মিছিল করেছিল। তাদের সেই লাঠি মিছিলের ছবি আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই মিছিলে নাসিম বলেছিলেন- আমরা ২১ বছর সহ্য করেছি, বুকে পাথর বেঁধে রেখেছি। আমরা এতোদিন রাজপথে নামিনি। ২১ বছর পর বিচার হয়েছে, রায় হয়েছে। সেই বিচারকে প্রহসনে পরিণত করা হচ্ছে। ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রায় কার্যকর হবে এবং করতে হবে। আওয়ামী লীগকে যারা চেনেন না তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আপিলের শুনানি শুরু না হলে এরপর লাঠি মিছিল হবে না। লাঠি কোথায় মারতে হয় আওয়ামী লীগ দেখিয়ে দেবে। রায় আমরা কার্যকর করবোই করব।
অথচ সেই নাসিম আজ বলছেন-আমরা আদালতের ওপর কখনো চাপ সৃষ্টি করিনি। পৃথিবীতে এর চেয়ে হাস্যকর আর কি হতে পারে বলে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারন মানুষ?
এরপর, ২০০৬ সালে চিারপতিদের কক্ষে নজিরবিহীন ভাঙচুর করেছিল আওয়ামী আইনজীবীরা। সেই ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিয়েছিল পরবর্তী সময়ে বিচারপতি হওয়া শামসুদ্দিন চৌ্ধুরী মানিক। তারা শুধু ভাঙচুর করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথিও দিয়েছিল। সেই ছবি আজও গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ যদি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হয় তাহলে, বিচারপতির কক্ষ ভাঙচুর ও লাঠি মিছিল কি ক্ষমার যোগ্য অপরাধ ছিল? আনিসুল হক আর ওবায়দুর কাদের এখন কি বলবেন? ওবায়দুল কাদেররা এদেশে সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের জন্ম দিয়ে এখন বিএনপিকে বলছে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দল। বিএনিপতো শুধু তাদেরকে অনুসরণ করছে।
এদিকে বিএনপি নয়, সরকারই আদালত অবমাননা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেছেন, আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদন সুপ্রিমকোর্টে নির্ধারিত দিনে উপস্থাপন না করে সরকার এবং অ্যাটর্নি জেনারেল আদালত অবমাননা করেছেন।
হট্টগোল করে বিএনপির আইনজীবীরা আদালত অবমাননা করেছেন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। এই অভিযোগ খণ্ডন করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উল্টো সরকারই আদালত অবমাননা করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, চিকিৎসকরা বলছেন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তার স্বাস্থ্যের যে অবস্থা তাতে তার প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় দেশনেত্রীর কিছু হলে এর দায় সরকার ও সরকারপ্রধানকে নিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দিয়েছে। তাকে এখন জোর করে আটকে রেখেছে। দেশবাসী এটি কিছুতেই মেনে নেবে না। ১২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন না হলে বৃহত্তর গণআন্দোলন তৈরি করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।